1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশ নিয়ে জরিপ

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনাল বা ডিআই-এর জরিপে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ৷

https://p.dw.com/p/1B1uD
ছবি: AFP/Getty Images

তাদের জরিপ অনুযায়ী, এখন নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ পাবে ৪১.৫ শতাংশ এবং বিএনপি পাবে ৩৭.৬ শতাংশ ভোট৷

ডিআই-এর প্রশ্নটি এমন – সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে যদি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হতো, তাহলে কাকে ভোট দিতেন? উত্তরে ৪২.৭ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগ এবং ৩৫.১ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেওয়ার কথা জানান৷ ঠিক এ মুহূর্তে ভোট হলে কোন দলকে ভোট দেবেন? উত্তরে ৪১.৫ শতাংশ আওয়ামী লীগ এবং ৩৭.৬ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে দেয়ার কথা বলেছেন৷

দেশ কি ঠিক, না ভুল পথে চলছে? এ প্রশ্নের উত্তরে ৬৯ শতাংশ বলেছেন ভুল পথে চলছে৷ অন্যদিকে ২৯ শতাংশ ঠিক পথে চলছে বলে মত দেন৷ এ জন্য রাজনৈতিক সংঘাত, ঘন ঘন হরতাল ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতিকে কারণ হিসেবে দেখছেন যথাক্রমে ৮৯, ৬৬ এবং ৫৪ শতাংশ মানুষ৷ রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ছাড় দিয়ে সংলাপে বসার পক্ষেও মত দিয়েছেন তাঁরা৷

১১ থেকে ১৫ জানুয়ারি দেশের সাতটি বিভাগের ৩৯টি জেলায় ১৮ ও তার চেয়ে বেশি বয়সের দেড় হাজার ভোটার ডিআই-এর এই জরিপে অংশ নেন৷ বহুস্তর ভিত্তিতে এবং দৈবচয়ন পদ্ধতিতে এ জরিপ চালানো হয়৷

অথচ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে একটি প্রভাবশালী বাংলা দৈনিকের জরিপে কিন্তু সবচেয়ে জনিপ্রিয় দল হিসেবে উঠে এসেছিল বিএনপির নাম৷ জরিপের ফলাফলে তখন দেখা গিয়েছিল, ৫০ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে এবং ৩৭ শতাংশ আাওয়ামী লীগকে ভোট দেবে৷ জরিপটি সে সময় ৫,০০০ ভোটারের মধ্যে চালানো হয়েছিল৷

একই বিষয় নিয়ে দুটি জরিপে দুই ধরণের ফল আসে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ বা জানিপপ-এর প্রধান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসনের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, জরিপের ফলাফল নির্ভর করে জরিপের পদ্ধতি এবং জরিপে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা, বয়স, ভৌগলিক এলাকাসহ আরো নানা বিষয়ের ওপর৷ তাই কোনো জরিপের ফলাফলকেই জনমতের ‘সঠিক' প্রতিফলন হিসেবে ধরে নেয়ার কারণ নেই৷ তবে জরিপকারী সংস্থার গ্রহণযোগ্যতা, স্বচ্ছতা, এবং উঁচু মান জরিপকে জনমতের কাছাকাছি নিয়ে যায়৷

ড. কলিমুল্লাহ জানান, ডিআই ইতিমধ্যেই তাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পেরেছে৷তিনি বলেন, ডিআই-এর জরিপে ভোটের যে ফল পাওয়া গেছে বাংলাদেশের ভোট ব্যাংকের হিসাবও এরকম৷

ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মনে করেন, ডিআই-এর জরিপে মানুষ যে সংলাপের কথা বলেছে তার প্রয়োজন আছে৷ কিন্তু সেই সংলাপ কবে হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না৷ ২০১৬ সালের আগে বাংলাদেশে নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি৷ তাঁর মতে, এই নির্বাচন হলে তা বিএনপির চাপে হবে না, আওয়ামী লীগের কৌশলের কারণেই হবে৷ এছাড়া দেশ যে সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তার দায় সবার৷ তাই এককভাবে কাউকেই দায়ী করা যায় না৷

ওদিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, জরিপের ফলাফল সব সময় ঠিক হয় না৷ কখনো জরিপে পদ্ধতিগত ভুল থেকে যায়৷ আবার কখনো কারা জরিপে অংশ নিচ্ছেন এবং কি অবস্থার মধ্যে তাঁরা আছেন, তাও গুরুত্বপূর্ণ৷ তিনি জানান, ১৯৩৬ এবং ১৯৪৮ সালে মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে জনমত জরিপ ভুল প্রমাণিত হয়েছে৷ সেখানে ছিল পদ্ধতিগত ত্রুটি৷ ১৯৯০ সালে নিকারাগুয়ায় যেমন জনমত জরিপে বলা হয়েছিল, নির্বাচনে স্যান্ডানিস্টা জয়ী হবে৷ কিন্তু হয়নি৷ কারণ সেখানে জরিপে পদ্ধতিগত ভুল না থাকলেও, জরিপে যাঁরা অংশ নিয়েছেন তাঁরা চাপের কারণে সঠিক তথ্য দেননি৷ তাই জরিপটি কোন সময়ে এবং কোন পরিবশে হচ্ছে, তা অত্যন্ত জরুরি৷ যিনি জরিপে অংশ নিচ্ছেন, তিনি কার সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁর কথার ফলাফল কি হবে – তা নিশ্চিত না হলে সঠিক কথা নাও বলতে পারেন৷ কারণ তিনি তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্ব দেবেন৷ তাই ড. পিয়াস করিমের কথায়, জরিপকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া ঠিক নয়, না নির্বাচনের আগের জরিপ, না এখনকার জরিপ৷

Symbolbild Abhaken
‘‘কোনো জরিপের ফলাফলকেই জনমতের ‘সঠিক' প্রতিফলন হিসেবে ধরে নেয়ার কারণ নেই’’ছবি: Fotolia - Marcel Mooij

তবে তিনি এও মনে করেন, জরিপে যে সংলাপের কথা উঠে এসেছে তার জন্য দেশের প্রধান দুটি দলকে আন্তরিক হতে হবে৷ দুই দলকেই সমঝোতায় আসতে হবে দেশকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য৷ আর সরকারকে আরেকটি নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে সব দলকে সঙ্গে নিয়ে৷