1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জুল ভার্ন ফিরে এলো পৃথিবীতে

দেবারতি গুহ৫ অক্টোবর ২০০৮

বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে বহুদূর এগিয়ে গেছে বিশ্ব৷ আজকাল মানুষ মর্ত্য ছেড়ে পাড়ি দিচ্ছে মহাকাশে৷ এমনকি চাঁদের দেশেও বসত গাড়তে চলেছে প্রস্তুতি৷

https://p.dw.com/p/FTjZ
ছবি: AP

ঠিক এই সময় জুল ভার্ন নামের একটি ATV, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ISS থেকে আবার ফিরে এসেছে পৃথিবীতে৷

সৌরজগতের সীমানা পেরিয়ে মহাকাশের গভীরে যান পাঠানোয় ব্যাপক সাফল্য নিয়ে এসে, মানুষের জ্ঞানের পরিধিকে একলাফে কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা৷ এবছরের ২৯-শে জুলাই নাসা তার ৫০ বছর পূরণ করেছে৷ আর এই পঞ্চাশ বছরে তাদের সবচেয়ে বড় উপহার এনে দিয়েছে মঙ্গলগ্রহ৷ মার্কিন যান ফিনিক্স মঙ্গলগ্রহের উত্তর মেরুতে প্রথমবারের মতো খুঁজে পেয়েছে বরফ৷ কিন্তু শুধু নাসাই নয়৷ মহাকাশের গভীরে ইতিমধ্যেই তাদের অস্তিত্ব বিস্তার করেছে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ESA-ও৷

আমেরিকা-রাশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপ, চীন, জাপান, ভারত ইত্যাদি বেশ কিছু দেশ মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়ে চলেছে৷ এমনকী বাণিজ্যিক স্তরেও মহাকাশ-যাত্রার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই৷ কিন্তু, মহাকাশে মানুষ পাঠাতে হলে এখনো রাশিয়ার সোয়ুজ ও মার্কিন মহাকাশফেরীর উপর নির্ভর করতে হচ্ছে৷ আর সে অবস্থা বদলাতেই, এবার আসরে নেমেছে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ESA৷

ESA-র লক্ষ্য ২০১৭ সাল থেকে নিজস্ব উদ্যোগে মহাকাশে মানুষ পাঠানো৷ এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জার্মানির মহাকাশ সংস্থা DLR এবং এয়ারবাস বিমানের নির্মাতা EADS, ESA-র সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চায়৷ বর্তমানে মহাকাশে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম পাঠাতে Automated Transfer Vehicle বা ATV নামের যে যান ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেই যানের উন্নতিসাধানে বদ্ধপরিকর তারা৷

কয়েক মাস আগে, জুল ভার্ন নামের এমনই একটি ATV-কে সফলভাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ISS-এ পাঠায় ESA৷ লক্ষ্য ছিল - ঐ ফ্রাইটার বা মালবাহী নভোযানকে আবারো পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা৷ প্রযুক্তিগত দিক থেকে ATV-কে এর আগে মহাকাশে পাঠানো গেলেও, পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা কিন্তু সম্ভব ছিল না৷ কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পর, বাতাসের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে যে মারাত্মক উত্তাপের সৃষ্টি হতো, তা প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ স্তরটি ATV-তে ছিল না৷ আর এ-ঘাটতি দূর করার জন্যই ESA তৈরী করেছিল নতুন প্রজন্মের একটি ATV৷ ATV Evolution৷ যার নাম রাখা হয়েছিল - জুল ভার্ন৷

কিরকম এই জুল ভার্ন ?

মার্চ মাসের ৯ তারিখ ১০ মিটার লম্বা এবং ১৩.৫ টন ওজনের ঐ যানটিকে মহাকাশে পাঠায় ESA৷ জুল ভার্ন মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছয় ৩-রা এপ্রিল৷ তার সঙ্গে ছিল প্রায় ৭.৫ টন পণ্য, পানীয় এবং যানে উপস্থিত তিনজন মহাকাশচারীর প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রি এবং সাজ-সরঞ্জাম৷ আনন্দের খবর হলো, দীর্ঘ ছয় মাস ISS-এ কাটানোর পর, ESA-র তৈরী ইউরোপীয় মহাকাশযান জুল ভার্নকে অত্যন্ত নিরাপদে আবারো ভূমন্ডলে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে৷

৬-ই সেপ্টেম্বর ISS থেকে নানা ধরনের আবর্জনা নিয়ে পৃথিবীর পথে রওনা দেয় জুল ভার্ন৷ গত ২৯-শে সেপ্টেম্বর ভেদ করে যায় বায়ুমন্ডলের স্তর৷ নিউজিল্যান্ডের উপর থেকে, চিলি দ্বীপপুঞ্জ হয়ে আছড়ে পড়ে প্রশান্ত মহাসাগরে৷ প্রায় ৭৫ মাইল উচ্চতায় বায়ুমন্ডল ভেদ করে মহাসাগরে পৌঁছোতে জুল ভার্নের সময় লাগে মাত্র ১২ মিনিট৷ সে যাত্রার ছবি দেখে উত্সাহ, উত্তেজনায় ফেটে পড়ে ফ্রান্সের টুলুসে অবস্থিত ESA-র বিজ্ঞানীরা৷ তারপরেই, সংগঠনটির মানবিক শাখার পরিচালক স্বয়ং সিমোনেটা ডি পিপো জানালেন তাঁর বিদায় সম্ভাষণ - বাই, বাই, জুল ভার্ন৷

আর এভাবেই চিরদিনের মতো বিদায় নিল ESA-র প্রথম ATV জুল ভার্ন৷ তবে এখানেই শেষ নয়৷ ESA তার পরবর্তী ATV মহাকাশে পাঠাতে চলেছে ২০১০ সালে৷ পাঠাবে পর পর চার-চারটি মালবাহী যান৷ যার জন্য খরচ হবে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরো৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে অবশ্য ইউরোপের ATV-কে মহাকাশচারী বহনের উপযুক্ত করে তোলা যেতে পারে৷ তাতে এমন একটি ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে হবে, যাতে ATV-কে বহনকারী রকেট প্রয়োজনে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে৷ অর্থাত্, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে মহাকাশচারীদের প্রাণ বাঁচাতে ATV ক্যাপসুল যাতে ঠিক সময়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে, এমন এক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে তাদের৷

জুল ভার্ন - নামটি এলো কোথা থেকে ?

জুল গাব্রিয়াল ভার্ন ছিলেন একজন ফরাসি লেখক৷ জন্ম ৮-ই ফেব্রুয়ারী ১৮২৮৷ মত্যু ২৪-শে মার্চ ১৯০৫৷ অবশ্য কেউ কেউ বলেন, উনিশ শতকে জন্ম নেওয়া এই লেখক তাঁর সময়ের অনেক আগেই জন্ম নিয়েছিলেন৷ কারণ উড়োজাহাজ, রকেট অথবা সাবমেরিনের বাস্তব ও ব্যবহারিক প্রয়োগের অনেক আগেই তিনি লিখেছিলেন মহাকাশে ও সমুদ্রের তলায় ভ্রমনের অসামান্য সব কল্পকাহিনী৷ শুধু তাই নয়, তাঁর লেখায় অচিরেই এসে পড়েছিল উড়ন্ত যান, আকাশ ছোঁয়া দালান, এমনকি চাঁদে অভিযানের কথাও৷

১৮৬৩ সালের ৩১-শে জানুয়ারি ছোট্ট একখানি উপন্যাস ফ্রান্সের বইয়ের দোকানগুলিতে ছেয়ে গিয়েছিল৷ সেটা ছিল ড. ফার্গুসন সহ তিনজন পর্যটকের অ্যাডভেঞ্চারের গল্প৷ ফাইভ উইকস ইন এ বেলুন৷ বেলুনে চড়ে অন্ধকার আফ্রিকার গহীনে ঢুকে পড়ার সাহস দেখিয়েছিলেন যে তিনিই৷ কখনও তারা বল্লম-বাহি আদিবাসি ও হিংস্র বেবুনের মুখোমুখি হচ্ছেন, আবার এক সময় জলের অভাবে তিলে তিলে এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে৷

বইটি পড়ে সে সময়ের পাঠকরা একরকম হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন৷ এটা কি গল্প নাকি বাস্তবে ঘটে যাওয়া কোন ভ্রমণকাহিনীর বিবরণ ? অক্ষাংশ- দ্রাঘিমাংশের নোটে ভরা এতোটাই পুঙ্খানুপুঙ্খ ছিল তাঁর বর্ণনা৷ জুল ভার্নের বহুল পঠিত বইগুলো হচ্ছে - অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইট্টি ডেইস, জার্নি টু দ্য সেন্টার অফ দ্য আর্থ, টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি, ইন দি আইস ফিনিক্স, দি বেগমস ফরচুন, দি লাইট হাউস অ্যাট দি এন্ড অফ দি ওয়ার্ল্ড আরো কতো কি !