1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জিহাদকে মৃত উদ্ধার করল স্থানীয় লোকজন: ফায়ার সার্ভিস ব্যর্থ

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

ঢাকার শাহজাহানপুরে পাইপে আটকে পড়া জিহাদকে ২৩ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে৷ তবে সে আর বেঁচে নেই৷ ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান স্থগিত করে পাইপে শিশুটি নেই ঘোষণার মাত্র কয়েক মিনিট পর স্থানীয় লোকজন শিশুটিকে উদ্ধার করে৷

https://p.dw.com/p/1EAZy
Junge nach 23 Stunden aus Röhre gerettet
ছবি: DW/H. Ur Rashid Swapan

২৩ ঘণ্টা অভিযানের পর শনিবার বেলা আড়াইটায় ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেন৷ এর কয়েক ঘণ্টা আগে সকাল ১০টায় ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি মো. হালিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ভেতরে কোনো ভিকটিম নেই৷''

কিন্তু বিকেল তিনটার কিছু আগে স্থানীয় তিন বাসিন্দা পাইপের ভেতর থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন৷ তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন রিয়াজ মোর্শেদ জিহাদকে মৃত ঘোষণা করেন৷

শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে শিশু জিহাদ (৪) শাহজাহানপুরে ওয়াসার পাইপ সংলগ্ন মাঠে খেলতে গিয়ে পরিত্যক্ত ওই পাইপের ভেতর পড়ে যায়৷

খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযানে নামে ফায়ার সার্ভিস সহ অন্যরা৷ কিন্তু ফায়ার সার্ভিস শিশুটিকে খুঁজে পায়নি৷ তারা জানায়, রশিতে বেঁধে অনেক দূর পর্যন্ত ক্যামেরা নিয়ে ১৪ ইঞ্চি ব্যাসের ওই পাইপের নিচের যে ছবি তোলা হয়েছে, তাতে কোনো মানবদেহের অস্তিত্ব ধরা পড়েনি; তবে ছবি এসেছে কাপড়, স্যান্ডেলের মতো আবর্জনার৷ এরপর শুক্রবার গভীর রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘উদ্ধারকর্মী দলের সঙ্গে কথা বলে আমার ধারণা হয়েছে যে পাইপের ভেতরে শিশুটি নেই৷'' তারপর বিষয়টি নিশ্চিত হতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা৷

Junge nach 23 Stunden aus Röhre gerettet
ক্যামেরা দিয়ে তোলা পাইপের ভেতরের ছবিছবি: DW/H. Ur Rashid Swapan

শনিবার বেলা আড়াইটায় ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেন৷ তিনি দাবি করেন, ‘‘পাইপের ভিতরে কোনো শিশু বা মানবদেহের অস্তিত্ব নেই৷'' আর এর কয়েক ঘণ্টা আগে সকাল ১০টায় ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি মো. হালিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ভেতরে কোনো ভিকটিম নেই, আমরা সর্বাধুনিক ক্যামেরা ব্যবহার করে দেখেছি৷ ক্যামেরায় টিকিটিকি এবং পোকামাকড়ের ছবিও এসেছে৷ কোনো শিশু থাকলে তার ছবিও আসত৷''

যেভাবে জিহাদ উদ্ধার হয়

ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান স্থগিত ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই মাঠে নামেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা৷ তারা কাজে নামার মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই আসে ফল৷ বিকেল তিনটার দিকে নিজস্ব ‘ক্যাচার' দিয়ে শিশু জিহাদকে পাইপের ভেতর থেকে বের করে আনেন রহমত, আব্দুল্লাহ আল মুন ও সুজন দাস নামের তিন স্বেচ্ছাসেবী৷ জিহাদকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন তারা৷ শিশুটিকে উদ্ধারে নিজস্ব বিশেষ ধরনের জাল বা ক্যাচার ব্যবহার করেন তারা৷ সঙ্গে সঙ্গেই জিহাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ কিন্তু ততক্ষণে না ফেরার দেশে চলে গেছে শিশু জিহাদ৷ বিকেল তিনটা ৩৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷

শিশুটিকে উদ্ধারকারীরা জানান, তাদের তৈরিকৃত একটি ক্যাচারের মাধ্যমে জিহাদকে টেনে তোলা হয়৷ তাকে প্রায় ২৩৫ ফুট নিচ থেকে ওই যন্ত্রটি দিয়ে টেনে তোলা হয়েছে৷ ক্যাচারটি লোহার রড এবং জাল দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল৷

জিহাদ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া আব্দুল্লাহ আল মুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি গতকাল রাতে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে এসেছি৷ এখানে এসে আরো কয়েকজন মেকানিকের সঙ্গে কথা বলে ক্যাচার তৈরি করি৷ রাত তিনটার দিকে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করি৷ শনিবার বিকেল তিনটার দিকে ক্যাচারের মাধ্যমে শিশুটিকে টেনে তুলতে সক্ষম হই৷''

বিক্ষোভ

এদিকে শিশু জিহাদকে উদ্ধারে গাফিলতির অভিযোগে স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ তারা রেলওয়ে কলোনিতে অবস্থিত ওয়াসার স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়৷ বিক্ষুব্ধ জনতা শিশু জিহাদের মৃত্যুর জন্য ফায়ার সার্ভিসকে দায়ী করছে৷ ফায়ার সার্ভিস বা সরকারের কোনো কর্মকর্তা শিশুটিকে উদ্ধারের পর সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা থেকে বিরত আছেন৷

পুলিশ অবশ্য শনিবার ভোররাতে পাইপে শিশু পড়ে যাওয়ার ঘটনাকে গুজব বলে তার বাবা মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের নৈশ প্রহরী মো. নাছির উদ্দিন বকুলকে আটক করে৷