1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংসদে শিক্ষার্থীদের বসবাস!

নুরুননাহার সাত্তার১২ জানুয়ারি ২০১৪

জার্মানির বাভেরিয়ার রাজ্যসভা ভবনের এক তলায় বসে রাজনীতিবিদদের গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন আর অন্য তলায় ছাত্রদের বসবাস৷ বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও সত্যি – অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য তো বটেই!

https://p.dw.com/p/1Ap1b
বাভারিয়ার সংসদছবি: Bayerischer Landtag

বিলাসবহুল গাড়ি আউডি থেকে নেমে বিশাল প্রাসাদের লোহার গেট দিয়ে ঢুকছেন কালো ব্রিফকেস বগলে নিয়ে স্যুটপরা কোনো এক রাজনীতিবিদ৷ তাঁর গাড়ির পাশেই সাইকেল দাঁড় করিয়ে মাথায় বেসবল ক্যাপ পরে কোনো একজন ছাত্র প্রাসাদের ঐ একই গেট দিয়ে ঢুকছে নিজের থাকার ঘরে৷ প্রাসাদের ঝকঝকে মেঝেতে লাল কার্পেট, দেয়ালে সব বড় বড় পেইনটিং আর লম্বা করিডোর পেরিয়ে ছাত্র আন্দ্রেয়াসকে যেতে হয় নিজের ঘরে৷

শুধু তাই নয়, প্রতিদিন তিনবেলা খাবার তৈরি, কাপড় ধোয়া, ঘর পরিষ্কার – সবই করে দেওয়া হয় তাঁকে৷ যাকে বলে একেবারে বিলাসবহুল জীবনযাত্রা৷ সেটাও আবার শুধু মিউনিখ শহরের কেন্দ্রস্থলেই নয়, সোজা বাভেরিয়ার রাজ্যসভা ভবনে৷ এই সুযোগ পাচ্ছে আন্দ্রেয়াস ও ইভার মতো ৫০ জন শিক্ষার্থী৷

বাভেরিয়ার রাজ্যসভা ভবনে ছাত্র-ছাত্রীদের শোবার ঘরের ঠিক উপর তলায় সংসদ সদস্যদের অফিসঘর৷ সংসদ সদস্যদের অফিস এবং শিক্ষার্থীদের হোস্টেলের মধ্যে যাতায়াতের কোনো বাধা নেই৷ ইভা এবং আন্দ্রেয়াস গত চার বছর থেকেই জার্মানির বাভেরিয়ার রাজ্যসভা ভবন ‘ম্যাক্সমিলেনিউম'-এ থাকেন৷

Maximilianeum Studentinnen
সংসদে থাকেন এই দুই শিক্ষার্থীছবি: Gerhard Brack

আন্দ্রেয়াস দুষ্টুমি করে হেসে বলেন, ‘‘আমরা যে-কোনো সময় রাজনীতিবিদদের কাছে যেতে পারি, কিন্তু উল্টোটা হয় না৷ ছাত্ররা সংসদ অধিবেশন চলাকালীন সময়ে অংশ নিতে পারে, কেউ কেউ সংসদে শিক্ষানবীশ হিসেবেও অংশ নেয়৷ তাছাড়া গ্রীষ্মের ছুটিতে সংসদ সদস্য এবং ছাত্র-ছাত্রীরা একত্রে মিলে গ্রিল পার্টি করেন৷ একসাথে খাওয়া-দাওয়া এবং গল্পগুজব করার মধ্য দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা অনেককিছুই শেখার সুযোগ পায়৷''

১৮৫২ সালে বাভেরিয়ার দ্বিতীয় রাজা মাক্সিমিলিয়ন ছাত্রদের জন্য একটি ফাউন্ডেশন গঠন করেন৷ তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া৷ ছাত্রদের বাবা-মায়ের আর্থিক সাহায্য ছাড়া যেন তারা নিশ্চিন্তে লেখাপড়া করতে পারে৷ অর্থাৎ পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের টাকা রোজগারের কোনো চিন্তা থাকবে না৷ থাকবে না রান্না, খাওয়া-দাওয়া, কাপড় ধোয়া বা ঘরের অন্য কোনো কাজের ভাবনা৷ ছাত্রছাত্রীরা যেন তাদের সমস্ত মেধা এবং মনোযোগের পুরোটাই পড়াশোনার পেছনে খরচ করে সফল ও যোগ্য মানুষ হওয়ার জন্য নিজেদের তৈরি করতে পারে এবং পরে দেশের জন্য তা কাজে লাগাতে পারে৷ এই লক্ষ্য নিয়েই দ্বিতীয় রাজা মাক্সিমিলিয়ন সেরা ছাত্রদের জন্য এই বৃত্তির সুযোগ করে দেন৷ এটা জার্মানির ‘এক্সক্লুসিভ' ছাত্রদের হোস্টেল৷

Maximilianeum Bayrischer Landtag Bibliothek
গ্রন্থাগারছবি: Bayerischer Landtag

ম্যাক্সমিলেনিউম ভবনটি তৈরির কাজ শুরু হয় ১৮৫৭ সালে এবং শেষ হয় ১৮৭৪ সালে৷ এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তা ধ্বংস হয়ে যায়৷ নতুন করে নির্মাণকাজ শেষ হলে ১৯৪৯ সালে বাভেরিয়ার পার্লামেন্ট ভবন হিসেবে ভাড়া নেওয়া হয়৷

সংসদ সদস্যদের পাশে থেকে নিজেদের যোগ্য মানুষ হিসেবে তৈরি করার সুযোগ পাওয়ার জন্য এই ছাত্রাবাসে থাকার সুযোগ পাওয়া একেবারে সহজ ব্যাপার নয়৷ ‘‘এখানে বৃত্তি পাওয়ার প্রধান শর্ত, আবিট্যুর অর্থাৎ স্কুল ফাইনালের ফলাফল হতে হবে ১,০ গ্রেড এবং তার স্কুল থেকে সুপারিশ করা একটি চিঠি৷ তাছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছেও ছাত্রদের প্রমাণ করতে হয় যে, তারা শুধু স্কুলে মেধাবী ছাত্রই নয়, তারা অন্য ছাত্রদের চেয়ে ব্যক্তিত্ব সম্পন্নও৷ তাদের থাকতে হবে সামাজিক সচেতনতাবোধ এবং বিভিন্ন কর্মতৎপরতায় নিজেদের নিয়োজিত করার মানসিকতা,'' একথা বলেন হান্সপেটার বাইসার, যিনি ১৯৯৮ সাল থেকে এই ছাত্রাবাস কমিটির সম্মানিক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ তিনি নিজেও একসময় এই বৃত্তি পেয়ে এখানেই ছিলেন৷

সেমিস্টার চলাকালীন সময়ে ৫৬ বছর বয়সি হান্সপেটার বাইসার প্রতিদিন ঠিক দুপুর একটায় প্রাসাদের বিশাল ডাইনিং হলে বসার পর ছাত্ররা যায় যার আসন নেয়৷ তবে সবাইকে যে প্রতিদিন খাবার টেবিলে হাজির হতে হবে তেমন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই৷ প্রতিবছরই কয়েকজন করে নতুন ছাত্রকে এই বিশেষ ছাত্রাবাসে থাকার জন্য বৃত্তির সুযোগ দেওয়া হয়৷

ইভা, আন্দ্রেয়াস বা ক্রুগ এখানে থাকার সুযোগ পেয়ে নিজেদের আহামরি গোছের কিছু ভাবেন না৷ আন্দ্রেয়াস বলেন, ‘‘কারো প্রতিভা থাকলে এখানে তারা তাদের সে চাহিদা পূরণের সুযোগ পায়৷'' ইভা মনে করেন, ছাত্রাবস্থায় এমন রাজকীয়ভাবে থাকা খাওয়া বা জীবনযাপন অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো৷

‘‘১৯৮০ সাল থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা এই একই ভবনে থাকে৷ তার আগে পর্যন্তও মেয়েদের জায়গা ছিল অন্য একটি ভবনে,'' বলেন হান্সপেটার বাইসার৷

ফ্রান্স ইয়োসেফ স্ট্রাউস, যিনি দীর্ঘদিন বাভারিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি এবং পদার্থবিদ্যায় নোবেল বিজয়ী ভ্যার্নার হাইসেনব্যার্গ-ও এই বিশেষ ধরণের বৃত্তি পেয়ে ছাত্রাবস্থায় এই বিলাসবহুল হোস্টেলে থাকতেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য