1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির এক স্টেমসেল দাতার কথা

৫ সেপ্টেম্বর ২০১১

বিশ্বের ডেটা ব্যাংকগুলিতে স্টেমসেল দাতার তালিকায় রয়েছেন ১কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ৷ এর মধ্যে ৪০ লক্ষেরও বেশি জার্মানির৷

https://p.dw.com/p/12T30
স্টেমসেল দাতা ফাবিয়ান শের্লেছবি: DW

লিউকোমিয়ার মত রোগের চিকিত্সায় প্রয়োজন হয় স্টেমসেলের৷ তবে এজন্য শুধু দাতা ও গ্রহীতার রক্তের গ্রুপের মিল হলেই চলেনা, দু জনের দেহকোষের মধ্যেও মিল থাকতে হয়৷

স্টেমসেল দাতার তালিকায় রয়েছে জার্মানির ২৬ বছর বয়স্ক তরুণ ফাবিয়ান শের্লে৷ এ প্রসঙ্গে নিজের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে ফাবিয়ান জানায়, ‘‘এটা অপূর্ব এক অনুভূতি৷ জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যর্থ হলেও এই জায়গাটিতে বিশেষ একটা কিছু করার অনুভূতি জাগে মনে৷''

ফাবিয়ানের কাছে ছিল এ এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা, যখন সে শুনলো তার স্টেমসেল অন্য দেশের এক লিউকেমিয়া বা ব্লাডক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে সব দিক দিয়ে মিলে গিয়েছে এবং রক্তের স্টেমসেল প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রোগীর আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা রয়েছে৷ এই স্টেমসেলের বেশির ভাগই রয়েছে মানুষের অস্থির মজ্জায়৷ তবে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে দেহকোষের মিল হলেই কেবল রোগীকে সাহায্য করা সম্ভব৷ সহোদরদের মধ্যে এই মিলের সম্ভাবনা রয়েছে ২৫ শতাংশ৷ রক্তের সম্পর্কহীন কারো সঙ্গে এই ধরনের সাযুজ্য হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা লটারিতে জেতার মত৷

অস্থিমজ্জা দান সম্পর্কে ধারণা রয়েছে ফাবিয়ানের

ড্যুসেলডর্ফের ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের মজ্জা দান কেন্দ্রে কাজ করে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছে ফাবিয়ান বেশ কয়েক বছর৷ তাই এসব কিছুই তার জানা৷ নিজের স্টেমসেলের সঙ্গে এক রোগীর স্টেমসেলের মিলে যাওয়ার কথা শুনে হতবাক হয়ে যায় ফাবিয়ান৷ তার ভাষায়, ‘‘সত্যি বলতে কী, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম সহকর্মীরা বুঝি ঠাট্টা করছে৷ পরে সবকিছু মিলিয়ে দেখলাম, ওদের কথাই ঠিক৷ আমি সেদিনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রক্ত পরীক্ষা করাতে যাই৷''

১৯ বছর বয়সেই ফাবিয়ান স্টেমসেল দাতার তালিকায় নিজের নাম লেখায়৷ এজন্য রক্তের নমুনা দিতে হয় তাকে৷ তা থেকে দেহকোষের নিদর্শন বিশ্লেষণ করা হয়৷ এই সব তথ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিস্থাপন কেন্দ্রে পাঠানো হয়, যে গুলোর মধ্যে একটা নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ দাতা শুধু জানতে পারেন, কোন দেশে তাঁর স্টেমসেল যাবে, কিন্তু কে তা পাবেন সেটা তিনি জানতে পারেননা৷ ড্যুসেলডর্ফের মজ্জাদানকেন্দ্রের চিকিত্সা বিভাগীয় প্রধান ডা. ইওহানেস ফিশার এ প্রসঙ্গে জানান, ‘‘সেই মুহূর্তে আমাদের দৃষ্টি থাকে রোগীর চিকিত্সার প্রতি৷ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠতে দেয়া হয়না৷ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যাতে এই ব্যবস্থাপনা ঠিকমত চলতে পারে, সেজন্য গোপন রাখা হয় পরিচয়৷''

Verabschiedung des Embryonengesetztes in Großbritanien
স্টেমসেলছবি: AP

অচেনা এক ব্যক্তির সঙ্গে গড়ে ওঠে রক্তের সম্পর্ক

আচমকাই অপরিচিত এক ব্যক্তি ফাবিয়ানের জীবনে প্রবেশ করে৷ ইটালির লিউকেমিয়াতে ভোগা এক রোগী৷ জিনগত দিক দিয়ে ফাবিয়ানের যমজ ভাই বলা চলে৷ অস্থির মজ্জা দু ভাবে নেয়া যায়৷ সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে মেরুদণ্ডের নীচের অংশে (শ্রোণি) ছোট্ট একটি অপারেশন করে মজ্জা বের করে নেয়া হয়৷ অথবা ওষুধ দিয়ে উত্পাদন বাড়িয়ে রক্ত থেকে স্টেমসেলের একাংশ বের করে নেয়া যায়৷ সরাসরি মজ্জা বের করে প্রতিস্থাপন করাটাই কাজে লাগে বেশি, তাই ফাবিয়ানও এই পদ্ধতিটাই বেছে নিয়েছিল৷ তার ভাষায়, ‘‘চিকিত্সাগত দিক দিয়ে এ ব্যাপারে সবরকম ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত ছিলাম৷ পুরোপুরি অচেতন হওয়ার আতঙ্কও নেই আমার৷ হাসপাতালে দুবার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ কোনো কিছু সম্পর্কে ধারণা থাকলে ভয়টাও কম হয়৷''

ফাবিয়ানের ভয়টা অন্যখানে৷ যদি কোনো অসুখবিসুখে শেষ মুহূর্তে সব কিছু ভেস্তে যায়৷ একারণে বোনের বাড়িতে জন্মদিনের দাওয়াতটাও বাদ দিয়েছিল সে৷ কেননা তাদের বন্ধুবান্ধবের মধ্যে জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল তখন৷ ফাবিয়ান বলে, ‘‘আমি জানতাম সে মুহূর্তে জ্বর হলে স্টেমসেল দান করাও সম্ভব হতনা৷ যেখানে জীবন মরণের ব্যাপার, সেখানে সচেতন থাকতেই হয়৷ এই রকম দায়িত্ব জীবনে খুব কমই আসে৷''

কোনো দাতার সঙ্গে স্টেমসেল মিলে গেলে রোগীর যেন নতুন এক জীবনের সুযোগ আসে৷ এ প্রসঙ্গে ডা. ইওহানেস ফিশার বলেন, ‘‘দাতার শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাটা গ্রহীতার লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত অসুস্থ সেলগুলিকে চিনে সেগুলিকে ধ্বংস করতে পারে৷ সেজন্য দাতা ও গ্রহীতার শরীরে একই ধরনের প্রতিরোধ পদ্ধতি থাকলে স্টেমসেল কাজে লাগেনা৷''

অপারেশনের জন্য সময় বেশি লাগেনা

এক ঘন্টার মধ্যেই অপারেশন হয়ে যায়৷ ৪৮ ঘন্টা পরেই হাসপাতাল ছাড়তে পারে ফাবিয়ান৷ কিছুটা ব্যথা থাকলেও, তা সহ্য করার মত৷ ফাবিয়ানের ভাষায়, ‘‘মেরুদণ্ডের নীচের অংশ থেকে মজ্জা বের করার সময় তীব্র আঘাত লাগে৷ অনেকটা সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে বসে পড়ার মত৷ এই রকম অনুভূতিটা কিছুক্ষণ থাকে৷ তবে খুব খারাপ নয়৷''

ফাবিয়ান জানায়, কয়েকদিন পরেই দুর্বলতা কেটে যায়৷ অল্পবয়সি ও খেলাধুলা করা মানুষদের বেলায় নতুন স্টেমসেল দ্রুত তৈরি হয়ে যায়৷ কয়েক মাস পরে একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর পায় ফাবিয়ান৷ মজ্জা প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়াটা সফল হয়েছে৷ তার স্টেমসেল নিয়ে ক্যানসারকে জয় করতে পারবেন সেই রোগী৷ আবেগাপ্লুত এক মুহূর্ত৷ প্রতিস্থাপন আইন অনুযায়ী দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ থাকে দুই বছর পর৷ কেননা তারপরই বোঝা যায় রোগীর শারীরিক অবস্থা কতটা স্থিতিশীল৷ একদিন হয়তো অচেনা এই আপনজনের সঙ্গে পরিচয় হবে, এই আশা ফাবিয়ানের৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক