1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভিবাসীরা কি সুখী?

আনা পেটার্স/আরবি৭ ডিসেম্বর ২০১৩

অভিবাসীদের মধ্যে যারা জার্মান ভাষাটা ভাল জানেন তারা জীবনে সন্তুষ্ট৷ এই তথ্য জানা গেছে ‘সুখ অ্যাটলাস ২০১৩' নামে এক জরিপের ফলাফলে৷ তবে বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে সন্দিহান৷

https://p.dw.com/p/1AUQ3
ছবি: DW/W. Dick

সুখ আসলে কী? কেমন করে তা পাওয়া যায়? এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন গবেষকরা৷ তাঁরা সুখ বলতে সাধারণত জীবনের সন্তুষ্টির কথা বলেছেন৷ আর সেটা পরিমাপও করা যায়৷ জার্মান পোস্টের উদ্যোগে ‘সুখ অ্যাটলাস ২০১৩' নামে এক সমীক্ষায় সেই চেষ্টাই করা হয়েছে৷ এতে জানতে চাওয়া হয়েছে জার্মানির মানুষরা, বিশেষ করে অভিবাসীরা কতটা সুখী?

জরিপ অনুযায়ী অভিবাসীরা সুখী

ফলাফলে দেখা গেছে বিদেশি বংশোদ্ভূত মানুষরা জার্মানিতে তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে মোটামুটি সুখী৷ বিশেষ করে যারা জার্মান ভাষাটা ভাল বলতে পারেন৷ এমনকি তারা তুলনামূলকভাবে অন্যান্যদের চেয়েও বেশি সন্তুষ্ট৷ উত্তরদাতাদের ৪৯ শতাংশ তাদের আর্থিক অবস্থা ‘ভাল থেকে খুব ভাল' বলে মনে করেন৷ জার্মানদের মধ্যে এই হার ৪৫ শতাংশ৷

কোলনের অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যপরিষেবা সংক্রান্ত এক প্রতিষ্ঠানের প্রধান তুর্কী বংশোদ্ভূত আরিফ উনাল এই ফলাফলে বিস্মিত হননি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এটা নির্ভর করে স্বদেশ ছেড়ে এখানে আসার কারণ এবং কী রকম পরিস্থিতিতে তাদের দেশ ছাড়তে হয়েছে তার ওপর৷ অনেক অভিবাসীর জন্য জার্মানিতে আসতে পারাটা জীবন বাঁচানো এক পদক্ষেপ৷ আর এটাই তাদের সুখী করে৷''

সুখ নিয়ে গবেষণা করছেন ইয়ান ডেলহে৷ তাঁর মতও অনেকটা এইরকম৷ ‘‘অনেকের জন্য জার্মানির জীবনটা স্বদেশের চেয়ে ভাল৷ জার্মানিতে অভিবাসীদের ক্ষেত্রে বৈষম্য নিয়ে মাথা ঘামানো হয়, কিন্তু অনেকে যে ভালই আছেন সেটা উপেক্ষা করা হয়৷''

বৈষম্যের কারণে সন্তুষ্টি কমে যায়

অবশ্য বৈষম্যের কারণে জীবনে সন্তুষ্টি কমে যেতে পারে৷ এটা জানা গেছে ‘সুখ-অ্যাটলাস ২০১৩' নামক সমীক্ষায়৷ উত্তরদাতা অভিবাসীদের বেশিরভাগই জানিয়েছেন, যে তারা জাতিগত কারণে বৈষম্যমূলক আচরণের সম্মুখীন হয়েছেন৷ বিশেষ করে তুর্কি বংশোদ্ভূতরাই এই ধরনের কথা জানান৷

সুখ গবেষক ডেলহে জানান কেউ তার জীবন নিয়ে সুখী কিনা তা জানা যায় কয়েকটি বিষয় থেকে৷ আর তা হলো: পাওয়া, ভালোবাসা, থাকা৷ ব্রেমেনের ইয়াকব ইউনিভার্সিটির সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক ডেলহে আরো বলেন, পাওয়া হলো মানুষের পার্থিব জিনিস পাওয়ার আকাঙ্খা, উপার্জন ও জীবনের মান উন্নয়নের ইচ্ছা৷ ভালোবাসা গড়ে ওঠে সামাজিক সম্পর্ককে ঘিরে৷ আর থাকা হলো আমরা জীবনটাতে কীভাবে চালাচ্ছি সেটা৷ যেসব মানুষ সক্রিয়, যাদের এমন কিছু আছে, যাতে তারা আগ্রহী, সে সব মানুষই সাধারণত জীবনে সুখী৷


কিছুটা বিস্মিত করেছে বিশেষজ্ঞদের

সুখ অ্যাটলাসের এই ফলাফল কিছুটা বিস্মিত করেছে উনাল ও ডেলহে-র মতো বিশেষজ্ঞদের৷ কেননা উত্তরদাতাদের মধ্যে তুলনামূলক সেই সব অভিবাসীই সুখী, যারা জার্মানিতে জন্ম গ্রহণ করেছেন৷ অন্যদিকে যারা নিজেরা এই দেশে অভিবাসনে এসেছেন, তাদের জীবনে সন্তুষ্টি কম৷ যেখানে অন্যান্য সমীক্ষায় উল্টো চিত্র দেখা গেছে৷ যেমন প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীরা দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসীদের চেয়ে সন্তুষ্ট৷ যদিও তারা এখানকার সমাজে ভালভাবেই সম্পৃক্ত৷ জার্মান পোস্টের এই ফলাফলে ব্যতিক্রমী এক চিত্র উঠে এসেছে, বলেন ডেলহে৷


অন্যান্য সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুখী বলে জানিয়েছেন৷ এর কারণ তারা সাধারণত দরিদ্র দেশগুলি থেকে এসেছেন৷ যেখানকার জীবনযাত্রার মান তেমন উন্নত নয়৷ জার্মানিতে আসার পর তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে৷ এটাও তাদের মনে সুখের অনভূতি জাগায়৷

Glücksforscher Jan Delhey
সুখ নিয়ে গবেষণা করছেন ইয়ান ডেলহেছবি: Jan Delhey

জার্মানিতে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের এই অভিজ্ঞতা হয়নি৷ তাই তারা মা-বাবার দেশের সঙ্গে নিজেদের অবস্থার তুলনা করে না৷ জার্মানির সমাজে তাদের অবস্থান নিয়ে মাথা ঘামায় বেশি৷ এই কারণে এখানকার সমাজে সম্পৃক্ত হলেও বাবা-মার প্রজন্মের চেয়ে তারা কম সন্তুষ্ট, বলেন সুখ গবেষক ডেলহে৷

প্রথম প্রজন্ম সন্তুষ্ট

উনাল তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই ব্যাখ্যা করতে পারেন বিষয়টি৷ ‘‘তুরস্ক থেকে আসা প্রথম প্রজন্মের অতিথি শ্রমিকরা এখানে কাজ করতে এসেছেন৷ তাদের লক্ষ্য কিছুটা অর্থ উপার্জন ও সঞ্চয় করা৷ হয়তো বা স্বদেশে একটা বাড়ি কেনা৷''

এইসব লক্ষ্য পূরণ হয়ে গেলেই তারা সন্তুষ্ট হন৷ তাদের চাহিদা ততটা উঁচু নয়৷

অভিবাসীদের সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে পারিবারিক বন্ধনেরও একটা ভূমিকা রয়েছে৷ বিশেষ করে দক্ষিণ ইউরোপ থেকে অভিবাসীদের মধ্যে এটা লক্ষ্য করা যায়৷ আর এটা সুখের অনুভূতিতে একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে৷

সবশেষে বলা যায় সুখের অনুভূতি একেক জনের কাছে একেক রকম৷ এক্ষেত্রে সুখ গবেষক ডেলহে কিছু সৎ পরামর্শ দিয়েছেন, যা মানুষের মনে সুখের অনুভূতি জাগাতে পারে, ‘‘যত বেশি সম্ভব অন্য মানুষের সাথে সময় কাটানো এবং সক্রিয় হওয়া৷ বাড়িতে চিপস খেতে খেতে টেলিভিশন দেখে বেশি সময় কাটানো ঠিক নয়৷ কর্মতৎপর হওয়া, যে-কোনো একটা হবি থাকা ও খেলাধুলায় মন দেওয়া উচিত৷''