1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে শ্রম অধিকার

১৯ জুন ২০১১

জার্মানিতে শ্রম অধিকার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে চাকুরিজীবীদের ক্ষেত্রে৷ কিন্তু চরম বেকারত্বের এই দিনে বাস্তবতা দেখাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র৷

https://p.dw.com/p/11fBR
জার্মানির ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থা ভেরডিছবি: picture alliance / dpa

জার্মানির পূর্বে ড্রেসডেন শহরের একটি কল সেন্টারের একজন কর্মী জানালেন কর্মক্ষেত্রে তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা৷

বেয়াটে রাডেব্যর্গের হাতে একেবারেই সময় নেই৷ সে এক ঝটিকা সফরে এসেছে ট্রেড ইউনিয়নের একটি অফিসে কারণ দ্রুত কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন৷ এক ঘন্টার মধ্যেই তাকে আবার ফিরে যেতে হবে কল সেন্টারে৷ দিনের পর দিন বিভিন্ন মানুষের নানা ধরণের প্রশ্নের উত্তর সে দিয়ে যাচ্ছে টেলিফোনের মাধ্যমে৷ একটি টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পনিতে বেয়াটে চাকরি করে৷ প্রতিটি কলের দৈর্ঘ্য ৭ মিনিট৷ এক দিনে প্রায় ৭০টি ফোন কল আসে৷ আসতে থাকে একের পর এক প্রশ্ন, ক্লান্তবোধ না করে দিয়ে যেতে হয় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর এবং তা হাসিমুখে৷ তবে কখনো কখনো তা অত্যন্ত বিরক্তিকর হতে পারে৷

Callcenterinnenansicht in Pforzheim
কল সেন্টারের দৃশ্যছবি: DW

কারণ কোন কোন ফোনকল শুরুই হয় খুব ক্ষুব্ধ স্বরে৷ স্বাভাবিকভাবে কেউ কথা বলে না, সবসময়ই উত্তেজিত থাকে৷ বেয়াটে রাডেব্যর্গের কাজ হল বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া এবং এই প্রশ্নগুলো সাধারণত করা হয় বাড়ি থেকে৷ যেমন – কেউ একজন টেলিভিশন কিনল কিন্তু তা ঠিকমত চলছে না৷ ক্যাটালগে রয়েছে কল সেন্টারের নম্বর৷ কোন সমস্যা হলে সেখানে ফোন করতে হবে৷ আর ফোন করলেই ভেসে আসবে বেয়াটের কন্ঠস্বর৷ অথবা অনলাইনে কিছু কেনা হল কিন্তু ডেলিভারি দিয়েছে অন্য কিছু – নালিশ করতে হবে৷ সঙ্গে সঙ্গে ফোন কর কল সেন্টারে৷ তবে বেয়াটে জানালো, অনেকে ফোন করে শুধুমাত্র কথা বলে সময় কাটানোর জন্য৷

কাজের পরিবেশে খুশি নন বেয়াটে

তবে বেয়াটে এই চাকরিতে খুশি নয়৷ কারণ শিফট ভাগ করা থাকলেও কখনো তা মেনে চলা হয় না৷ যেমন সপ্তাহান্তে হঠাৎ করে সকাল ৭টায় ফোন এল বাড়িতে৷ এক ঘন্টার মধ্যে কল সেন্টারে পৌঁছাতে হবে৷ শিফটে একজন কম৷ এভাবেই চলছে গত কয়েক বছর ধরে৷ গত বছর বেয়াটে সিদ্ধান্ত নেয় কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ার৷

Frau im Büro
চাকরির নিশ্চয়তা নেইছবি: BilderBox

কর্মীদের অধিকার আদায়ে বেয়াটে ছিল সোচ্চার৷ কোম্পানির দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল সে৷ যদিও ট্রেড ইউনিয়ন গড়ায় কোন সমস্যা নেই কিন্তু তারপরেও বেয়াটের কোন সহকর্মী খুব বেশি ভরসা পায়নি৷ কারণ এর আগে যারা ট্রেড ইউনিয়ন গড়তে চেয়েছিল তাদের কারোরই আর চাকরি নেই৷

ড্রেসডেনের ট্রেড ইউনিয়ন সমিতি ভেরডি-র সচিব গুদ্রুন স্মিডেন জানান,‘‘জার্মানিতে আসলে চাকরির নিশ্চয়তা কোথাওই নেই৷ চাকরি যাবে না, চাইলেই ছাঁটাই করা যাবে না – এমন কোন নিশ্চয়তা নেই৷'' এক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নও কোনভাবে সাহায্য করতে পারবে না৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে অফিসের সবচেয়ে অপছন্দের কর্মীকে ছাঁটাই করা হয় সবার আগে৷ সে যত ভাল কাজ করুক না কেন, তার চাকরি থাকবে না – কারণ সে বসের পছন্দের তালিকায় নেই৷ চাকরি চলে যাবার পর শ্রম আদালতে মামলা করেও কখনো কোন লাভ হয়নি৷

Bildgalerie Reizworte der Wahl Bürokratieabbau
এভাবেই কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে হবে – তারপরেও শেষ রক্ষা হবে কি?ছবি: BilderBox

ট্রেড ইউনিয়ন করলে চাকরি থাকবে না

বেয়াটে যখন তার কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে অফিসে জানাল যে, তারা একটি ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাচ্ছে৷ তখন কোম্পানি জানিয়েছে, ‘‘এসব করলে কোম্পানির ক্ষতি হবে৷ হতে পারে সেটা অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং তখন হয়তো এতগুলো মানুষকে চাকরিতে বহাল রাখা সম্ভব হবে না৷ লোক ছাঁটাই করতে হবে৷'' এভাবে ভয় দেখানো হয় বেয়াটে এবং তার সহকর্মীদের৷ তখন অনেকে ভয়ে আর ট্রেড ইউনিয়নের ধারেকাছে ভিড়তে চায় না৷ তারা সরাসরি জানিয়ে দেয় ট্রেড ইউনিয়নের প্রয়োজন নেই৷ চাকরি হারাবার ভয়ে অনেকেই নিজের অধিকার আদায়ের দাবিতে এগিয়ে আসতে পারে না৷ কারণ আর যাই হোক বেকার হওয়া যাবে না৷ স্ত্রী-সন্তান-সংসার নিয়ে রাস্তায় পড়া যাবে না৷ ড্রেসডেনে বেকারত্বের হার ১২ শতাংশ৷ এর মধ্যে কেউ নিজেকে দেখতে আগ্রহী নয়৷ একবার চাকরি চলে গেলে আরেকটি চাকরি পাওয়া খুবই কঠিন৷ তাই শ্রম অধিকারকে দূরে রাখাটাই শ্রেয় বলে অনেকেই মনে করে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: জাহিদুল হক