জার্মানিতে শতকরা ৬ জনকেই ঘুমের ওষুধ খেতে হয়
প্রায়ই শোনা যায়, ‘কিছুতেই ঘুম আসছিল না, পরে ওষুধ খেয়ে ঘুমোতে হয়েছে’৷ তবে ঘুম না হওয়ার কারণ নিয়ে কিন্তু কেউ তেমন কিছু বলেনা৷ চলুন, এবার সেদিকে তাকানো যাক৷
ঘুমের কি প্রয়োজন আছে?
আচ্ছা আমরা ঘুমাই কেন? ঘুমের কি তেমন কোনো প্রয়োজন আছে? এ নিয়ে গবেষণা হলেও এখনো তার ফলাফল সেভাবে পাওয়া যায়নি, আসল কারণ অনেকটা অন্ধকারেই রয়ে গেছে৷ একথা বলেন ডাক্তার হান্স গ্যুন্টার ভেস, যিনি এক স্লিপিং ল্যাবোরেটরির প্রধান৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘তবে যা আমরা সবাই জানি সেটা হলো, রাতে কারো ঘুম না হলে তার মধ্যে পরদিন সকালে ক্লান্ত ভাব, কাজে অমনোযোগী ও অল্পতে রেগে যাওয়া, এসব লক্ষণ দেখা দেয়৷’’
ঠিক যেন ব্যাটারি
ড. ভেস বলেন, ‘‘সকালে ক্লান্ত লাগলে বোঝা যায় মানুষের রাতের ঘুম কতটা প্রয়োজন৷ কারণ মানুষ যতক্ষণ জেগে থাকে ততক্ষণ মস্তিষ্কের কোষগুলো কাজ করে৷ মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ব্যাটারির সাথে তুলনা করা যেতে পারে৷ ব্যাটারি চার্জ দিয়ে ব্যবহার করার পর যেমন আবার নতুন করে চার্জ দিতে হয়, ঠিক তেমনি ঘুমের মধ্য দিয়ে মানুষের মস্তিষ্কের সেলগুলো চার্জ হয়৷ তখন সকালে নতুন ব্যাটারির মতো মানুষও নতুন উদ্যমে কাজ করতে পারে৷
এই রোগ অনেকের
কিন্তু যদি কারো ঘুম না আসে তখন? হ্যাঁ এই সমস্যার সাথে অনেকেই পরিচিত৷ ঘুম হয় না বা ঘুম আসেনা, এই অভিযোগ নিয়ে যে কত মানুষ ডাক্তারের কাছে আসেন তার শেষ নেই৷ একথা বলেন রেগেন্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিকের ঘুম গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. অধ্যাপক মিশায়েল আরৎস্ট৷
শতকরা ৬ জনকেই ঘুমের ওষুধ খেতে হয়
একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, জার্মানিতে শতকরা ৫০ জন মহিলারই ঘুমের সমস্যা রয়েছে৷ তবে পুরুষদের বেলায় এই হিসেব তার অর্ধেক অর্থাৎ শতকরা ২৫ জন৷ ঠিকমতো ঘুম না হওয়ার কারণে জার্মানিতে শতকরা ৬ জনেরই চিকিৎসা নিতে হয় বা ওষুধ খেতে হয়৷ বিভিন্ন অসুখের কারণও কিন্তু ভালো ঘুম না হওয়া বা একেবারেই ঘুমোতে না পারা৷
মূল কারণ তিনটি
ঘুম কেড়ে নেওয়ার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, অস্থিরতা অর্থাৎ অকারণে এলোমেলো চিন্তা করা, স্ট্রেস – শারীরিক বা মানসিক চাপ এবং বাস্তব কিছু সমস্যা৷ এ সমস্যাগুলোর সমাধান কীভাবে সম্ভব? চলুন জানা যাক৷
এলোমেলো চিন্তা
যাদের অযথা এলোমেলো চিন্তা বা যেসব চিন্তার কোনো যৌক্তিকতা নেই, সেরকম চিন্তা করার অভ্যাস আছে এবং তারা যদি এই অভ্যাস ছাড়তে না চান – তাদেরকে ঘুম পাড়ানো খুবই কঠিন৷ একথা বলেন মিউনিখের মাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউটের মনোরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আক্সেল স্টাইগার৷ যারা এলোমেলো চিন্তা করেন, তারা সবকিছুর নেতিবাচক দিকটাই দেখেন৷ সেই অনুভূতিই তাদের ভেতরে সারাক্ষণ কাজ করে৷ এই অকারণ উদ্বেগই ঘুমের মহাশত্রু৷
মনকে শান্ত আর হাসিখুশি রাখুন
শরীর এবং মন পুরোপুরি শান্ত থাকলেই কেবল ভালোভাবে, নিশ্চিন্তে ঘুমানো সম্ভব৷ ড. ভেস তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, রোগীদের তিনি ফ্যান্টাসি ভ্রমণে পাঠিয়ে দেন অর্থাৎ বিছানায় শুয়ে সুন্দর কিছু ভাবতে থাকেন৷ তখন মস্তিষ্ক ব্যস্ত হয়ে যায় সুন্দর কল্পনা নিয়ে এবং এক ফাঁকে ঘুম এসে যায়৷ তবে ভালো, শান্ত, সুন্দর কল্পনা থেকেই ঘুম আসতে পারে, কোনো উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা থেকে নয়৷
বই পড়া, গানশোনা বা হাঁটা
সারাদিন প্রচণ্ড কাজের চাপে যারা থাকেন তাদের শরীর-মন শান্ত হতে খানিকটা সময় লাগে বৈকি! তারা ঘুমানোর আগে খানিকটা ভালো বই পড়া, পছন্দের কোনো গান শুনতে পারেন৷ কিংবা পারেন সঙ্গীর সাথে শোবার অল্পক্ষণ আগে বাইরে হাঁটতে যেতে, পরামর্শ ড. ভেস এর৷ দেরি করে না খাওয়া এবং মদ্যপান না করার পরামর্শ তাঁর৷
বেডরুমের পরিবেশ
বেডরুমের পরিবেশকেও খানিকটা সুন্দর করতে হবে৷ যথেষ্ট আলো-বাতাস যেন ঢুকতে পারে সেদিকেও নজর দিতে হবে৷ প্রতিদিন একই সময় বিছানায় যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে৷ শোবার ঘরে টেলিভিশন না থাকাই ভালো ,বলেন ড.ভেস৷ তিনি যোগ দেন, বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘুম কিছুটা কমে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক৷ তাছাড়া শরীরে কোনো ব্যথা থাকলেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে৷