1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে বড়দিন উৎসব

রায়হানা বেগম২২ ডিসেম্বর ২০০৮

বছর ঘুরে শীতের হিমেল আমেজ নিয়ে আবার ঘনিয়ে এল বড়দিন৷ খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, ২৫ শে ডিসেম্বর৷ খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্ট এই দিনটিতেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন৷

https://p.dw.com/p/GLMV
বছর ঘুরে শীতের হিমেল আমেজ নিয়ে আবার ঘনিয়ে এল বড়দিন৷ছবি: AP

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করে দিনটি৷ জার্মানিতেও কয়েক সপ্তাহ ধরে বেশ সাজ সাজ রব পড়ে গেছে বড় দিন উৎসবকে ঘিরে৷

জার্মানিতে বড় দিনের উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় প্রায় চার সপ্তাহ আগে থেকেই৷ এই সময়টাকে বলা হয় Adventszeit৷ অর্থাৎ আগমনের সময়৷ ঝকঝকে আলোর মালা উজ্জ্বল করে তোলে শহরের রাস্তা ঘাট দোকান পাট ও অফিস আদালত৷ অনেকের বাসায় কাঁচের জানালায় শোভা পায় বর্ণিল আলোক সজ্জা, কাগজের তৈরি নানা রকম ছবি৷ রান্নাঘর থেকে ভেসে আসে লোভনীয় সুগন্ধ৷ বড়দিনের বিস্কুট ও কেক বানানো শুরু হয় এই সময়৷

বিশেষ করে ছোটদের জন্য এই সময়টা খুব আনন্দের৷ পরিবারের বড়রা আডভেন্ট ক্যালেন্ডার তৈরি করে তার খোপে খোপে ছোটদের জন্য রেখে দেন বাদাম, ফল, চকলেট বা খেলনা৷ এক এক দিন এক একটা জিনিস পেয়ে বাচ্চাদের খুশীর সীমা থাকেনা৷

অনেকের বাসায় ফার গাছের পাতা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে একরকম তোড়া বানিয়ে টোবিলে রাখা হয়৷ তার ওপর গেঁথে দেয়া হয় চারটা মোমবাতি৷ বড়দিনের আগের চার সপ্তাহে প্রতি রোববার একটি করে মোমবাতি জ্বালানো হয়৷ চারটা মোমবাতি জ্বালানো হয়ে গেলে বুঝতে হবে বড়দিন আসন্ন৷ বাচ্চারা তখন গান গেয়ে ওঠে...৷

সান্তা ক্লসের মত জার্মানিতে ভাইনাখটসমান বড়দিনের উপহার নিয়ে আসেন৷ বড়দিন উপলক্ষে অনেকে ফারজাতীয় গাছ কিনে আনেন৷ সাজিয়ে রাখেন নানা রঙের কাঁচের বল, ফুল, মোমবাতি ও আরও অনেক কিছু দিয়ে৷উপহার সামগ্রী ছড়িয়ে রাখেন গাছের নীচে৷ বাচ্চারা মনে করে সান্তা ক্লস বুঝি রেখে গেছে এই সব উপহার৷

২৪ শে ডিসেম্বর পরিবারের সবাই মিলে পালন করেন হাইলিগার আবেন্ড বা পবিত্র সন্ধ্যা৷ তার আগে অনেকে গির্জার প্রার্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন৷ বাসায় ফিরে এসে উপহারের মোড়ক খোলার পালা৷ বিশেষ করে বাচ্চারা খুশীতে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে৷ অনেক সময় তারা আগেই কাংখিত উপহারের নাম লিখে মা বাবাকে দিয়ে রাখে৷ উপহারের পাট চুকে গেলে মন ছুটে যায় লোভনীয় খাবারের দিকে৷ গৃহিণীরা তৈরি করেন বড়দিনের বিশেষ খাবার৷ কার্প মাছ, রাজহাঁসের মাংস, হরেক রকমের কেক ও আরও অনেক কিছু৷ পরের দিন ২৫ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে এই আনন্দ উৎসব৷ সেদিনও থাকে আনন্দ উচ্ছ্বাস ও খাবার দাবারের সমারোহ৷ দূর দূরান্ত থেকে আত্মীয় স্বজন আসেন দেখা সাক্ষাৎ করতে৷ জার্মানিতে বড়দিন আসলে একটি পারিবারিক উৎসব৷

বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে ছোট বড় সব শহরেই গড়ে ওঠে বড়দিনের বাজার৷ হরেক রকমের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানীরা৷ বর্ণাঢ্য উপহার সামগ্রী ও লোভনীয় খাবারের গন্ধে সারা এলাকা জমজমাট হয়ে ওঠে৷

এবার জার্মানির কোলন শহরের গির্জা চত্বরের বড়দিনের বাজারটি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সবার৷ ১৫০ টি স্টল রয়েছে সেখানে৷ এগুলির নকশা গতানুগতিক নয়৷ জার্মানিতে এরকমটি আর দেখা যায়না৷ নকশা করেছেন কাটিয়া শ্যুরে তাঁর স্বামীর সঙ্গে মিলে৷ গর্বভরে বলেন তিনি, এটা এক নতুন ধরনের কাঠামো৷ স্টলগুলির আকার কুঁড়ে ঘরের মত নয়৷ বলা যায় অনেকটা ঝিনুকের মত৷ তাই এগুলি নজর কাড়ে সবার৷

এইসব স্টলে নানা রকম পণ্যদ্রব্য সাজিয়ে বসেছেন দোকানীরা৷ এর মধ্যে রয়েছেন সুইজারল্যান্ডের ফলকার ওপল্ডকে৷ ১০ বছর ধরে কোলনের বড় দিনের এই বাজারে আসছেন তিনি৷ থাকেন মাস খানেক৷ রকমারি পনির নিয়ে দোকান সাজিয়ে বসেন তিনি৷ নানারকম মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয় এখানে৷ কথাবার্তা বলতে ভাল লাগে তাঁর৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজারটা শেষ হয়ে যাওয়ার সময় অনেকে এসে আমাকে ও আমার পরিবারের জন্য শুভকামনা জানায়৷ এই আন্তরিকতা অর্থ দিয়ে কেনা যায়না৷