1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে চাকরি হারাবার ভয় বাড়ছে

৮ জুন ২০১১

জার্মান সংবিধানেই শ্রমিক ও কর্মীদের কিছু বিশেষ অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশ্বায়নের এই যুগে তারা অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কে ভুগছেন৷

https://p.dw.com/p/11Wzx
চাকরি বিহীন মানুষছবি: Digitalpress /Fotolia

কল-সেন্টার কর্মীর জীবন

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে তথ্য-পরিসংখ্যান, সরকারি বিবৃতি, বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ কম নেই৷ কিন্তু কী ভাবছেন একজন সাধারণ কর্মী? এমনই একজন বেয়াটে রাডেব্যার্গ৷ কাজ করেন এক কল-সেন্টারে৷ না ভারতের ব্যাঙ্গালোর নয়, জার্মানির ড্রেসডেন শহরে৷ সারাদিন ধরে ক্রেতাদের টেলিফোনে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করেন৷ কেউ নতুন কিছু কিনতে চায়, কেউ ভুল বিল নিয়ে নালিশ জানায়, কারো টেলিফোন কাজ করছে না – এই সব আর কি৷ মাঝে মাঝে তাদের সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয়৷ বিশেষ করে যখন অপর প্রান্তের মানুষটি সাধারণ ভদ্রতার ধার ধারে না৷ কিছু লোকের অবশ্য সত্যি রাগ করার কারণ থাকে৷ কেউ আবার শুধু জমে থাকা ক্ষোভ উগরে দিতে চায়৷ অনেক সময় লোকে ফোন করে অযথা গালিগালাজ করার জন্য৷ তবে হাতে সময় এত কম থাকে যে সবার কথা ভাবার সময় থাকে না৷ একটি কল ৭ মিনিটের বেশি হলেই পরে তার মাশুল গুনতে হয়৷

কর্মক্ষেত্রে অরাজকতা

শুধু বিচিত্র সব টেলিফোন কল সামলানোই যদি একমাত্র সমস্যা হতো, তাহলেও না হয় মেনে নেওয়া যেত৷ কিন্তু গোটা দপ্তরেই যে চলছে চরম অরাজকতা৷ কল সেন্টারে শিফট'এ কাজ করতে হয়৷ কিন্তু থেকে থেকেই তা বদলানো হয়৷ সপ্তাহান্তে হঠাৎ ফোন করে বলা হয়, লোক কম পড়ছে – এখনই কাজে আসতে হবে৷ বছরখানেক আগে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বেয়াটে সব নিয়ম মেনে কর্মী পরিষদ গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷ কাজের সময় ঠিক করতে, ডিউটি বেঁধে দিতে, কর্মীদের অধিকার ও দায়িত্ব স্থির করতে সংস্থার মালিক পক্ষের সঙ্গে বসে সমাধানসূত্র স্থির করতে চেয়েছিলেন বেয়াটে৷

সংবিধানেই এই অধিকার স্বীকৃত রয়েছে, জার্মানির প্রায় সব বড় সংস্থায়ই শ্রমিক ও মালিকদের এমন যৌথ পরিষদ রয়েছে৷ কিন্তু বেয়াটে ও তাঁর সহকর্মীদের মনে কিছুটা ভয়ও রয়েছে৷ কারণ তাঁরা জানেন, এর আগে যারা কর্মী পরিষদ গড়ার চেষ্টা করেছেন, তাদের মধ্যে কেউই আজ আর সংস্থায় কাজ করছেন না৷ বেয়াটে এক শ্রমিক সংগঠনেরও সদস্যা৷ কিন্তু সেকথা তিনি গোপন রেখেছেন, যাতে কোনো বাড়তি অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়৷

শ্রমিক সংগঠনগুলির তৎপরতা

শ্রমিক সংগঠনগুলিও আজকাল সদস্যদের এবিষয়ে সাবধান থাকার পরামর্শ দিচ্ছে৷ কারণ কে জানে, সেই কারণে হয়ত চাকরিও যেতে পারে৷ ড্রেসডেন শহরে শ্রমিক সংগঠন ‘ভ্যার্ডি'র প্রতিনিধি গুডরুন শ্মিডগেন এপ্রসঙ্গে বললেন, ‘‘আসলে কিন্তু চাকরি বাঁচানোর জন্য আইনগত সুরক্ষা কোথাও নেই৷ আইন করেও কোনো লাভ হয় নি৷ নামেই চাকরি ক্ষেত্রে সুরক্ষার বিধান রয়েছে, কিন্তু সেই সুরক্ষা মোটেই কাজে আসে না৷''

গুডরুন শ্মিডগেন তাই ঘুরপথে বিভিন্ন সংস্থায় কর্মী পরিষদ গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ আগ্রহী কর্মীরা তাঁর কাছে এলে তিনি নিজেই সরাসরি সংস্থার কাছে কর্মী পরিষদ গঠনের প্রস্তাব দেন৷ তবে যারা আর্জি জানিয়েছে, তাদের নাম তিনি গোপন রাখেন৷ সংস্থার সঙ্গে বোঝাপড়া হলে কর্মী পরিষদ গঠন করা হয়৷ তখন তারা সামনে আসতে পারে৷ বেয়াটে রাডারব্যার্গ'এর ক্ষেত্রেও তিনি এমনটা করেছেন৷

Flash-Galerie Arbeitsamt Schlange
চাকরি হারিয়েছে, নাম নথিভুক্ত করতে দীর্ঘ লাইনছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb

মালিক পক্ষের অভিমত

‘ডিভি কম' নামের কোম্পানি এই কল সেন্টার চালায়৷ বড় বড় ঘরে কম্পিউটারের সামনে হেডসেট লাগিয়ে কর্মীরা বসে রয়েছে৷ সব প্রান্ত থেকেই শোনা যাচ্ছে – ‘‘বলুন, আপনার জন্য আমি কী করতে পারি?'' কর্মীরা গ্রাহকদের সঙ্গে কথাও বলছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে টাইপ করে কম্পিউটারের পর্দায় সবকিছু নথিভুক্ত করছেন৷ সংস্থার মালিক ডিটার গ্রেচেল দাবি করেন, তিনি কর্মীদের স্বাচ্ছন্দ্য ও তাদের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন৷ কেউ ঘণ্টায় ৮ ইউরোর চেয়ে কম মজুরি পায় না – শ্রমিক সংগঠনগুলি ঠিক যেমনটা দাবি করে আসছে৷ এটা ঠিক যে জার্মানিতে কল সেন্টারের কর্মীরা অনেক জায়গায় এর থেকে কম মজুরি পান৷ কিছু সংস্থায় এত কম মজুরি দেওয়া হয় যে সংসার চালাতে সরকারের কাছে বাড়তি ভাতার জন্য আবেদন করতে হয়৷ গ্রেচেল আরও জানান, যে কর্মীদের অবসর ভাতা জমানোর ক্ষেত্রেও সংস্থা নিজস্ব অবদান রাখে৷ তবে সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে কর্মীদের অংশগ্রহণের প্রশ্নে ডিটার গ্রেচেল'এর অবস্থান একেবারে অনড়৷ এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘‘ক্রেতা বা গ্রাহকদের জন্য পরিষেবার কাজটাই এমন, যে কাজের সময় নিয়ে খুঁতখুঁতে হলে চলে না৷ সেখানে পরিষেবার মানই আসল বিষয়৷ বাজারে যে সব ছোটখাটো কাজ পাওয়া যায়, সেগুলি ঠিকমতো করতে হলে বারবার কর্মীদের সম্মতি আদায় করা সম্ভব নয়৷''

কর্মীরা নিরুপায়

সংস্থার মালিক পক্ষ যখন জানতে পারলো যে শ্রমিক সংগঠন কর্মী পরিষদ গঠন করতে চাইছে, তখন তারা তড়িঘড়ি ঘরে এক কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করলো৷ উচ্চপদস্থ ম্যানেজাররা কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করলেন, যে কর্মী পরিষদ হলেই শ্রমিক সংগঠনগুলি দূরে বসে কলকাঠি নাড়বে৷ ফলে সংস্থার ক্ষতি হবে৷ এমনকি কিছু লোকের চাকরিও যেতে পারে৷ এসব কথা শুনে কে আর নিজেদের দাবিতে অটল থাকে৷ ফলে কর্মী পরিষদ আর গঠন করা হলো না৷ বেয়াটে রাডারব্যার্গ'ও এর মধ্যে বুঝে গেছেন, যে কল সেন্টারে কর্মীদের অধিকার রক্ষা সত্যি কঠিন৷ কারণ বেশিরভাগ কর্মীর শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ কম৷ বাকিরা আগে বেকার ছিলেন, নিজের ক্ষেত্রে কোনো কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে এই কাজ করছেন৷ এদের পক্ষে নতুন করে চাকরি পাওয়া কঠিন৷ তাই তাদের মুখ বুজে এই কাজই করে যেতে হবে৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক