1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে বিদেশি

ডানা শের্লে/আরবি২৬ অক্টোবর ২০১২

বাঃ তুমি তো বেশ ভাল জার্মান বলতে পার! এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপিকা এলিফ সেনেলকে প্রায়ই৷ জার্মানিতে জন্ম হলে এটাই যে স্বাভাবিক, তা অনেকেই বুঝতে চায় না বা পারে না৷

https://p.dw.com/p/16XQM
ছবি: picture-alliance/dpa

সাংবাদিক সেনেল লক্ষ্য করেছেন, জার্মান ভাষায় কথা বললে বিশেষ করে বয়স্করাই বিস্ময় প্রকাশ করেন৷ সেনেল জানান,‘‘অবশ্য আমি বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে পার্থক্যও লক্ষ্য করেছি৷ সাধারণত প্রবীণরাই এই ধরনের প্রশ্ন করেন৷ অল্পবয়সীদের কাছে এটাই স্বাভাবিক যে, কোনো নাম জার্মানের মত না শোনালেও কেউ এই সমাজেরই অঙ্গ হতে পারে৷''

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষজন আসছেন জার্মানিতে গত কয়েক দশক ধরে৷ কেউ কাজ করতে, কেউ বা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী হয়ে অথবা পড়াশোনার জন্য৷ প্রথম দিকে শ্রমজীবী মানুষের প্রয়োজন ছিল এই দেশটিতে৷ সাংবাদিক সেনেল'এর মা-বাবাও ৭০-এর দশকের প্রথম দিকে এসেছেন জার্মানিতে, তথাকথিত ‘অতিথি শ্রমিক' হিসেবে৷ তখন শিক্ষিত বিদেশির সংখ্যা ছিল কম৷ আজ চিত্রটা বেশ পাল্টেছে৷

Journalistin Elif Senel
টিভি উপস্থাপিকা এলিফ সেনেলছবি: Elif Senel

ইদানীং উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ছে

একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে উচ্চশিক্ষিত অনেক অভিবাসী জার্মানিতে এসেছেন৷ জার্মান অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ২০০৯ সালে আসা অভিবাসীদের ২১ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত ও বিশেষজ্ঞ৷ অভিবাসী বিশেষজ্ঞ ক্লাউস বাডে এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ক্রমেই বেশি সংখ্যায় উচ্চশিক্ষিত অভিবাসী জার্মানিতে আসছেন, তাই ‘অভিবাসীরা স্বল্পশিক্ষিত', বহিরাগতদের সম্পর্কে প্রচলিত এই ধারণাটাও ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে৷''

সব মিলিয়ে অভিবাসীদের ভাবমূর্তিটা আগের মত অত নেতিবাচক নয়৷ তবে এক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে৷ অভিবাসীদের ব্যাপারে একটা শ্রেণীবিন্যাসের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় এখানকার সমাজে৷ ক্লাউস বাডের ভাষায়, ‘‘৫০-এর দশকে ইটালিয়ানদের সম্পর্কে একটা ধারণা ছিল যে, তারা জার্মান মেয়ে দেখলেই শিস দেন৷ ৮০ ও ৯০-এর দশকে পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা অপরাধী চক্রের কথা বলা হতো৷ আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নতুন দুটি দেশ, পূর্ব ইউরোপের রুমেনিয়া ও বুলগেরিয়া থেকে আসা জিপসিদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত৷ যদিও দেশদুটি থেকে অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষ এখানে আসছেন৷''

মুসলিমদের সম্পর্কে ধাণা ও এর প্রভাব

অভিবাসী সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণায় আরেকটি কালো ছায়া ফেলেছে মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তিটা৷ বিতর্কিত জার্মান রাজনীতিক টিলো সারাৎসিনের ইসলাম বা মুসলিম বিরোধী লেখালিখিও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে৷ যেমন মুসলমানরা বিপজ্জনক এবং চরমপন্থার দিকে ঝোঁক রয়েছে তাদের, এই সব বক্তব্য মানুষের মনে কিছুটা হলেও রেখাপাত করেছে৷ যেমনটি দেখা যায় ‘জার্মান ফাউন্ডেশন ফর ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশন' পরিচালিত একটি সমীক্ষায়৷

‘মুসলমানদের জার্মান সমাজে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে', সারাৎসিনের এই ধরনের বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির আগে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্নরকম ছিল৷ ২০০৯ সালে নেয়া সমীক্ষায় উত্তরদাতাদের বেশিরভাগই অভিবাসী ও জার্মানদের সহাবস্থান সব মিলিয়ে ইতিবাচক বলে জানিয়েছিলেন৷ এর এক বছর পরেই ২০১০ সালে চিত্রটা পাল্টে যায়৷ অভিবাসীদের সমাজে সম্পৃক্ততার বিষয়ে আশাবাদী মনোভাব থেকে সরে আসেন উত্তরদাতারা৷ এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় অভিবাসী ও জার্মান উত্তরদাতা উভয়ের মধ্যেই৷

তবে ২০১১ সালে অভিবাসীদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাটা একটু একটু করে মুছতে শুরু করে৷ এতে বোঝা যায়, রাজনীতির চেয়ে অভিবাসীসমৃদ্ধ সমাজ অনেক বেশি চাপ নিতে পারে৷ সমীক্ষার ফলাফলে এই ছবিটাই উঠে আসে৷ যেমন অভিবাসী ও জার্মান – উভয় গ্রুপের ৬০ শতাংশ উত্তরদাতাই জানিয়েছেন, আরো অধিক সংখ্যায় উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তির জার্মানিতে আসা উচিত৷ ৭০ শতাংশ ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যে তারা, অভিবাসীদের সমাজে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে সচেষ্ট হবেন৷

শব্দ ব্যবহারে সচেতনতা

তবে সমাজ, রাজনীতি ও গণমাধ্যমে অভিবাসীদের যে ছবিটি তুলে ধরা হয়, তা সমস্যাজনক৷ অল্ডেনবুর্গ ইউনিভার্সিটির আন্তঃসংস্কৃতি শিক্ষার প্রফেসর অভিবাসী- গবেষক পাউল মেশেরিল এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘জার্মানিতে অভিবাসীরা যে স্বাগত এবং স্বাভাবিক, এই রকম একটা আবহ গড়ে তুলতে হবে সমাজে৷ যেমন, এখানে যে বিভিন্ন বংশোদ্ভূত ও নানা চেহারার মানুষজন বসবাস করেন, তা নিয়ে কারো মনে প্রশ্ন জাগা উচিত নয়৷ ‘বিদেশি বংশোদ্ভূত' এই বিশেষণটাই তো মানুষকে পৃথক করে৷''


তবে জার্মান টিভিতে অভিবাসীদের চরিত্রগুলি ইদানীং সমাজের স্বাভাবিক অঙ্গ হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে৷ এটা লক্ষ্য করেছেন সাংবাদিক এলিফ সেনেল৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘সিরিয়াল ও সোপ অপেরায় মাঝে মাঝে ইরানি ডাক্তার বা বাড়ির দালালের চরিত্রে কোনো তুর্কিকে দেখা যায়৷ কিন্তু তারা কোন বংশোদ্ভূত, তা নিয়ে মাথা ঘামানো হয় না৷''

সব মিলিয়ে জার্মানি অভিবাসী অধ্যুষিত সমাজ হিসাবে গত দশ বছরে অগ্রগতি লাভ করেছে৷ সমাজে অভিবাসীদের চিত্রটা আগের চেয়ে ইতিবাচক৷ মনে করেন এলিফ৷ তাঁর কথায়, ‘‘এর কারণ অভিবাসীরা এখন অনেক বেশি আত্মসচেতন৷ আমার মা-বাবা ও অন্যান্য অতিথি শ্রমিকরা ছিলেন অনেকটা নিভৃতচারী৷ জার্মানিতে বসবাস করতে পেরেই যেন তারা নিজেদের ধন্য মনে করতেন৷ কিন্তু অতিরিক্ত কৃতজ্ঞতাবোধ ও বিনয় নতুন সমাজের কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়৷ আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে এলে মর্যাদাও পাওয়া যায়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য