1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানদের স্বাস্থ্য সচেতনতা

২ সেপ্টেম্বর ২০১০

প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে জার্মানি তথা পশ্চিমের মানুষরা ক্রমেই ঘরকুনো হয়ে উঠছে৷ কায়িক শ্রম বা খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে তাদের৷ ফলে স্বাস্থ্যের ওপর পড়ছে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া৷

https://p.dw.com/p/P1Pk
জার্মানরা এখন না হেঁটে কম্পিউটারের সামনে বসে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করছেছবি: picture-Alliance/dpa

‘‘জার্মানদের জীবনযাত্রা কতটা স্বাস্থ্যকর?'' এই শিরোনামে জার্মান স্বাস্থ্যবীমা প্রতিষ্ঠানগুলি পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানা গেছে, জার্মানির বেশিরভাগের মানুষের জীবনযাত্রা খুব একটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়৷ সুষম খাদ্যগ্রহণ, হাঁটাচলা ও খেলাধুলার প্রতি অনাগ্রহী হয়ে উঠছে জার্মানির মানুষ৷ ফলে উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র ও হৃদরোগের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ সমীক্ষায় আড়াই হাজার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নানা বয়সি নারী ও পুরুষকে টেলিফোনে প্রশ্ন করা হয়েছিল৷ তুলনা করা হয়েছে জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যের মানুষের মধ্যে৷ চলাফেরা, খাদ্যাভ্যাস, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, ধূমপান ও মদ্যপান ইত্যাদি বিষয়গুলির দিকে জোর দেওয়া হয়েছে৷

সমীক্ষায় জানা গেছে, মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে৷ ১৮ শতাংশ নারী ও ১০ শতাংশ পুরুষ স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন৷ উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ হাঁটাচলা করে খুব কম৷ ৫০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণের ব্যাপারে উদাসীন৷ ২৫ শতাংশ ধূমপানে অভ্যস্ত৷ স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রার দিক দিয়ে পুরুষদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে আছে৷ খেলাধুলার ক্ষেত্রে ছেলেরা এগিয়ে থাকলেও গৃহস্থালির কাজকর্ম, বাজারহাট করা – এই সব দিক দিয়ে মেয়েরাই বেশি সক্রিয়৷ খাবারের ব্যাপারেও মেয়েরা সচেতন বেশি৷ তাদের খাবারের তালিকায় ফলমূল, শাকসবজির পরিমাণ ছেলেদের তুলনায় বেশি থাকে৷ পুরুষদের ঝোঁক লক্ষ্য করা যায় মাংসের প্রতি৷ অন্যদিকে মেয়েরা মিষ্টিজাতীয় খাবারের লোভ সামলাতে পারেনা অনেক সময়৷

দেখা গেছে, বয়স্কদের চেয়ে অল্পবয়সিরা স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের ব্যাপারে উদাসীন৷ ৬৫ বছরের অধিক বয়সিদের মধ্যে ২০ শতাংশ এবং ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করে৷ অন্যদিকে নিকোটিন ও অ্যালকোহলের প্রতি ঝোঁক এবং তরকারি ও ফলমূলের প্রতি অনীহাও তরুণ বয়সিদের মধ্য বেশি লক্ষ্য করা যায়৷ কোলন শহরের ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডাক্তার ইঙো ফ্রোব্যোজে সমীক্ষাটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সি মানুষদের নিয়েই আমাদের বেশি চিন্তা৷ এই বয়সিরাই সবচেয়ে কম স্বাস্থ্যসচেতন৷''

Deutsche Fußballfans
বয়স্কদের চেয়ে অল্পবয়সিরা স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের ব্যাপারে উদাসীনছবি: AP

এ জন্য বিশেষজ্ঞরা স্কুল কলেজ ও অফিস আদালতের ক্যান্টিনে সুষম খাবার পরিবেশনের ওপর জোর দিচ্ছেন৷ পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর কথা বলছেন তারা৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে এক জন ফিটনেস স্টুডিও বা জিম ও খেলার মাঠ মোটেও পছন্দ করেনা৷ এ জন্য দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মধ্যেই হাঁটাচলা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, আর তা শুরু করতে হবে শিশুকাল থেকেই৷ ফ্রোব্যোজে জানান, ‘‘এ ক্ষেত্রে লন্ডনে এক সুন্দর দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ সেখানে এক ধরনের ওয়াকিং বাস চালু করা হয়েছে৷ এ বাসে করে বাচ্চারা স্কুলে যায়, কিন্তু তিন স্টপেজ আগেই বাচ্চাদের নামিয়ে দেওয়া হয়, বাকি পথটা হেঁটেই যায় তারা স্কুলে৷ বলা যায় সম্পূর্ণ নতুন এক ধারণা৷''

সমীক্ষার একটি ফলাফল বিশেষজ্ঞদের অবাক করেছে৷ আগের অন্যান্য সমীক্ষা থেকে মনে করা হয়েছিল, স্বল্প শিক্ষিতদের চেয়ে উচ্চ শিক্ষিতরাই বুঝি স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষাটি এই ধারণা বদলে দিয়েছে৷ মাধ্যমিক স্কুল পাশ করা কম শিক্ষিতদের কর্মক্ষেত্রে কায়িক শ্রমের কাজ করতে হয় বেশি৷ উচ্চশিক্ষিত অ্যাকাডেমিক পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষ ভাল খাবার খেলেও কর্মক্ষেত্রে কম্পিউটারের সামনে বসেই অনেকটা সময় কাটান৷ তাই সব মিলিয়ে কম শিক্ষিতরাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন বলে দেখা গেছে সমীক্ষার ফলাফলে৷

জার্মানির রাজ্যগুলির মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার দিক দিয়ে মেকলেনবুর্গ ফোরপমার্ন-এর বাসিন্দারা অগ্রগামী৷ এখানকার শতকরা ২০ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন৷ বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে গাড়ি বা বাসের চেয়ে সাইকেলেই চলাফেরা করতেই অভ্যস্ত এই অঞ্চলের বাসিন্দারা৷ এক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছেন স্যাক্সনি আনহাল্ট রাজ্যের লোকজন৷ এই অঞ্চলের ৮ শতাংশেরও কম মানুষ স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখেন৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন