1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাফর পানাহি’র কারাদণ্ড গ্রহণযোগ্য নয় - জার্মানি

২৩ ডিসেম্বর ২০১০

সত্যবাদী, সাহসী, নির্ভীক ইরানি চলচ্চিত্র পরিচালক জাফর পানাহি৷ ইরান-সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ইরানের সামাজিক, রাজনৈতিক দৈন্যদশার স্বরূপ উদ্ঘাটন করেছেন তাঁর বহু ছবিতে৷ এবার তাঁকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/zogW
কারাদণ্ডে দণ্ডিত জাফর পানাহিছবি: DW/Picture alliance

আগামী বছর (১০-২১ ফেব্রুয়ারি ২০১১) ৬১-তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব৷ উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে সাতজন জুরির নাম ইতোমধ্যেই ঘোষিত৷ অন্যতম জুরি হিসেবে নির্বাচিত ইরানি চলচ্চিত্রকার জাফর পানাহি৷ কিন্তু সোমবার তাঁকে ছয় বছরের কারাদণ্ড তো দেয়া হয়েছেই৷ সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা রকমের নিষেধাজ্ঞা৷

জাফর পানাহিকে জেলে প্রেরণ, তাঁর ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপে তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের অধিকর্তা ডীটার কসলিক অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছেন জাফর পানাহির৷ শুধু তিনিই নন, জার্মানিসহ বিশ্বের তাবৎ খ্যাতনামা চলচ্চিত্রকারদেরও একই দাবি৷

এই গ্রেপ্তারি একেবারেই ‘‘গ্রহণযোগ্য'' নয়, বলা হয়েছে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক বিবৃতিতে৷ জার্মানির মানবাধিকার নীতির দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা মার্কুস ল্যোয়েনিং বলেছেন, জাফর পানাহিকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেয়াটা লজ্জাজনক এক ঘটনা৷ এটা গ্রহণযোগ্য নয়৷

২০০৬ সনে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জাফর পানাহি শ্রেষ্ঠ পরিচালকের শিরোপায় ভূষিত হন, সিলভার বিয়ার পান তাঁর ‘অফসাইড' ছবির জন্যে৷ ছবিটি সামাজিক৷ সমাজস্তরে যে মারাত্মক ফাটল ধরেছে, মোল্লাতন্ত্রের রাজনীতি ঢুকেছে, দুই পরিবারের টানাপোড়েনে ছবির কাহিনী বিস্তারিত৷ পুরস্কার প্রাপ্তির পরে, ডয়েচে ভেলের জন্যে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমার ছবিতে রাজনীতিই মুখ্য৷ ইরানের রাজনীতিই শুধু নয়, যে কোনো দেশের মৌলবাদীর বিরুদ্ধে আমার জিহাদ৷ দম-বন্ধ-করা সময়ে বাস করছি আমরা৷কতটা দম বন্ধ, দেখেছেন ছবিতে৷ চরিত্ররা মাঝে-মাঝেই ঘর থেকে বেরিয়ে খোলা মাঠে যায় নিঃশ্বাস নিতে৷ কিন্তু সেখানেও দম বন্ধ হয়ে আসে৷''

আহমেদিনেজাদ-সরকারের অভিযোগ, জাফর পানাহি ইরানের বিরুদ্ধে, প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান ছবিতে৷ তাঁর অপরাধ তাদের কাছে নাকি ক্ষমার অযোগ্য৷

জাফর পানাহিকে ছয় বছরের জন্যে সশ্রম কারাদন্ড দিয়েই ক্ষান্ত নয় আহমেদিনেজাদ প্রশাসন, জেলে থাকাকালীন চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখতে পারবেন না৷ গল্প, নাটক, স্মৃতিকথা এমন কী ডায়েরিও লেখা নিষেধ৷ সংবাদমাধ্যমে কোনো সাক্ষাৎকার কিংবা এক অক্ষর বক্তব্যও নয়৷ নিষেধ অমান্য করলে আরো কঠোর শাস্তি৷ এও বাহ্য৷ আগামী কুড়ি বছর কোনো ছবিও করতে পারবেন না৷ যেতে পারবেন না ইরানের বাইরেও৷

Berlinale 2010 - Preisverleihung
২০০৬ সালে জাফর পানাহি শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কারছবি: picture alliance / dpa

গত পয়লা মার্চ জাফর পানাহিকে তাঁর স্ত্রী, কন্যা এবং আরও কয়েকজন সহ গ্রেপ্তার করা হয়৷ পরে এদের অধিকাংশকেই মুক্তি দেয়া হয়৷ মে মাসে পানাহি বিরাট অঙ্কের টাকার জামিনে ছাড়া পান৷ মার্চ মাসে তাঁর গ্রেপ্তারির নিন্দায় সোচ্চার হয়েছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ, মার্টিন স্করসেজি ও অলিভা স্টোনের মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালকরা এবং বেশ কিছু তরুণ ইরানি চলচ্চিত্রকার৷

জাফর পানাহি বার্লিন, কান, ভেনিস, লন্ডন, লোকার্নো, টরেন্টোসহ বহু চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর ছবির জন্যে পুরস্কৃত৷ সম্মানিত৷ শুরু করেছিলেন টিভির ছবি নির্মাতা হিসেবে৷ পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তমির সহকারী ছিলেন একদা৷ তাঁর প্রথম ছবিই (হোয়াইট বেলুন) ১৯৯৫ সনে

ফ্রান্সের কান উৎসবে পুরস্কৃত৷ ২০০০ সালে তাঁর ছবি ‘সার্কেল' পায় গোল্ডেন লায়ন৷ জাফরের জন্যে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ হলেও ইরান সরকার তার তোয়াক্কা করবে বলে মনে হয় না৷ বরং উল্টো দাপট দেখাতেই তারা অভ্যস্ত৷

প্রতিবেদন: দাউদ হায়দার, বার্লিন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক