1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছেলে না মেয়ে

রিয়াজুল ইসলাম২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯

ছেলে না মেয়ে? বাবা মার কাছে এ প্রশ্নটি অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে৷ বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এখন নবজাতকের জন্মের আগেই এ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যান বাবা-মা৷

https://p.dw.com/p/GzVi
ছবি: Bilderbox

হাসপাতালে নতুন শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তার যত্ন নেয়া৷ তার ওজন মাপা হয় এবং শিশুটি ছেলে না মেয়ে তা নির্ধারণ করা হয়৷ কিন্তু সমস্যা বাধে তখনই, যখন নবজাতক শিশুটির লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায় না৷ অর্থাৎ শিশুটি ছেলে না মেয়ে – তা বোঝা যায় না৷ শিশুটির যৌনাঙ্গ যদি স্পষ্টভাবে ধরা না পড়ে তখন তাকে উভলিঙ্গ বলে চালিয়ে দেয়া হয় – আমাদের সমাজে যাকে হিজড়া নামে ডাকা হয়৷ কেবল আমাদের সমাজেই নয় – পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও হিজড়াদের নিয়ে রয়েছে নানা রকম কুসংস্কার কিংবা মত৷ তবে এ সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন সময় নানা পদ্ধতির আবিষ্কারের চেষ্টা করা হয়েছে৷ যেমনটি জার্মানির রাজধানী বার্লিনের একটি হাসপাতালে বিজ্ঞান ইতিহাসবিদ উলরিকে ক্লোপেল বললেন, পঞ্চাশের দশক থেকে একটি চেষ্টা চালানো হয়েছিলো যে এ ধরনের শিশুদের প্রথম দুই বছরের মধ্যে অপারেশন করে কিংবা হরমোনে পরিবর্তন এনে তাদেরকে একটি লিঙ্গে পরিবর্তন করার৷

উভলিঙ্গ শিশুর কীভাবে জন্ম হয় সেটা আমাদের জানা দরকার৷ নিয়ম অনুযায়ী ২৩ জোড়া ক্রোমোজম রয়েছে – যার মধ্যে এক জোড়া হচ্ছে সেক্স ক্রোমোজম৷ পুরুষের দুটি সেক্স ক্রোমোজম থাকে – এক্স এবং ওয়াই৷ অপরদিকে নারীরও দুটি সেক্স ক্রোমোজম থাকে – এক্স এবং এক্স৷ ২৩ তম জোড়ার মধ্যে ৪৬তম ক্রোমোজমটি যদি এক্স এবং এক্স হয় তাহলে নবজাতক হয় মেয়ে৷ অপরদিকে এক্স এবং ওয়াই ক্রোমোজমের মিলনের ক্ষেত্রে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়৷ কিন্তু এই এক্স-এক্স কিংবা এক্স-ওয়াই ক্রোমোজমের সঙ্গে যদি আরো অন্য কোন ক্রোমোজম মিলে যায় সেক্ষেত্রে দেখা দেয়া বিপত্তি এবং যার পরিণতি নবজাতক শিশুর মধ্যে দুই ধরনের লিঙ্গই দেখা দেয়৷ অর্থাৎ শিশুটি হয়ে থাকে উভলিঙ্গ৷ আবার অনেক সময় শিশুর দেহের বহিরাংশে স্ত্রী যৌনাঙ্গ থাকলেও ভেতরে কিন্তু তা থাকে না৷ যদি শিশুর মধ্যে পুরুষাঙ্গ এবং একইসঙ্গে নারীর যৌনাঙ্গ থাকে তাহলে তাকে বলা হয় হ্যারমাফ্রডিটিজম৷ বিজ্ঞান ইতিহাসবিদ উলরিকে ক্লোপেল জানালেন, শরীরের বাইরের অংশে নারীর যৌনাঙ্গ থাকলেও শরীরের ভিতরে তার বিকাশ ঘটে না৷ যদি শরীরের মধ্যে পুরুষ এবং নারী – উভয়েরই যৌনাঙ্গ থাকে, সেক্ষেত্রে তা হয় হ্যারমাফ্রডিটিজমের পুরোপুরি লক্ষণ৷

এ ধরণের শিশুর ভাগ্য নির্ভর করে শিশু চিকিৎসকের ওপর – যিনি নির্ধারণ করে থাকেন এ শিশুটি ছেলে না মেয়ে৷ এ তথ্য জানিয়েছেন জার্মান ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান রাইটস এর কর্মকর্তা ক্লাউডিয়া লোরেনশাইট৷ তিনি বলেন, এ ধরনের শিশু যদি জন্ম লাভ করে তাহলে জন্মের প্রথম দুই বছরের মধ্যে অপারেশন করে লিঙ্গ সংশোধন করা হয় এবং তাকে ছেলে কিংবা মেয়ে হিসেবে বড় করে তোলা হয়৷ যেহেতু অপারেশন করে নারীর যৌনাঙ্গ তৈরী করা বেশী সহজ, তাই এসব ক্ষেত্রে বেশীরভাগ শিশুকেই মেয়ে হিসেবে চূড়ান্ত পরিচয় দেওয়া হয়৷ এবং এক্ষেত্রে একটি নয় – তারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত এবং তার পরেও অনেকগুলো অপারেশন করতে হয়৷ কিন্তু এসব শিশুর মনে হয়, যে তাদের মধ্যে কোন একটা ত্রুটি রয়েছে, শারীরিক সমস্যা রয়েছে, নিজেদের সঠিক পরিচয়ের অভাব রয়েছে৷ তাদের চারপাশে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হয়৷ এভাবে তাদের অধিকার লংঘন করা হচ্ছে৷ কেবল জার্মানি নয় – আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এসব দেখার কেউ নেই৷

শিশুকালে বাচ্চাদের রোগ বালাইয়ের দিকেই বাবা মায়েদের নজর থাকে বেশী৷ কিন্তু যেসব শিশু ইন্টারসেক্সুয়াল বা উভলিঙ্গ তাদের মনমানসিকতার দিকে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নজর দেয়া হয় না৷ এসব শিশুদের অনেকে বড় হওয়ার পর অপারেশন করিয়ে নিজেদের ছেলে কিংবা মেয়ে বানানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু অনেকেই আবার প্রতারণার শিকার হন৷ যেমনটা হয়েছেন জার্মান ইন্টারসেক্সুয়াল এসোসিয়েশন এর সদস্য ইনস আ ক্রোমিংগা৷ এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি শেষ পর্যন্ত একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম - তবে তা ছিল কিছু ভুল ধারণার ভিত্তিতে৷ আমাকে ডাক্তাররা মিথ্যা বলেছিলেন৷ তাঁরা বলেছিলেন, আমার জরায়ুতে মারাত্মক সমস্যা আছে তাই তা অপারেশন করে সরিয়ে ফেলতে হবে৷ তাই আমি রাজী হয়েছিলাম৷ কিন্তু অপারেশনের সময় দেখা গেলো আমার আসলে কোন জরায়ুই ছিল না – যা ছিল, তা হল পুরুষাঙ্গেরই অংশ এবং তাতেও কোনো সমস্যা ছিল না৷ এরপর ১২ বছর আমি নারী হিসেবে বাঁচার চেষ্টা করি৷ কিন্তু চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র ঘেঁটে যখন জানতে পারি যে আমার সঙ্গে কী করা হয়েছিল, তখন আর আমি নারী হিসেবে বাঁচতে চাই নি৷ এখন আমি হিজড়াদের মধ্যে বাস করি৷

বিশ্বের সব দেশের কোম্পানী গুলোতেই নারী কিংবা পুরুষ হিসেবে চাকরি দেয়া হয়৷ কিন্তু যারা উভলিঙ্গ, তাদের বেলায় কী হবে তা কিন্তু কোথাও বলা নেই৷ ক্রোমিংগার মতে কেউ নারী নাকি পুরুষ – এটি জানতে চাওয়াই মানবাধিকার লংঘনের মধ্যে পড়ে৷ জার্মানির মানবাধিকার কর্মীরা চেষ্টা করছেন উভলিঙ্গের ব্যাপারে মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মনোভাব পরিবর্তনের৷ এসব লোকদের শারীরিক বিষয়গুলোকে সহজভাবে গ্রহণ করতে৷