1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাদের বাগানে সবজি, একতলায় মাছের চাষ

১৪ জানুয়ারি ২০১২

ইংরেজিতে বলে ‘‘আর্ভিং গার্ডেনিং’’, অর্থাৎ শহরেই ছাদে, মাঠে, বারান্দায়, যেখানে পারো ফল কি সবজি কি স্যালাড ফলাও৷ বার্লিনে এবার বিশ্বের বৃহত্তম ‘ছাদের বাগান’ তৈরি হতে চলেছে৷

https://p.dw.com/p/13jef
ফাইল ছবিছবি: dapd

ধারণাটা হল: দূর গ্রামাঞ্চল থেকে ফলমূল, শাকসবজি আমদানি না করে, শহরেই যদি তার একাংশ উৎপাদন করা যায়, তাহলে কেমন হয়? ইট-কাঠ-পাথরের শহরও তা'তে কিছুটা সবুজ হবে৷ সেই থেকেই জার্মান গবেষণা মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্প৷ পরিকল্পনা হল, রাজধানী বার্লিনে একটি ফাঁকা পড়ে থাকা সিরার কারখানার ছাদে বিশ্বের বৃহত্তম অর্গানিক সবজির বাগান তৈরি করা৷

আপাতত বার্লিনের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা করে দেখছেন, ধারণাটা বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব কিনা৷ তাদের গবেষণাগার হল একটি বড়োসড়ো জাহাজের কনটেইনার, ঐ পোড়ো কারখানার প্রাঙ্গণেই রাখা৷ গত গ্রীষ্মে এই কনটেইনারের ছাদে সবজি ফলেছিল; নীচে রাখা বড় বড় গামলার জলে চলেছিল মাছের চাষ৷ একত্রে সবজি এবং মাছের চাষ - এই পদ্ধতিটির বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে ‘‘অ্যাকোয়াপনিক''৷ বার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ বছর বয়সি ছাত্র টোবিয়াস ভিমার জানালেন:

‘‘এটা হল উদ্ভিদ এবং মাছের চাষের একটা মিশ্রণ৷ মাছেরা যে সব নিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর পদার্থ জলে ছাড়ে, উদ্ভিদরা সেগুলোই শুষে নিয়ে জলটাকে আবার পরিষ্কারও করে৷''

কিন্তু এ'ভাবে গজানো সবজিতে কিন্তু কোনো মেছো গন্ধ থাকে না, ঠাট্টা করে বললেন ভিমার৷ ওদিকে যে সিরার কারখানার ছাদে মূল প্রকল্পটির ব্যবস্থা হবে, দক্ষিণ বার্লিনের সেই লাল ইটের কারখানা-বাড়িটি কে জানে কোন সুদূর অতীতের সাক্ষী৷ ওপর-নীচ মিলিয়ে মোট ৭ হাজার বর্গমিটার, মানে প্রায় একটা ফুটবল মাঠের সমান৷ তার মধ্যে ৪ হাজর বর্গমিটার হল ছাদ, বাকিটা নীচের হল আর ঘরগুলো মিলিয়ে৷ ছাদে হবে গ্রিনহাউস তৈরি করে সবজির চাষ; নীচের ঘরগুলোতে চৌবাচ্চায় মাছের চাষের ব্যবস্থা করা হবে৷

Ausstellungstipps Neuer Skulpturengarten auf MoMA Dach in San Francisco
বার্লিনে বিশ্বের বৃহত্তম ‘ছাদের বাগান’ তৈরি হতে চলেছে (ফাইল ছবি)ছবি: Jensen Architects

গোটা প্রকল্পটি এখনও ফিজিবিলিটি স্টাডি'র পর্যায়ে: অর্থাৎ সেটা সত্যিই বানানো সম্ভব কিনা, করলেও তা বাজারের হিসেবে সফল হবে কিনা, ইত্যাদি৷ প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ‘‘ফ্রিশ ফম ডাখ'', অর্থাৎ ‘ছাদ থেকে টাটকা'৷ প্রকল্পের মার্কেটিং বা বাণিজ্যিক দিকটা দেখছেন ক্রিস্টিয়ান এশটারনাখ্ট্৷ ২০১৩ সালে প্রকল্প শুরু হওয়ার কথা৷ প্রকল্পের খরচ পড়বে প্রায় ৫০ লাখ ইউরো৷ এখনও বিনিয়োগকারীদের খোঁজ চলেছে৷ তবে এশটারনাখ্ট্ যথেষ্ট আস্থা রাখেন:

‘‘পুরোটাই আমাদের মতে অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর, কেননা, বলতে কি, অর্গানিক মাছের খাবার দিয়ে অর্গানিক মাছের চাষ হবে৷ এ' ছাড়া আমরা বাইরে থেকে কিছুই ঢোকাব না৷ কোনো সার নয়৷ মাছেদের জন্য কোনো ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিকের তো প্রশ্নই ওঠে না৷ এটা একটা পুরোপুরি নির্মল প্রণালী৷ আমাদের মাছেরা হল সুখি মাছ৷''

প্রথাগত মাছের চাষে এক কিলো মাছ উৎপাদন করতে মোট এক হাজার লিটার পানি লাগে৷ ‘ছাদ থেকে টাটকা' প্রকল্পে এক কিলো মাছ উৎপাদন করতে লাগবে মাত্র ২০০ লিটার পানি৷ গ্রিনহাউসে যে শাকসবজির চাষ করা হচ্ছে, তারা পানিটাকে অনবরত ফিল্টার করার ফলে অনেক জল বেঁচে যায়৷ আবার এই ছাদের খামারের শাকসবজি, মাছ, সবই ঐ কারখানার প্রাঙ্গণে একটি দোকানে থেকে বিক্রি করা হবে৷ কাজেই ট্রাক বোঝাই করে দূরদূরান্তে মাল পাঠানোর ধকল, খরচ ও পরিবেশের ক্ষতি, তিন থেকেই পরিত্রাণ৷ ভিমার বলেন:

‘‘আমরা যদি বার্লিনের উদাহরণ নিই, এখানে পোড়ো জমির তো কোনো অভাব নেই৷ যথেষ্ট সম্ভাবনা, যথেষ্ট জায়গা আছে৷ কতো পড়ে থাকা জমি, কতো ভাঙাচোরা বাড়ি, যেখানে গ্রিনহাউস তৈরি করা যায় এবংএই পন্থায় আঞ্চলিক পণ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যায়৷''

‘ছাদ থেকে টাটকা' এক সবুজ ভবিষ্যতের স্বপ্নও হতে পারে, আবার নিছক ভ্রমও হতে পারে৷ ২০১২ জুড়ে পরীক্ষা চলবে, প্রকল্পটির বাস্তবতা ও কার্যকরিতা নির্ধারিত হবে৷ তারপরেও থাকবে বিনিয়োগকারীরা আসবে কিনা, সেই প্রশ্ন৷ শেষমেষ ২০১৩ সালে বার্লিনের ঐ কবে লাটে উঠে যাওয়া কারাখানার ছাদে গড়ে উঠবে বিশ্বের বৃহত্তম ‘ছাদের বাগান'৷

প্রতিবেদন: নাদিন ভয়চিক / অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য