চ্যালেঞ্জের মুখে এশিয়ার এয়ারলাইন্স শিল্প
২৬ আগস্ট ২০০৮এক সময় বলা হতো, কোন কিছুতেই দমবে না এশিয়ার উদীয়মান এয়ারলাইন্স ব্যবসা৷ এগারই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা, ইন্দোনেশিয়ার পযর্টন স্বর্গ বালি দ্বীপে বোমা, সার্স ভাইরাসের উপদ্রব, টিকিটের দাম বৃদ্ধি এমনকি ২০০৪ এ স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সুনামি কোন কিছুতেই খুব বেশিদিন থমকে থাকেনি এশিয়ান এয়ারলাইন্সগুলো৷
তবে এবার তেলের দামে লাগামহীন ঊর্ধগতি আর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাবের কারণে এয়ারলাইন্স শিল্পে চলছে দুর্যোগ৷ সত্যটি স্বীকার করে নিলেন খোদ অ্যাসোসিয়েশন অব এশিয়া প্যাসিফিক এয়ারলাইন্সের মহাপরিচালক এন্ড্রু হার্ডম্যান৷
গত বছরের চেয়ে এ বছর তেলের দাম ব্যারেল প্রতি বেড়েছে গড়ে ৭৩ ডলার৷ চলতি বছরের মাঝামাঝিতে এই দাম ছিল দেড়শ ডলার ছুঁই ছুঁই৷ আর তারই চড়া মাশুল গুণছে এশিয়ার এয়ারলাইন্সহগুলো৷ এ বছর তাদের খরচ বেড়েছে ৪৫ ভাগ৷ ২০০৮ এর প্রথমভাগেই প্রায় ২৮ কোটি ডলার লোকসান হয়েছে থাই এয়ারওয়েজের৷ ৫ বছর রমরমা ব্যবসার পর লোকসান ঠেকাতে ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে চীন৷ এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সাড়ে ১৫ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবসা সফল বিমান সংস্থা সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের৷ ভারতে এই জুলাইতে যাত্রীসংখ্যা কমেছে ১৩ শতাংশ৷ দেশটির বড় ৩টি বিমানসংস্থা এ বছর মোট গচ্ছা দিয়েছে প্রায় ৯৪ কোটি ডলার৷ তাদের আশংকা, চলতি অর্থবছর ভারতের এয়ারলাইন্স শিল্পের মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২শ কোটি ডলার৷ যা গোটা বিশ্বের এভিয়েশন ব্যবসার ক্ষতির ৩ ভাগের এক ভাগ৷
এ অবস্থায় কোন কোন দেশে বিমান যাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও এয়ারলাইন্সগুলো দেখছে না লাভের মুখ৷ টিকে থাকতে তাই বাধ্য হয়েই নানা উপায় খুঁজছে বিমান সংস্থাগুলো৷ বাড়ানো হচ্ছে বিমান ভাড়া৷ কর্মী ছাঁটাই করছে কেউ কেউ৷ আবার কম লাভজনক রুটে ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে কোন কোন সংস্থা৷
প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণায় দেখা গেছে, বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইট কমিয়ে দেয়ায় আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বিমানবন্দর এবং হোটেলব্যবসারও৷
তেলের খরচ বাঁচাতে এবার বিমানের ওজন কমাতে মনোযোগ দিচ্ছে বিমান সংস্থাগুলো৷ লাঞ্চে দেয়া হচ্ছে হাল্কা খাবার৷ ওয়াইন, বিয়ার, কোমল পানীয় এমনকি স্রেফ পানির পরিমাণও অল্প৷ শুধু হাল্কা চামচ দিয়েই প্রতি ফ্লাইটে আড়াই কেজি ওজন কমাচ্ছে জাপান এয়ারলাইন্স৷ আর তাদের কার্গো শাখায় গ্লাস ফাইবার কন্টেইনার ব্যবহারের কারণে ওজন বাঁচছে ২৬ কেজি করে৷
জাপানের অল নিপ্পন এয়ারওয়েজের কৌশলটিও বেশ৷ কার্বন ফাইবারের ছোট আসন বানিয়ে বছরে একেকটি ফ্লাইটে ৪০ হাজার লিটার তেল বাঁচানোর পদক্ষেপ নিয়েছে তারা৷ ওজন কমাতে অল্প পাতার ম্যাগাজিন রাখা হচ্ছে বিমানে৷ পড়ুয়াদের এতে বিরক্ত হবারই কথা!
এসব কৌশলের সাথে নতুন বিষয় যোগ করেছে ভারতের কিংফিশার৷ এরা ওয়াশরুমের জন্য ট্যাংকেই পানি তুলছে কম৷
তবে ক্রমেই বাড়তে থাকা তেলের দামের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এশিয়ার বিমান সংস্থাগুলো কতটুকু সফল হবে তাই এখন দেখার বিষয়৷