1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘চীনকে দিয়েই গভীর সমুদ্রবন্দর’

সমীর কুমার দে, ঢাকা৭ জুন ২০১৪

বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে দিয়েই নির্মাণ করা হবে গভীর সমুদ্রবন্দর৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের আগেই এই ঘোষণাটি এসেছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীও বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷

https://p.dw.com/p/1CDyN
Schiff Baosteel Emotion
ছবি: picture-alliance/dpa

ছয় দিনের এক সরকারি সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার চীনে গেছেন৷ আগামী ৯ই জুন বেইজিংয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শীর্ষ পর্যায়ের এক বৈঠকের পর, গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে ঘোষণাটি করার কথা রয়েছে৷ চীন শুরু থেকেই বলে আসছে যে, তাদের দিয়ে এই বন্দরটি নির্মাণ করা হলেই শুধুমাত্র তারা এই খাতে আর্থিক সহযোগিতা করবে৷

কয়েকদিন আগে মূল পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজের জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে চীনা প্রতিষ্ঠান ‘চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড'-কে কার্যাদেশ দেয়া হয়৷ চীনের এই কোম্পানি ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকায় সেতুটি নির্মাণের দরপত্র দাখিল করেছে বলে খবর৷ আগামী জুন-জুলাই মাসে কাজ শুরু হওয়ার কথা৷ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণকাজ চার বছরে শেষ হবে, অর্থাৎ ২০১৮ সালে এই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলবে৷

গত বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ‘চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড'-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড' আগ্রহ দেখিয়েছে৷ এর বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড' এবং নেদারল্যান্ডসের ‘রটারডাম পোর্ট'-ও প্রস্তাব দিয়েছিল৷ তবে রটারডাম পোর্ট এই বন্দর নির্মাণে আগ্রহ দেখালেও, খোদ তাদের বন্দরটিই নির্মাণ করেছে ডিপি ওয়ার্ল্ড৷ এছাড়া নতুন করে সমীক্ষা পরিচালনায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নেদারল্যান্ডস তেমন আগ্রহী ছিল না৷ তার ওপর তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাবটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আকর্ষণীয়ও মনে হয়নি৷ তাই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি তিনটি প্রস্তাব বিবেচনার পর চীনের প্রস্তাবের পক্ষে মত দেয়৷

Bangladesch Zyklon Mahasen Golf von Bengalen
চট্টগ্রাম বন্দরছবি: Reuters

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান বলেছেন, ‘‘চায়না হারবার-এর গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের অভিজ্ঞতা আছে৷ তাই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করানোর সিদ্ধান্তটা অত্যন্ত ইতিবাচক৷''

চীনের আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, ‘‘চীনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা গ্রহণের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে৷ কারণ, তারা কোনো না কোনো বাণিজ্যিক শর্তে এ ধরনের ঋণ দিতে চায়৷ শুরুতে সহযোগিতার প্রক্রিয়া শিথিল থাকলেও পরে ঋণচুক্তিতে নানা রকম শর্ত জুড়ে দেয়৷ কাজেই দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সর্বোচ্চটা আদায়ের জন্য এক্ষেত্রে দর-কষাকষি করা বাঞ্ছনীয়৷ সুতরাং দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞকে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পদ্মা সেতু ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে৷''

সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীন এক বছর আগেই তাদের অর্থায়নে এই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে সমীক্ষা শেষ করে৷ পাশাপাশি বন্দর নির্মাণে অর্থায়নের বিষয়টিও উল্লেখ করে আগ্রহী চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার৷ এ সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীন এই কাজটি পেলে প্রতিবেশী ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা নিয়ে বেশ কিছুটা সময় অপেক্ষায় থেকেছে বাংলাদেশ৷ কারণ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে চীনকে এই সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ দেয়ার ব্যাপারে বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নেয়া হলে শুরুতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব ইতিবাচক ছিল না৷ ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের গোয়াদার এবং শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে চীন৷

এই প্রেক্ষাপটে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাববলয় বিস্তৃত হওয়া নিয়ে কৌশলগত কারণে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের অস্বস্তি ছিল৷ এ বাস্তবতায় চীনকে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের দায়িত্ব দেয়ার আগে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এই কাজে আগ্রহী কিনা, সেটাও তাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে৷ দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মতো প্রকল্পে তারা যুক্ত হয় না৷

এদিকে শুক্রবার চীনে পৌঁছেই ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে দ্বিতীয় ‘চীন-সাউথ এশিয়া এক্সপোর' উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷ সেখানে তিনি চীনের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘‘এতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বেড়ে এই অঞ্চলের দেশগুলোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরো গতিশীল হবে৷''

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর (বিসিআইএম-ইসি) বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন দ্বার খুলে দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী৷ ইউনান প্রদেশের গর্ভনর লি চেহাঙ্গের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নেপালের প্রধানমন্ত্রী, মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট, লাওসের উপ-প্রধানমন্ত্রী, শ্রীলঙ্কার ভাইস স্পিকার ও সার্কের মহাসচিব বক্তব্য দেন৷ ১১লা জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার কথা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য