1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিলি’তে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন

২২ জুলাই ২০১১

চিলি’তে বিশাল আকারের এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ বেড়ে চলেছে৷ বিশাল মাপের এই উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে৷

https://p.dw.com/p/121WH
এ ধরণের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছেছবি: CC/kthypryn

উন্নয়ন বনাম জনস্বার্থ

উন্নয়নের স্বার্থে জমি অধিগ্রহণ ভারত, বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্বে অত্যন্ত স্পর্শকাতর এক বিষয়৷ কোথাও জোর খাটিয়ে সাধারণ মানুষের জমি কেড়ে নেওয়া হয়, কোথাও বা আইনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের বদলে মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়৷ সব ক্ষেত্রেই দাবি করা হয়, বৃহত্তর সমাজের স্বার্থেই কোনো প্রকল্প গড়ে তোলা জরুরি৷ পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মতো সুদূর দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ চিলি'তেও এমন এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে এমন বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷ গর্জে উঠেছে সুশীল সমাজ৷ পাটাগোনিয়া অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে কারো তেমন আপত্তি নেই৷ তাদের মূল সংঘাত প্রকল্পের মালিকের সঙ্গে৷ তাছাড়াও জড়িয়ে রয়েছে নানা জটিলতা৷ ঘটনাটি দক্ষিণ অ্যামেরিকায় ঘটলেও আমাদের আশেপাশের অনেক ঘটনার সঙ্গে তার মিল পাওয়া যেতে পারে৷

চিলি'তে বিতর্কিত প্রকল্প

চিলি'র পাটাগোনিয়ায় গড়ে তোলা হচ্ছে বিশাল মাপের এই বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প৷ পাস্কা ও বাকার নদীর গতিপথে মোট ৫টি বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে৷ গোটা দেশের বিদ্যুতের চাহিদার এক-চতুর্থাংশ যোগান দেবে এই প্রকল্প৷ কিন্তু এত বড় আকারের নির্মাণের ফলে পরিবেশের কতটা ক্ষতি হচ্ছে, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না ইঞ্জিনিয়াররা৷ তাদেরই একজন বললেন, ‘‘আমরা ৬,০০০ হেক্টরেরও কম এলাকা প্লাবিত করছি এবং ২,৭০০ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি৷ এই অনুপাতই দেখিয়ে দিচ্ছে যে আমাদের এই প্রকল্প পৃথিবীর সবচেয়ে কার্যকর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে চলেছে৷''

Patagonia
এই সুন্দর পাটাগোনিয়াতে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে কার্যকর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে চলেছে’ছবি: Rodrigo Arias

‘হিদ্রোআয়সেন' নামের এই বিশাল মাপের প্রকল্পের আসল ভিত্তিই হলো প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ হাই-ভোল্টেজ বিদ্যুতের লাইন৷ তামার তৈরি এই তারের সাহায্যেই দেশের দক্ষিণে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ রাজধানী সান্তিয়াগো ও উত্তরের খনি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে৷ বিশ্বের অন্য কোথাও এখনো পর্যন্ত এত দীর্ঘ বিদ্যুতের লাইন নেই৷ এখনো নির্মাণের ছাড়পত্র না পাওয়া সত্ত্বেও শুধু প্রকল্পের প্রচারের কাজেই প্রায় ২০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে৷ চিলির বেড়ে চলা বিদ্যুতের চাহিদার দোহাই দিয়ে প্রকল্পের নেতারা ‘বিকল্পহীন' এই উদ্যোগ কার্যকর করার পথে এগিয়ে চলেছেন৷ স্বয়ং প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনিয়েরার সঙ্গে প্রকল্পের প্রধানের দহরম-মহরম সম্পর্ক রয়েছে৷

জোরালো প্রতিরোধ

প্রকল্পের বিরোধীরা এই যুক্তি মানতে নারাজ৷ হাজার-হাজার মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে পথে নেমেছে৷ তাদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি৷ দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ বিরোধীদের সমর্থন করছে৷ ‘বাঁধহীন পাটাগোনিয়া' আন্দোলনের মুখপাত্র পাত্রিসিয়ন রদরিগেস বলেন, ‘‘এ এমন এক উন্নয়নের মডেল, অনেক নাগরিকই যা আর চায় না৷ তারা সামাজিক প্রতিবাদের এক মঞ্চ খুঁজে পেয়েছে৷ তারা শুধু অন্ধের মতো প্রবৃদ্ধি আর অপচয়ের পেছনে দৌড়চ্ছে না৷ তারা চায় পরিবেশের সুরক্ষা, ভাতৃত্ববোধ, নির্ভেজাল আনন্দ৷ কিন্তু কেউ সেকথা শুনতে রাজি নয়৷ এটা নব্য-উদারপন্থী নীতির বিরুদ্ধেও একটা বিদ্রোহ৷ প্রায় ৩০ বছর ধরে এই ধারাই চলে আসছে৷''''

18.07.2006 projekt zukunft fragezeichen
এই ছবিটিকেই খুঁজছেন আপনি৷ ছবিটির তারিখ 22-24.07.2011 এবং কোড: 7195 পাঠিয়ে দিন bengali@dw-world.de ঠিকানায় অথবা এসএমএস করুন 0088 0173 030 2205, ভারত: 0091 98309 97232 নম্বরে৷ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জিততে পারেন আকর্ষণীয় সারপ্রাইজ গিফট…ছবি: DW-TV

তবে শুধু পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতাই জনসাধারণের ক্ষোভের একমাত্র কারণ নয়৷ দেশে স্বৈরতন্ত্রের অবসানের প্রায় দুই দশক পরেও অর্থনীতির ক্ষেত্রে অতীতের ভুত এখনো দূর হয় নি৷ স্বৈরাচারী শাসক পিনোচেট'এর পদত্যাগের মাত্র ১০ দিন আগে প্রস্তাবিত বাঁধ প্রকল্পের জলের সত্ত্ব বিতরণ করা হয়েছিল৷ ঘণ্টায় প্রায় ৩,৩০০ কিউবিক মিটার জলের উপর অধিকার পেয়েছিল এমন সব মহল, যারা সেসময়কার শাসক শ্রেণীর ঘনিষ্ঠ ছিল৷ ‘এন্ডেসা' নামের সেই কোম্পানি আজ ইটালির বিশাল এক জ্বালানি কোম্পানির মালিকানায় চলে গেছে৷ তারা জোট বেঁধেছে চিলির ‘কলবান' কোম্পানির সঙ্গে, যার নিয়ন্ত্রণ প্রভাবশালী মাটে পরিবারের হাতে৷ এই দুই কোম্পানি দেশের বিদ্যুতের বাজারের অর্ধেকেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে৷

মুনাফার লোভ

চিলির সরকার জ্বালানি সংক্রান্ত কোনো স্পষ্ট নীতি গ্রহণ করার বদলে হাত গুটিয়ে বসে আছে৷ ফলে বেসরকারি সংস্থাগুলির মুনাফার কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে সমালোচকরা মনে করেন৷ তাদের প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত যদি ‘হিদ্রোআয়সেন' প্রকল্পের রূপায়ণ না ঘটে, তখন কী হবে? কার জন্য, কী কারণে কতটা জ্বালানি উৎপাদন করা হবে এবং তার মূল্যই বা কী হবে, রাষ্ট্রকে জ্বালানি নীতির মাধ্যমে তার জবাব স্থির করতে হবে৷ তাছাড়া চাহিদা মেটাতে শুধু বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, দক্ষতার সঙ্গে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করেও চাহিদা কমানো সম্ভব বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন৷ চিলির আতাকামা মরুভূমিতে প্রায় সারা বছর বিশাল পরিমাণ সৌর-বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব৷ প্রায় ৪০,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রতট ও অন্যান্য অনেক সম্পদ কাজে লাগিয়েও বিকল্প পথে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব৷ কিন্তু সমস্যা হলো, বড় বড় কোম্পানিগুলি শুধু নিজেদের মুনাফার লোভে বড় প্রকল্পে আগ্রহী৷ বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকেন্দ্রীকরণে তাদের তেমন আগ্রহ নেই৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক