1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিনির বিকল্প

২২ সেপ্টেম্বর ২০১২

বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫ কোটি মানুষ চিনির বিকল্প হিসাবে স্টেভিয়া ও এর নির্যাস কাজে লাগায়৷ কিন্তু সনাতন চিনির স্থান দখল করতে পারেনি এই উদ্ভিদটি এখনও৷ এই উদ্ভিদটির পক্ষে ও বিপক্ষে চলছে তর্ক ও বিতর্ক৷

https://p.dw.com/p/16Cdl
Reformhaus in Menden (Sauerland), 2012, das Stevia-Produkte verkauft. Stevia ist eine Pflanze aus Südamerika, die 40 mal süßer als Zucker ist, nicht dick macht und keine Karies verursacht. In Deutschland sind Inhaltsstoffe seit Dez. 2011 zugelassen. Bis dahin gab es Stevia nur in Reformhäusern. *** Copyright: Solveig Flörke, DW August 2012
ছবি: DW/S.Flörke

মিষ্টান্ন শিল্প ফেডারেশনের মুখপাত্র সোভেইগ শ্নাইডার জানান, খাদ্যদ্রব্যে চিনির আধিপত্য রয়েছে আজও৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে বেক করা খাদ্যদ্রব্যের জন্য স্টেভিয়া ব্যবহারের অনুমোদন মেলেনি এখনও৷ কেক প্রস্তুত করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের চিনির প্রয়োজন হয়, সেটা পূরণ করা স্টেভিয়া দিয়ে সম্ভব নয়৷ তবে লজেন্স ও চুয়িংগামের জন্য স্টেভিয়া উপযোগী৷

স্টেভিয়া ব্যবহার করে নানা রকম খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে এখন পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে৷ পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলিও এগিয়ে এসেছে৷ সেই ২০০৭ সালে কোকাকোলা সুইটনার্স-এর বিকল্প হিসাবে স্টেভিয়া ব্যবহার করেছে৷ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও অ্যামেরিকায় স্টেভিয়া মিশ্রিত লেমোনেড পাওয়া যায়৷ প্রতিদ্বন্দ্বী পেপসিও এব্যাপারে পিছিয়ে থাকেনি৷ তার পানীয়তে মেশাচ্ছে এই উদ্ভিদের নির্যাস৷ ব্রাজিলের অধ্যাপক সিলভিয়ো ক্লাউডিও দা কস্তা মনে করেন, স্টেভিয়া ভোজ্যপণ্যের বাজারে এক বিপ্লব আনতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি গ্লাইকোসাইড, বিশেষ করে রেবাউডিয়োসাইড'এর বিস্ময়কর গুণাগুণের কথা জানি৷ ২৫ বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি আমি৷ এটি একটি প্রাকৃতিক পদার্থ, যাতে ক্যালরি নেই, দন্তরোগের ঝুঁকিও কম৷''

এখন এগিয়ে চীন

ব্রাজিলই হল প্রথম পশ্চিমা দেশ, যা বাণিজ্যিক ভাবে স্টেভিয়ার চাষাবাদ শুরু করে এবং এটি যে ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ তাও প্রমাণ করতে পারে৷

ব্রাজিলের অঙ্গরাজ্য পারানায় এক সময় বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্টেভিয়া কৃষিখেত তৈরি করা হয়েছিল৷ কিন্তু এর উত্পাদন ছিল বেশ ব্যয়সাপেক্ষ৷ যে কারণে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হয়নি উত্পাদনকারীদের৷ এখন চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্টেভিয়া উত্পাদনকারী দেশ৷ বিশ্বের ১০ শতাংশ স্টেভিয়া উত্পাদন করে দেশটি৷ এশিয়াতে ৭০-এর দশকের প্রথম দিকে এই উদ্ভিদ পরিচিতি লাভ করে এবং তখন থেকে বাণিজ্যিক ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে এটিকে৷

Stevia 15695393 Fotolia ED: 23.8.12
স্টেভিয়া গাছছবি: Fotolia/emer

১০০ গ্রাম স্টেভিয়া ৪০ কিলো চিনির সমান

এই উদ্ভিদটিতে স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর এমন কিছু চোখে পড়েনি৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার স্টেভিয়া সমর্থকরাও এই উদ্ভিদের কয়েকশ বছরের ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন, যাতে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই৷ কিন্তু তবুও ইউরোপীয় ইউনিয়নে স্টেভিয়াকে পুরোপুরি ছাড়পত্র দিতে দ্বিধা করা হচ্ছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাগারে ৮০ ও ৯০ এর দশকে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে স্টেভিয়াতে এক ধরনের পদার্থ পাওয়া গেছে, যা ক্যানসার উদ্দীপক৷ অ্যামেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও এ কারণে স্টেভিয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন৷

স্টেভিয়াকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে

বেলজিয়ামের ল্যোভে শহরের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির উদ্ভিদ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের প্রফেসর ইয়ান গ্যোন্স এই প্রসঙ্গে জানান, শুধু চিনির লবিই যে স্টেভিয়ার অগ্রযাত্রায় অসুবিধায় পড়বে তাই নয়, ক্ষতির সম্মুখীন হবে রাসায়নিক সুইটনার্স-এর উত্পাদকরাও৷ ভোক্তারা চান প্রাকৃতিক সুইটনার্স৷ প্রফেসর গয়েন্স ১৫ বছর ধরে স্টেভিয়ার অনুমোদনের বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন৷ সমালোচনার সুরে তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ভোজ্যপণ্য আইন খাদ্যদ্রব্যের নিরাপত্তার যুক্তি তুলে ভাল পণ্য বাজার থেকে দূরে রাখছে৷ খাদ্যদ্রব্যের নিরাপত্তাকে সত্যি সত্যি গুরুত্বপূর্ণ দিতে হলে মিষ্টি জাতীয় অনেক পদার্থ নিয়েই পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে৷ আমি প্রায় নিশ্চিত যে এই সবে ক্যানসার উদ্দীপক পদার্থ পাওয়া যাবে৷''

ডাব্লিউএইচও-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন৷ বিশ্বে চিনির ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১৫০ টন৷ অর্থাৎ মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বিক্রি হয় ৬০ বিলিয়ন ইউরোর মত৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও ইউরোপীয় চিনি উত্পাদনরীদের ভবিষ্যৎ যে উজ্জ্বল তা বলা যায় না৷ ব্রাজিলের মত কৃষিপ্রধান দেশগুলি সস্তায় আখ চাষ করতে পারে৷ বাজারে স্টেভিয়ার অবাধ বিচরণ হলে ইউরোপীয় চিনি উত্পাদনকারীদের আরো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে৷ এই আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের৷ প্রফেসর গ্যোন্স'এর দৃঢ় বিশ্বাস, তামাক লবির মত চিনি লবিও এক্ষেত্রে দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে৷ চিনির বাজারে ভাল কোনো দ্রব্যের অনুপ্রবেশ তাদের সহ্য হচ্ছে না৷

প্রমাণ ও সময়সাপেক্ষ

জার্মান বিজ্ঞানী ও স্টেভিয়া বিশেষজ্ঞ উডো কিনলে অবশ্য এই ধরনের কূটকৌশলের ধারণাটা ঠিক নয় বলে মনে করেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘কোথাও একটিও প্রমাণ নেই যে, চিনি ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে সক্রিয় হয়েছেন৷ এটা একটা ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব৷''

কোনো ভোজ্যপণ্যের অনুমোদন পেতে হলে আগে জানতে হবে স্বাস্থ্যের ওপর এটির কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা৷ আর প্রক্রিয়াটা প্রমাণ ও সময় সাপেক্ষ৷ অন্যদিকে ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে স্টেভিয়া নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ এক ব্লগার লিখেছে, ‘‘কৃত্রিম সুটনার্সের মতই স্টেভিয়ার স্বাদ বাজে৷ আমার কাছে চিনির বিকল্প হতে পারবে না এটি৷''

বাস্তবিকই স্টেভিয়া মেশানো কোনো মিষ্টি খাওয়ার পর একটা তিতকুটে স্বাদ জিভে লেগে থাকে, যেটা খাবারের সুস্বাদকেও অনেকটা মাটি করে দেয়৷ আর এই জায়গাটিতেই রয়েছে স্টিভিয়া সমর্থকদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ বিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছেন, এই উদ্ভিদের স্বাদ চিনির কাছাকাছি আনতে৷

প্রতিবেদন: সোলভেইগ ফ্ল্যোরকে/আরবি

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য