গ্রিনপিস: রুখে দাঁড়ানোর ইতিহাস
রাশিয়ার একটি তেল প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় কয়েকজন গ্রিনপিস অ্যাক্টিভিস্ট এখন কারাবন্দি৷ পরিবেশ বাঁচাতে গত চল্লিশ বছর ধরে লড়াই করছে গ্রিনপিস৷ এই লড়াই করতে গিয়ে প্রায়ই আইনি জটিলতায় পড়ছে তারা৷
অ্যাক্টিভিস্টরা কারাবন্দি
আর্কটিকে রাশিয়ার একটি তেলের রিগের উপর উঠতে চেয়েছিলেন গ্রিনপিসের অ্যাক্টিভিস্টরা৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি৷ বরং পুলিশ আটক করেছে বেশ কয়েকজনকে৷ তারা এখন মুরমান্সকে বন্দি আছেন৷ রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ গ্রিনপিস অ্যাক্টিভিস্টসহ বিশ জনের বিরুদ্ধে ‘সংঘবদ্ধ জলদস্যুতার’ অভিযোগ এনেছে৷ গ্রিনপিস বেশ কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন তেল কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াই করছে৷ এবং এক্ষেত্রে তাদের সাফল্যও অনেক৷
দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবাদ
১৯৯৫ সালের ৩০ এপ্রিল ত্রিশজনের মতো গ্রিনপিস অ্যাক্টিভিস্ট নর্থ সি’তে অবস্থিত ব্রান্ট স্পার তেল প্লাটফর্মের উপরে ওঠে৷ তেল কোম্পানি শেল একটি তেলের রিগ সেখানে ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিল৷ তবে প্রতিবাদের কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি৷ ১৯৯৮ সালে নর্থ সি’র সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন দেশ বাতিল করা তেলের রিগ শুধুমাত্র ভূমিতে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়৷
গ্রিনপিসের জন্মকথা
১৯৭০-৭১ এর দিকে আলাস্কার দ্বীপ আমচিটকায় পারমাণবিক পরীক্ষা করতে চেয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেসময় প্রতিবাদকারীরা নিজেদের ‘গ্রিনপিস’ হিসেবে আখ্যা দেয় এবং এই নামের একটি জাহাজ নিয়ে পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত অঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টা করে৷ তাদের সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছিল, কিন্তু নামটি থেকে যায়৷ বর্তমানে গ্রিনপিস বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত পরিবেশ সংগঠন৷
সাউথ সিতে বিপজ্জনক প্রতিবাদ
গ্রিনপিসের অ্যাক্টিভিস্টরা অতীতে বারংবার জানপ্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে৷ ১৯৭৩ সালে সাউথ প্যাসিফিকে ফ্রান্সের পারমাণবিক পরীক্ষার প্রতিবাদ করার সময় সেদেশে সেনাদের সঙ্গে বিবাদে জড়ায় গ্রিনপ্রিস সমর্থকরা৷ সেসময় সেনাদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে৷
নিমজ্জিত জাহাজ এবং মৃত্যু
আশির দশকেও পারমাণবিক পরীক্ষার প্রতিবাদে আন্দোলন অব্যাহত রাখে গ্রিনপিস৷ ১৯৮৫ সালে নিউজিল্যান্ডে সংগঠনটির জাহাজ রেইনবো ওয়ারিয়র ডুবে যায়৷ এক ফরাসি গুপ্তচর জাহাজটির নীচে ফুটো করে দিয়েছিল৷ সেই ঘটনায় গ্রিনপিসের আলোকচিত্রী ফার্নান্ডো পিরিরা পানিতে ডুবে যান৷
বিতর্কিত ক্যাম্পেইনের ইতি
সেই সত্তরের দশক থেকে গ্রিনপিস শিশু সীল মাছ লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে৷ তারা স্প্রে পেইন্ট ব্যবহার করে সীলের চামড়া শিকারীদের জন্য গুরুত্বহীন করে ফেলতো৷ এখন অবশ্য সীল নিধন বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে সংগঠনটি৷ এখন গ্রিনল্যান্ডের শিকারীরা - যারা বিলুপ্তির হুমকিতে নেই এমন বয়স্ক প্রাণী হত্যা করছে - তাদের সমর্থন করছে গ্রিনপিস৷
অবৈধ তিমি শিকার - এক চলমান বিতর্ক
গ্রিনপিসের অন্যতম বড় সাফল্য হচ্ছে ১৯৮৬ সাল থেকে বাণিজ্যিক তিমি নিধন বন্ধে সমর্থ হওয়া৷ তবে এখনো আইসল্যান্ড, নরওয়ে এবং জাপান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তিমি নিধন করে যাচ্ছে৷ ফলে গ্রিনপিসও এসব দেশের তিমি নিধন কার্যক্রমের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে৷
পরিবেশগত প্রতিবাদ মেনে নিচ্ছে আদালত
২০০৮ সালে ব্রিটেনে একটি বড়মাপের আইনি সফলতা অর্জন করে গ্রিনপিস৷ পরিবেশের স্বার্থে পরিবেশ দূষণকারী স্থাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে প্রথমবারের মতো আইনসম্মত ঘোষণা দিয়েছে সেদেশের একটি আদালত৷ এভাবে গোটা বিশ্বেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ সংগঠন গ্রিনপিস৷