1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গৃহ নির্যাতনের নেতিবাচক প্রভাব

মারিনা জোয়ারদার২২ জানুয়ারি ২০০৯

গৃহ নির্যাতনের কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি৷ ভারতীয় উপমহাদেশে এই পীড়ণ নতুন কিছু নয়৷ কিন্তু যদি বলা হয় ইউরোপও এর ব্যতিক্রম নয় তখন অবাক হতে হয় বৈকি৷

https://p.dw.com/p/GeP9
প্রতি বছর জার্মানিতে প্রায় ৪০ হাজার মহিলা গৃহ নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয় নেয় মহিলাদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে৷ছবি: AP

প্রতি বছর জার্মানিতে প্রায় ৪০ হাজার মহিলা গৃহ নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয় নেয় মহিলাদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে৷ দেখা গেছে গৃহ নির্যাতনের ফলে শতকরা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নারী কর্মস্থল থেকে সড়ে দাঁড়াচ্ছে, কারণ তাদের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়ছে৷ তাই দেখা যাচ্ছে যে গৃহ নির্যাতনের ফলে উত্পাদনশীলতাও ব্যহত হচ্ছে৷

এ কারণে গৃহ নির্যাতন প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু সংগঠন৷ তারা নির্যাতিত এসব মহিলাকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়, অঙ্গীকারবদ্ধ হয়৷ সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন অনেকেই৷ এই প্রসঙ্গে বার্লিনের অর্থনীতিবিদ হারাল্ড ওল্ফ বলেন, বার্লিনে গত বছর আমরা গৃহ নির্যাতনের প্রায় ১৩শ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি৷ এই ঘটনাগুলো নথিবদ্ধ হয়েছে৷ আমরা সাহায্যের কথা বলেছি, বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়েছি, নানা কর্মসূচীর সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে সবসময়ই সব ঘটনার কথাই আমরা জানতে পারি না৷ কারণ গৃহ নির্যাতন নিয়ে সহজে কেউ কথা বলতে চায় না৷ এবং এ কারণেই আমি বিশ্বাস করি গৃহ নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে আরো খোলাখুলিভাবে আলোচনা করা উচিত – কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়৷ এর মধ্যে দিয়েই নির্যাতিতদের সাহায্য করা সম্ভব৷

ওল্ফ আরো জানান, মহিলাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে বিভিন্ন সংগঠন এগিয়ে এসেছে যা অত্যন্ত আশার কথা৷ সামাজিকভাবে এ বিষয় নিয়ে খোলাখুলিভাবে আলোচনার কথা বলেন তিনি৷

কীভাবে গৃহ নির্যাতন প্রতিরোধ করা যায় বা এড়ানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা এবং কাজ করার ওপর জোর দেয়া হয়৷ দেখা গেছে এর ফলে কর্মক্ষেত্রে যে কোন নারী তাঁর প্রতিভা বিকশিত করতে পারেন, সফল হতে পারেন৷ কেন গৃহ নির্যাতন প্রতিরোধ করা জরুরী তা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে মহিলা বিষয়ক সংস্থা৷ একজন কর্মী সেরাপ আলতিনিসিক জানালেন, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কর্মজীবি মহিলা গৃহ নির্যাতনের কারণে চাকুরী বা পেশা থেকে সড়ে দাঁড়ান৷ ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে গৃহ নির্যাতনের প্রভাব বেশ তীব্রভাবে কর্মক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়৷ যেমন অপ্রীতিকর ফোনকল, শারীরিকভাবে হামলার হুমকি এবং স্বামী, বন্ধু অথবা যে বা যারা গৃহ নির্যাতনের জন্য দায়ী তাদের ঘন ঘন কর্মক্ষেত্রে আশা যাওয়া৷ প্রায় ৫৬ শতাংশ নির্যাতিত মহিলা মাসে অন্তত ৫ দিন দেরী করে অফিসে আসেন এবং শতকরা ২৮ শতাংশ মহিলা মাসে অন্তত পাঁচ দিন আগেই অফিস থেকে চলে যান৷

গৃহ নির্যাতনের নেতিবাচক প্রভাব অনেক ধরনের হতে পারে৷ নির্যাতিত ব্যক্তি শারীরিক এবং মানসিক – দু ধরনের যন্ত্রণায় ভোগেন৷ এছাড়া অনিয়মিত ঘুম, কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহ-উদ্দীপনার অভাব, আত্মবিশ্বাসহীনতা এবং সব সময় এক ধরনের ভয় তাঁর মধ্যে কাজ করে৷ এর ফল হিসেবে অনিয়মিত অফিসে আসা, অফিস কামাই করা, ঠিকমত দায়িত্ব পালন না করা, এবং পেশাকে জলাঞ্জলী দেয়া – সব কিছুই লক্ষ্য করা যায়৷ এবং এর মারাত্মক ফল ভোগ করে কর্মদাতারা৷

জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গৃহ নির্যাতন প্রতিরোধে তাদের বাজেট বাড়িয়ে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ইউরো ধার্য করেছে৷ এই অর্থ দিয়ে যারা নির্যাতিত তাদের সাহায্য করা হবে৷ তার মধ্যে আর্থিক সাহায্য থেকে শুরু করে ওষুধপত্রের ব্যয়, নিয়মিত চিকিত্সা এবং পুলিশী তদন্তের বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে৷

গৃহ নির্যাতনের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা সত্ত্বেও জার্মানির অনেক সংস্থা তা নিয়ে খুব বেশী চিন্তিত নয়৷ তাদের মতে এসব নিতান্তই ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক বিষয়৷ তবে বলা হচ্ছে তারপরেও কিন্তু অফিস আদালতে গৃহ নির্যাতন রোধ করতে কর্মক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত৷ এই সব নীতির মাধ্যমে কোনো সংস্থা তার কর্মীদের ক্ষেত্রে গৃহ নির্যাতন ঘটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে৷ নিয়মিত এবিষয়ে নিয়ে আলোচনা, কীভাবে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশকে তা থেকে মুক্ত রাখা যায় – সে সব উল্লেখ থাকবে এই নীতিমালায়৷

কর্মী সেরাপ আলতিনিসিক এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, গৃহ নির্যাতিনের শিকার যে মানুষটি, তাঁকে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, তাঁকে কোন কিছুর জন্য জবাবদিহি করতে হবে না বরং কর্মক্ষেত্রে তা সরাসরি জানাতে হবে এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে অবহিত হতে হবে৷ সবচেয়ে জরুরী হল খোলামেলাভাবে সবকিছু নিয়ে আলোচনা করা, পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলা৷ কেন কেউ দেরী করে অফিসে আসে, বা কেন অফিস কামাই করে – তা নিয়ে কথা না বলে তার উচিত সাহায্যের আবেদন জানানো৷