খাবার যেখানে প্রাণনাশক!
এতকাল বলা হয়েছে, মানবদেহে আর্সেনিক প্রবেশের অন্যতম উপায় পানীয় জল৷ এবার গবেষকরা জানিয়েছেন এক নতুন তথ্য৷ ভাতের মাধ্যমেও নাকি শরীরে ছড়াতে পারে আর্সেনিক, যা শরীরে ক্যান্সারের মতো রোগের কারণ হতে পারে৷
আর্সেনিক দূষণ
বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চলে আর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে অনেক আগেই৷ পানীয় জলের মাধ্যমে এই আর্সেনিক শরীরে প্রবেশ করে বলেও জানা গেছে বিভিন্ন গবেষণায়৷ এবার ‘‘প্লোস ওয়ান’’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র বলছে, ভাতের মাধ্যমেও শরীরে ছড়াতে পারে আর্সেনিক বিষ৷ ভূগর্ভস্থ পানিতে থাকা আর্সেনিক যে চালের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে, তা নিয়ে এটাই এখন অবধি সবচেয়ে বড় গবেষণা৷
সহজে মানুষের নাগালে
ভূগর্ভস্থ পানিতে প্রাকৃতিকভাবেই আর্সেনিক বিষের মিশ্রন ঘটে৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সত্তরের দশকে ‘সবার জন্য পানি’ সংক্রান্ত এক প্রকল্পের আওতায় অনেক অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়৷ ফলে মাটির নীচের আর্সেনিকযুক্ত পানি সহজে সাধারণ মানুষের নাগালে চলে আসে৷
ভাত বেশি খেলে সমস্যা
‘‘প্লোস ওয়ান’’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি তৈরি করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা ১৮,৪৭০ জন স্বেচ্ছাসেবীর দেওয়া নমুনা পরীক্ষা করেছেন৷ তারা সবাই আর্সেনিক-দূষিত এলাকায় বসবাস করছেন৷ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে যারা বেশি করে ভাত খান তাদের প্রস্রাবে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি৷ অপেক্ষাকৃত কম ভাত খাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে এই তুলনা করেছেন গবেষকরা৷
মানবদেহের ক্ষতির কারণ
ব্রিটেনের লিচেস্টারে অবস্থিত ডি মোন্টফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিসিন বিশেষজ্ঞ পারভেজ হারিস বলেন, ‘‘গবেষণায় পানিতে আর্সেনিক দূষণ এবং ‘ফুড চেইনে’ তার প্রভাবের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে৷ একইসঙ্গে এটাও পরিষ্কার যে চালের মাধ্যমে পরিবাহিত আর্সেনিক মানবদেহের ক্ষতির কারণ হতে পারে৷ বিশেষ করে চামড়ায় ক্ষতের সঙ্গে এটির সম্পর্ক পাওয়া গেছে৷’’
জটিল পরিস্থিতি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ৪১৭টি গ্রামে পরিচালিত এক গবেষণায় সেখানকার মানুষের প্রস্রাবের নালীর কোষের জেনেটিকে ক্ষতির নমুনা পাওয়া গেছে৷ এরফলে একটি কোষ থেকে আরেকটি কোষে ডিএনএ কোড সঠিকভাবে স্থানান্তর হতে পারছে না৷ এধরনের জটিলতা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় বলে মনে করেন গবেষকরা৷
ক্যান্সারের ঝুঁকি
এর আগে প্রকাশিত আরেক গবেষণা থেকে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে স্বল্প পরিমাণে আর্সেনিক নিয়মিত শরীরে প্রবেশ করলে মূত্রাশয়, কিডনি, ফুসফুস অথবা চামড়ায় ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷
ভাত কম খান
বায়োমেডিসিন বিশেষজ্ঞ পারভেজ হারিস বলেন, ‘‘আড়াইহাজার এবং আর্সেনিক দূষণের শিকার অন্যান্য অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে যারা প্রতিদিন গড়ে ১ দশমিক ছয় কেজির বেশি ভাত খান, তাদের প্রতি আমাদের পরামর্শ হচ্ছে আপনারা ক্যালোরির উৎস হিসেবে ভাতের উপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে দিন৷ এক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে গম এবং কম আর্সেনিক দূষণযুক্ত এলাকায় উৎপাদিত চাল৷ সিলেট অঞ্চলের চালে আর্সেনিকের মাত্রা কম৷’’
অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য
গবেষকরা বলছেন, তাদের এই গবেষণা আর্সেনিক দূষণের ঝুঁকিতে থাকা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে৷ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে কম্বোডিয়া, চীন, ভারত এবং ভিয়েতনামে আর্সেনিক নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে৷