চিকিৎসাবিজ্ঞানে সাফল্য
১৯ এপ্রিল ২০১৩পশ্চিম ইউরোপে প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে একজন স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন৷ এই টিউমার আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠে বলে তা ধরা পড়তে প্রায়ই দেরি হয়ে যায়৷ এই ঝুঁকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে৷ অথচ প্রায় নিখুঁতভাবে শনাক্ত করার প্রযুক্তি কিন্তু রয়েছে৷
ঠিক সময়ে ও নিশ্চিতভাবে স্তনের ক্যানসার শনাক্ত করতে ভবিষ্যতে চৌম্বক ম্যামোগ্রাফি সাহায্য করতে পারে৷ আলট্রাসাউন্ড ও এক্স-রে-র পাশাপাশি উঁচু দরের এই প্রক্রিয়াও কাজে লাগবে৷ অনেক ক্ষেত্রে এর নিখুঁত ছবি চিকিৎসায় কাজে লাগবে৷ রোগীর উপর এর তেজস্ক্রিয়তার খারাপ প্রভাবের কোনো ভয়ও থাকবে না৷ এই যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষার সময় শরীরের মধ্যে কোনো ক্ষতিকারক পদার্থ ঢোকাতে হবে না৷ তবে এই প্রক্রিয়ার খরচ খুবই বেশি৷ তাছাড়া জার্মানির মতো দেশে ডাক্তাররা এখনো এমন পরীক্ষার কোনো মানদণ্ড স্থির করতে পারেন নি৷
এই ম্যামোগ্রাফি এক শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্তরের ছবি তোলে৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞরা প্রতিটি স্তনের প্রায় ১,০০০ ছবি তুলে তার বিশ্লেষণ করতে পারেন৷ প্রচলিত এক্স রে ম্যামোগ্রাফি এত তথ্য দিতে পারে না৷ আসলে এক্স রে-র মাধ্যমে জটিল কোষের নিখুঁত ছবি তোলা যায় না৷ ফলে ৫০ বছরের কম রোগীদের স্তনের জটিল কোষের ছবি তুলতে এই নতুন প্রক্রিয়া কাজে লাগবে৷
অধ্যাপক ভ্যার্নার কাইজার বিষয়টা সম্পর্কে বলেন, ‘‘ঘন কোষের মধ্যে কোনো অংশ শক্ত হয়ে টিউমার তৈরি করে৷ বরফের উপর সাদা খরগোস অথবা ঘন কুয়াসার মধ্যে অস্পষ্ট কিছু যেমন আমরা ভালো করে দেখতে পাই না, এটা অনেকটা সে রকম অবস্থা৷ নতুন এই পদ্ধতি দুটি স্তরের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য দেখাতে পারে৷ ফলে টিউমার-এর ছবি স্পষ্ট ফুটে ওঠে৷ যেমন এই রোগীর খুব খারাপ টিউমার হয়েছে৷ আরও দেখতে পাচ্ছেন স্তনের পেশির মধ্য দিয়ে এই টিউমার কেমন পাশেই আরেকটি টিউমারের জন্ম দিয়েছে৷ নতুন এই পদ্ধতি ছাড়া এমন জটিল বিষয় বোঝার অন্য কোনো পদ্ধতি নেই৷''
এই প্রক্রিয়া শরীরের মধ্যে সামান্য কয়েক মিলিমিটার পুরু টিউমার বা টিউমার জাতীয় অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখাতে পারে বলে চিকিৎসারও নতুন পথ খুলে যাচ্ছে৷ ভবিষ্যতে হয়তো উত্তাপ দিয়ে অথবা শীতল পদ্ধতিতে ছোট টিউমার-এর চিকিৎসা করা যাবে৷
আদর্শ অবস্থায় অপারেশন, অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই কোনো রোগীর চিকিৎসা হলো৷ আধ ঘণ্টার মধ্যে রোগী পায়ে হেঁটে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলেন৷ আরও কাজ বাকি রয়েছে বটে, কিন্তু যা করার তা হয়ে গেছে৷ প্রথমে তিনি খারাপ খবর শুনেছিলেন, যে তাঁর স্তনের ক্যানসার হয়েছে৷ একই সঙ্গে তিনি সুখবরও পেলেন, যে এর মধ্যে তাঁর চিকিৎসাও হয়ে গেছে৷
রোগ শনাক্ত করার এমন নিখুঁত প্রক্রিয়া স্তনের ক্যানসারের রোগীদের জন্য এক মাইলফলক হতে পারে৷ যত তাড়াতাড়ি টিউমার শনাক্ত হবে, তা সেরে ওঠার সম্ভাবনাও ততই বেড়ে যাবে৷
এসবি/ডিজি