কোলোন ক্যাথিড্রালের নির্মাণ কাজ শেষ হয়না
মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে কোলোন ক্যাথিড্র্যাল নির্মাণ কাজ চলে প্রায় আটশো বছর ধরে৷ সম্প্রতি একটি চমকপ্রদ পদক্ষেপের মাধ্যমে ডোম-এর নির্মাণ কাঠামো খুলে ফেলা হয়েছে৷ কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে৷
উত্তরের চূড়া আপাতত মুক্ত
ক্যাথিড্রালের আকর্ষণীয় উত্তর চূড়া থেকে প্রায় একশো মিটার উঁচুতে একটি বিরাট ক্রেন দিয়ে নির্মাণ কাঠামো সরিয়ে ফেলা হয়েছে৷ ২৫ মিটারের নির্মাণ কাঠামোটি খুলে ফেলা হয়েছে, যেটা স্থাপন করা হয়েছিলো প্রায় ১০ বছর আগে৷ সে সময় তিন মিটার উঁচু একটি পাথরের টুকরো চূড়া থেকে পড়ে গিয়েছিলো৷ সে জন্য লোহা ও পিতলের অংশ পরিবর্তন করে লাগানো হয়েছে মরচে ধরবে না এমন ধরনের স্টিল৷
ছয় মাসের কাজ ছয় ঘণ্টা
যদি ডোম চূড়ার অংশগুলো খুলে নীচে নিয়ে এসে লাগানো হতো, তাহলে ছয়মাস সময় লেগে যেতো৷ ৭৫০ টন ওজনের বিশাল ক্রেন কাজটি করায় সময় লেগেছে মাত্র ছয় ঘণ্টা, এবং নীচ থেকে মজার এই দৃশ্য উপভোগ করেছেন শতশত দর্শনার্থী৷
ঈশ্বরের হাতে
ক্যাথিড্রাল নির্মাণ কাজের প্রধান মিশায়েল হাউক বলেন, ‘‘আমরা ইশ্বরের হাতে৷’’ এই কথাটি তিনি বলেন, যখন নির্মাণ কর্মীরা একশো মিটার উঁচুতে ক্রেনের মাধ্যমে কাঠামো ক্যাথিড্রাল চূড়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং সেটি শক্ত করে স্থাপন করে৷ যদি বাতাসের বেগ একটু বেশি হতো, তাহলে এই কাজটি করা বিপজ্জনক হতো৷ কিন্তু ঈশ্বরের কৃপায় তখন বাতাস বেশি ছিলোনা৷
নির্মাণ কর্তা
গত একবছর যাবত মিশায়েল হাউক ৬০ জন শ্রমিকের কাজ দেখাশোনা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি ডোমকে অনুভব করতে পারি’৷’ আসলে তা করাও উচিত, কারণ প্রাচীন এই ডোম-এর নির্মাণ কাজের কোথাও কোনো ক্রুটি থাকলে তাঁকেই যে দায়ী করা হবে৷
সার্বক্ষণিক নির্মাণ কাজ
ডোম-এর কোনো না কোনো অংশে সবসময়ই নির্মাণ কাজ চলে৷ এমন কোনো কোলোনবাসীকে পাওয়া যাবেনা, যে সে কখনো দেখেছেন যে ডোমের নির্মাণ কাজ হচ্ছেনা৷ কোলোনবাসীর কাছে এটা একেবারেই সাধারণ ব্যাপার৷ তাঁরা ডোমকে কোলোনের প্রতীক হিসেবে মনে করেন৷ ডোম-এর কাজ শেষ হোক আর না হোক, তাঁরা ‘ডোম’ বা ক্যাথিড্রাল নিয়ে খুবই গর্বিত৷
তিনশো বছরের নির্মাণ বিরতি
কোলোন ক্যাথিড্রাল একই সাথে নতুন এবং পুরনো৷ এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিলো তেরো শতকের গোড়ায়৷ কিন্তু ১৫১০ সালে অর্থের অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে যায়৷ ৩৫০ বছর ক্যাথিড্রালের কোনো চূড়া ছিলোনা, যা ১৮৫৩ সালের তোলা ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে৷ ১৮৮০ সালে জোড়া চূড়া নির্মাণ করা হয় মূল গথিক শৈলীতে৷
যুদ্ধের ক্ষত চিহ্ন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোলোন প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়৷ শহরটির ওপর প্রায় ৭০টি বোমা ফেলা হয়৷ কিন্তু কোলোন এর মোকাবিলা করে খুব বিস্ময়করভাবে৷ বিভিন্ন ভবন মেরামত করতে সময় লাগে কয়েক দশক৷ কিন্তু তার কিছু ক্ষতচিহ্ন এখনো দেখা যায়৷
বিতর্কিত কাচের জানালা
ডোম-এর দক্ষিণ কোণার ১১৩ বর্গমিটার লম্বা কাচের জানালা যুদ্ধে ভেঙে গিয়েছিলো, যা পরে কোলোনের শিল্পী গেয়ারহার্ড রিশটার-এর পছন্দমতো নতুন করে লাগানো হয়েছে৷ কিন্তু কোলোনবাসী অনেকেই জানালার রং-এর কারুকার্য দেখে তেমন খুশি হতে পারেন নি৷
প্রতিদ্বন্দ্বী
১৫৭ মিটার উঁচু কোলোনের ডোম-টি চার বছর বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের তালিকায় ছিলো৷ ১৮৮৪ সালে উল্ম শহরে ম্যুনস্টার টাওয়ার তৈরি করা হয়৷ ১৬১.৫ মিটার উঁচু এই টাওয়ারটি তখন থেকে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের স্থানটি দখল করে নেয়৷ গথিক শৈলীর ম্যুনস্টার টাওয়ার-এর কাজও তিনশো বছর বন্ধ রাখা হয়েছিলো কোলোন ডোমের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত৷ যেন সেটি আরো উঁচু করতে না পারে৷
ক্যাথিড্রাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ধ্বংসের রক্ষাকবচ
কোলোনের ডোম এখন আর সবচেয়ে উঁচু ভবন না হলেও নিঃসন্দেহে কোলোনবাসীর কাছে এটিই সবচেয়ে ‘সুন্দর ভবন’৷ ১৭০ বছর ডোম-এর যে নির্মাণ কাজ হয়েছে তার অর্ধেকেরও বেশি অর্থের যোগান দিয়েছে কোলোনবাসী, কেন্দ্রীয় কোলোন সমিতির মাধ্যমে৷ কোলোনবাসীর গর্বের ডোম – আরো সুন্দর করতে তারা সবসময়ই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়৷