1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কৃত্রিম আলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়

সেসি লেয়াল/এসবি২৬ এপ্রিল ২০১৪

ধোঁয়া, ধুলা আর আলোর ছটার কারণে রাতের অন্ধকারে শহরের আকাশে গ্রহ-তারা ভালো করে দেখাই যায় না৷ প্রত্যন্ত গ্রামে কিন্তু আকাশের চেহারাই আলাদা৷ মানুষের তৈরি কৃত্রিম আলোর আরও কুপ্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন এক জার্মান বিজ্ঞানী৷

https://p.dw.com/p/1BoIl
রাতের নিউ ইয়র্ক টাইম স্কয়ারছবি: picture-alliance/Photoshot

রাতের পৃথিবী – মহাকাশ থেকেও মানুষের তৈরি আলোর বিন্দু স্পষ্ট দেখা যায়৷ দেখতে বেশ সুন্দর হলেও এটা কিন্তু স্বাভাবিক নয়৷ সবচেয়ে আলোকিত অংশগুলি হলো বড় শহরাঞ্চল৷ কৃত্রিম আলো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাতাস দূষণ একটা বড় বিপদ বয়ে আনে৷

কোলোন শহরের জ্যোতির্বিজ্ঞানী হারাল্ড বার্ডেনহাগেন এই বিষয়টি পরীক্ষা করছেন৷ তিনি বললেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে রাতের আলোর নানারকম নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে৷ একদিকে মানুষের স্বাস্থ্য, অন্যদিকে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়৷ তাছাড়া রাতের কৃত্রিম আলোর ছটা আকাশের গ্রহ-তারাকেও ম্লান করে দেয়৷''

অনেক প্রাণীর উপর এর প্রভাব মারাত্মক৷ পাখিরা দিকনির্ণয় করতে না পেরে আলোকিত বাড়ি-ঘরের সঙ্গে ধাক্কা মারে৷ কচ্ছপরা চাঁদের আলো দেখে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যায়৷ কিন্তু শহরের আলো তাদের মনে বিভ্রান্তি আনে৷ তাই তারা অনেক সময় সমুদ্রের বদলে উলটো দিকে চলতে থাকে৷ ত্বক শুকিয়ে যায়, তাদের মৃত্যু ঘটে৷

তবে শুধু জন্তু-জানোয়ার নয়, মানুষেরও ক্ষতি হয়৷ হারাল্ড বার্ডেনহাগেন বলেন, ‘‘মানুষের স্বাস্থ্যের উপরেও এর প্রভাব পড়ে, কারণ বডি-ক্লক ওলটপালট হয়ে যায়৷ রাতে কৃত্রিম আলোর কারণে স্তন ও প্রস্ট্রেট ক্যানসারের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়৷''

এই জার্মান বিজ্ঞানী তাই গবেষণার মাধ্যমে এর সমাধান খুঁজছেন৷ হারাল্ড বার্ডেনহাগেন বলেন, ‘‘এটা একটা আদর্শ আলো৷ এখানে বাল্বের নীচটা ফ্ল্যাট৷ শুধু নীচে দিয়েই আলো বেরোয়৷'' ফলে বাল্বের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে না, পরিবেশে আলোর দূষণ ছড়ায় না৷ আলোর উৎস যত সম্ভব কম রাখলে সবচেয়ে ভালো হয়৷ আর প্রয়োজন না থাকলে বাতি নিভিয়ে রাখাই ভালো৷ গবেষকরা আলোর রং নিয়েও পরীক্ষা করছেন৷ কারণ মানুষের ‘বায়োলজিকাল ক্লক'-এর উপর তার একটা প্রভাব রয়েছে৷

বিশেষ এক যন্ত্রের সাহায্যে আলোর স্পেক্ট্রাম নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ রাতে খুব সাদা আলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়৷ এমন আলো শুধু সূর্যই উৎপাদন করে৷ কৃত্রিম আলোয় নীল ও সবুজ অংশ অনেক বেশি, যা রাতে সূর্যের আলোর মতো দেখায়৷ ফলে শরীরের অর্গানিজম ওলটপালট হয়ে যায়৷

হলুদ আলো আসলে হলুদ ও লাল রশ্মি দিয়ে তৈরি৷ অর্থাৎ হলুদ আলো অর্গানিজম-কে বেশি বিভ্রান্ত করে না৷ স্বাস্থ্যের জন্য তা কম ক্ষতিকারক৷ বার্ডেনহাগেন তাই রাতে শুধু হলুদ আলো ব্যবহারের পরামর্শ দেন৷ অথবা বিশেষ এক ধরনের চশমা পরে যে কোনো পরিবেশে আলোর মধ্যে ভারসাম্য আনাও সম্ভব৷ স্লোভেনিয়া ও ইটালির মতো কয়েকটি দেশে আলোর দূষণের বিরুদ্ধে আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে৷

জার্মানির প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের প্রধান অবশ্য মনে করেন, এটাই সুরক্ষার একমাত্র পথ নয়৷ জার্মান প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের বেয়াটে ইয়েসেল বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, উপর থেকে আইন চাপিয়ে দিলেই তাতে কাজ হয় না৷ আসলে পৌর ও গ্রাম স্তরে আলোর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷ বাগান, বাড়ি-ঘর সহ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই একটু সচেতন হয়ে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে৷''

ছোটবেলা থেকেই বার্ডেনহাগেন আকাশের তারা দেখতে ভালোবাসেন৷ কৃত্রিম আলোর ভিড়ে আজকাল আর ভালো করে তারা দেখা যায় না৷ হারাল্ড বার্ডেনহাগেন বলেন, ‘‘একবার ভেবে দেখুন, চার-পাঁচ হাজার বছর আগেও মানুষ যদি ভালো করে রাতের আকাশ দেখতে না পারতো, তাহলে কেউ ভাতেই পারতো না যে ঋতু পরিবর্তন ও তারার গতি-প্রকৃতির মধ্যে কোনো সম্পর্ক রয়েছে৷ আমাদের কোনো ক্যালেন্ডারই থাকতো না৷ ফলে আজ আমাদের উন্নতিও এই পর্যায়ে পৌঁছাতো না৷''

আলোকিত পৃথিবী ভালো দেখায় বটে৷ পৃথিবী ছাড়া আমাদের অস্তিত্বই সম্ভব হতো না৷ তবে তারায় ভরা আকাশের রোমাঞ্চই আলাদা৷ ভবিষ্যতেও তা দেখা যাবে কি না, আলো দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার উপর তা নির্ভর করছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য