1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কর্মক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ - পেশাজীবী নারী

২৮ ডিসেম্বর ২০১১

পাকিস্তানে বিভিন্ন পেশায় মেয়েদের অংশগ্রহণের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ অন্যদিকে নারীদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে এখনও৷

https://p.dw.com/p/13ZfH
৫০ বছর বয়স্ক বিধবা মহিলা জাহিদা কাজমি একজন ট্যাক্সিচালকছবি: Hasan Faizi

পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার লাইন্স পিআইএ-র হোস্টেস আফশিন তাঁর চাকরিতে ঢোকার সময়ের কথা স্মরণ করে বলেন, প্রশিক্ষণের সময় তাঁকে বলা হয়েছিল কীভাবে যাত্রীদের সন্তুষ্ট করতে হয়, কিন্তু পাইলটদেরও যে খুশি করতে হবে, তা ছিল উহ্য৷

কয়েক মাস পর পাইলটরা তাঁকে ও তাঁর সহকর্মীদের ককপিটে আসতে বলেন ‘‘ তাঁরা আমাদের বুকে ও পেছনে স্পর্শ করেন, ভাব দেখান যেন অনিচ্ছাকৃতভাবে তা ঘটেছে৷'' এরপর পাইলটদের চাহিদা আরো বেড়ে যায়৷ প্লেন ওড়ার সময় বা মাটিতেও যৌন হয়রানির শিকার হতে থাকেন হোস্টেসরা৷

৯ অক্টোবর, ক্যাপটেন রিফাত হাই বিষয়টি নিজের হাতে নেন এবং লাহোরের উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন৷ তিনি অভিযোগ করেন, নারী কর্মীরা ঊর্ধতন অফিসারদের ইচ্ছা মত না চললে তাঁদের পদোন্নতিতে বাধা পড়ে, এমনকি পদের অবনতিও হয়ে থাকে৷

সমান দুর্ভোগ

প্রতি বছর পাকিস্তানের হাজার হাজার মেয়ে তাদের পুরুষ সহকর্মীদের দ্বারা নিগৃহীত হন৷ মান সম্মান বজায় রাখার জন্য অনেক মেয়ে চুপ করে থাকতে বাধ্য হন৷ সরকারি তথ্য অনুযায়ী দৈনিক ৭০ শতাংশ মেয়ে কর্মক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হন৷ যদিও ২০১০ সালে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ক্ষমতায় আসার পর পরই কর্মক্ষেত্রে নারীদের হয়রানি রোধের একটি বিলে স্বাক্ষর করেন৷

Hostessen Casting in Peking
পিআইএ-র এয়ার হোস্টেসরা পুরুষ সহকর্মীদের কাছে হয়রানির শিকার হনছবি: picture-alliance/dpa

‘‘নিগ্রহকে আমরা উপেক্ষা করতে পারিনা৷ কিন্তু চুপ করে না থাকলে বাবা ও ভাইরা আমাদের কাজ করতে দেবেননা৷ চাকরি ছাড়া আমাদের চলবেনা৷'' বলেন, ২৫ বছর বয়সি ব্যাংকে চাকুরিরত তরুণী সারা৷ চাকরি না থাকলে দামি ব্র্যান্ডের জামাকাপড়, ব্যাগ, গয়নাগাটি কেনাও তার পক্ষে সম্ভব হবেনা৷ ধনী বন্ধুদের সঙ্গে পাল্লা দেয়াও শক্ত হয়ে পড়বে৷

অন্যদিকে জার্মানিতে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বিরল, তবে একেবারে অনুপস্থিত নয়৷ ডয়চে ভেলের সমানাধিকার রক্ষা দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত বেটিনা বুর্কহার্ট জানান, ‘‘কিছু কিছু নারী কর্মী কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির মোকাবেলা কী ভাবে করা যায়, সে সম্পর্কে পরামর্শ নিতে আসেন৷ অনেকে পুরুষ সহকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, যারা তাদের হাত নিজেদের কাছে রাখতে পারেননা বা মেয়েদের গায়ে হাত দিয়ে কথা বলতে ভালবাসেন৷ তবে ব্যাপারটি প্রকাশ হওয়ার পর তারা আবার নিজেদের সাথে সাথে সামলে নেন৷''

কর্মক্ষেত্রে আরো প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন

জার্মান মেয়েরা যোগ্য হলেও কর্মক্ষেত্রে দেখা যায়, ছেলেদের তুলনায় এখনও ২৩ শতাংশ কম উপার্জন করেন তারা, পদোন্নতি হয় কম৷ তাই শীর্ষ পদগুলিতে মেয়েদের খুব কমই দেখা যায়৷ বুর্কহার্ট জানান, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করছে যাতে প্রযুক্তি ও কারিগরি ক্ষেত্রে চাকরির জন্য আরো বেশি করে আগ্রহী করে তোলা যায় মেয়েদের৷ কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান শীর্ষ পদগুলিতে ৩০ শতাংশ নারী নিয়োগ করার লক্ষ্যে কাজ করছে৷ অদূর ভবিষ্যতে ৫০ শতাংশ করার আশা তাদের৷

পাকিস্তানে কর্মজীবী মেয়ের সংখ্যা এখনও খুব কম৷ পুরুষদের তুলনায় তাদের উপার্জন অর্ধেক৷ তবে পাকিস্তানি কর্মপ্রতিষ্ঠানগুলিতে অদূর ভবিষ্যতে আরও বেশি মেয়ে কাজ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে৷ পাকিস্তানের হায়ার এডুকেশন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১০ সালে হাইস্কুলগামী ২ কোটি ৬০ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৪২ শতাংশের বেশি ছিল মেয়ে৷ ১৮ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৩০ শতাংশ৷ পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়গামী ১১ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৪৭ শতাংশ ছাত্রী৷ ১৯৯৩ সালে ছিল ২৩ শতাংশ৷

ইসলামাবাদের জাতীয় সংসদে ৩৪২ আসনের মধ্যে ৭৮ টি মেয়েদের দখলে৷ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি, জাতীয় সংসদের স্পিকার ফেহমিদা মালিক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত শেরি রেহমান, এরা সবাই নারী৷

পুরুষের একচ্ছত্র রাজত্বেও নারীর প্রবেশ

পুরুষদের সনাতনি পেশায়ও নারীরা আসছেন এখন৷ যেমন ট্যাক্সিচালক হিসেবে৷ তবে বিশেষ সাবধানতাও নিতে হয় নারী ট্যাক্সিচালকদের৷ ৫০ বছর বয়স্ক বিধবা মহিলা জাহিদা কাজমি এমনই একজন ট্যাক্সিচালক৷ রাজধানী ইসলামাবাদে একটি ট্যাক্সি লিজ নিয়ে চালাচ্ছেন তিনি৷ যাত্রীরা আন্তরিক, ভদ্র ও বন্ধুভাবাপন্ন৷ তবে এটা তাঁর বয়সের জন্য ও বড় শাল দিয়ে মাথা ঢেকে রাখার জন্যও হতে পারে৷ পাকিস্তানে কর্মজীবী মেয়েদের মধ্যে যারা ঠিকমত শরীর ঢেকে রাখেন না বা মাথায় কাপড় দেননা, তাদের হালকা মেয়ে এবং সহজেই পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়৷ পুরুষদের এই নেতিবাচক ধারণাটা দূর হতে আরো কয়েক দশক লেগে যেতে পারে৷

প্রতিবেদন: আয়শা হাসান/ রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য