1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওয়ারস’র স্মৃতিস্তম্ভের সামনে চ্যান্সেলর ব্রান্ট’এর শ্রদ্ধার্ঘ

৭ ডিসেম্বর ২০১০

জার্মান-পোলিশ সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর করতে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর ছিল এক ঐতিহাসিক দিন৷ তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর ভিলি ব্রান্ট ওয়ারসয় নাৎসি দখলদারির সময় নিহতদের স্মৃতিস্তম্ভের সামনে জানু পেতে বসেন৷ তৈরি হয় নতুন ইতিহাস৷

https://p.dw.com/p/QRXk
Willy Brandt
সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর ভিলি ব্রান্টছবি: AP

হিটলারি অপশাসন, নাৎসিদের হত্যাযজ্ঞের দুঃসহ স্মৃতি তখনও অনেকের মন থেকে মুছে যায়নি৷ পোল্যান্ডে তো নয়ই৷ নাৎসি দখলদারির সময় রাজধানী ওয়ারসর একটি নির্দিষ্ট এলাকায় আটক রাখা হয়েছিল ইহুদিদের, যার নাম হয়েছিল ওয়ারসর ঘেটো৷ এখান থেকে বহু ইহুদিকে পাঠানো হয় আউশভিৎস নিধন শিবিরে৷ এই ঘেটোতেই প্রতিরোধ ওঠে৷ যা নিষ্ঠুরভাবে দমন করে নাৎসিরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে, আগুন লাগিয়ে, বোমা মেরে৷ বহ মানুষ নিহত হয়৷ যারা বেঁচে থাকে তাদের গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে মারা হয়৷ অথবা গুলি করে হত্যা করা হয়৷ নিহতদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় সেই জায়গায় স্থাপিত স্মৃতি স্তম্ভ৷ ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর তারই সামনে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে জানু পেতে বসেন তৎকালীন ফেডারেল জার্মানির প্রথম সামাজিক গণতন্ত্রী চ্যান্সেলর ভিলি ব্রান্ট৷ শ্রদ্ধা জানান নিঃশব্দে নিহতের উদ্দেশে৷ কয়েক মিনিটের নীরবতা৷ এক অসাধারণ মানবিক দৃশ্যের সাক্ষী, আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা বহু পোলিশ নাগরিকের চোখ হয়ে ওঠে অশ্রুসজল৷ মুহূর্তে জার্মান-পোলিশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঘটে যায় এক মানসিক দিকবদল৷

তখনকার সোভিয়েত বলয়ের অন্তর্ভুক্ত পূর্ব ইউরোপীয় কমিউনিস্ট দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সক্রিয় উদ্যোগ নেন চ্যান্সেলর ভিলি ব্রান্ট৷ রাজনীতির ইতিহাসে তা ‘অস্টপলিটিক' নামে পরিচিত৷ উত্তেজনা প্রশমনের এই উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে ব্রান্ট ১৯৭১ সালে পান নোবেল শান্তি পুরস্কার৷ এই নীতির হাত ধরেই ব্রান্ট'এর পোল্যান্ড সফর৷ দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় চুক্তি৷ শুরু হয় কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া৷ ব্রান্টই প্রথম জার্মান চ্যান্সেলর যিনি ওডার ও নাইসে নদী বরাবর পোল্যান্ড ও জার্মানির সীমানা বলে স্বীকার করে নেন৷ ওয়ারস স্মৃতিস্তম্ভের সামনে চ্যান্সেলর ব্রান্ট'এর জানু পেতে বসার দৃশ্য দেশের ভিতরে রক্ষণশীল মহলে সমালোচনার ঝড় তোলে৷ একই সঙ্গে তা তুমুল অভিনন্দিত হয় নানা মহলে৷ বিদেশেও৷

Willy Brandt
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অপ্রত্যাশিতভাবে জানু পেতে বসেন তৎকালীন ফেডারেল জার্মানির প্রথম সামাজিক গণতন্ত্রী চ্যান্সেলর ভিলি ব্রান্টছবি: picture-alliance/dpa

ভিলি ব্রান্ট তাঁর স্মৃতিকথায় নিজেই লিখেছেন: ‘‘জার্মানির ইতিহাস ও লক্ষ লক্ষ নিহত মানুষের চাপ মাথায় নিয়ে কথা যখন ফুরিয়ে যায়, তখন মানুষ যা করে থাকে আমি তাই করেছি৷''

পোলিশ ইতিহাসবিদ রবার্ট ট্রাবা'র ভাষায়: ‘‘এই জানু পেতে বসার ঘটনা হয়ে ওঠে ইউরোপে - পুব আর পশ্চিমের মধ্যে, জার্মান আর পোলিশদের মধ্যে সদ্ভাব ও সম্প্রীতির এক প্রতীক৷''

প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ