1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওষুধ প্রতিরোধী ম্যালেরিয়া জীবাণুর আত্মপ্রকাশ

১২ জুন ২০০৯

ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত সবচেয়ে কার্যকর ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে জীবাণু৷ বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো ম্যালেরিয়ার ওষুধের কার্যকারিতা ব্যাহত করার ঘটনা লক্ষ্য করেছেন কাম্বোডিয়ায়৷

https://p.dw.com/p/I7tv
ছবি: picture-alliance /dpa

এক গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, একই ওষুধ এখন ম্যালেরিয়ার জীবাণু থেকে রক্ত পরিষ্কার করতে আগের চেয়ে বেশি সময় নিচ্ছে৷

কম্বোডিয়ায় ওষুধ প্রতিরোধী ম্যালেরিয়া জীবাণুর খোঁজ

এতদিন রক্তকে ম্যালেরিয়ার জীবাণুমুক্ত করতে যে ওষুধের মাত্র দুই-তিন দিন লাগতো এখন সেটা সময় নিচ্ছে চার থেকে পাঁচ দিন৷ ম্যালেরিয়ার জীবাণুর এই ফিরে দাঁড়ানোর প্রবণতা মূলত কাম্বোডিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে দেখা যাচ্ছে৷ তবে তা শুধু ঐ অঞ্চলে সীমিত না থেকে বরং গোটা পৃথিবীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা দেবে, এমন আশংকা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ তবে বিজ্ঞানীরা ঐ অঞ্চলে ম্যালেরিয়া জীবাণুর ফিরে দাঁড়ানোর প্রবণতার কোন কারণ এখনও নির্ণয় করতে পারেননি৷ অবশ্য কেউ কেউ ঐ অঞ্চলে দুর্বল স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং ম্যালেরিয়ার ওষুধের সংরক্ষণের অব্যবস্থাকে এজন্য দায়ী করেছেন৷ উল্লেখ্য, কাম্বোডিয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর আত্মপ্রকাশের ঘটনা ঘটে আসছে৷ আর সেই কারণে দেশটি ম্যালেরিয়া গবেষকদের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ এছাড়া কাম্বোডিয়ায় দুর্বল স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্র সেখানে প্রায়ই নকল ওষুধ সরবরাহ করে থাকে৷

আর্টেমেসিনিনের কার্যকারিতা হ্রাস

এতদিন ধরে আর্টেমেসিনিন জাতীয় ওষুধগুলো ম্যালেরিয়া থেকে প্রতিরক্ষায় সবচেয়ে কার্যকর বলে ব্যবহার হয়ে আসছিল৷ কিন্তু পৃথক দু'টি চিকিৎসা কেন্দ্রে গবেষণারত যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই দল বিজ্ঞানী সম্প্রতি এই ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাসের ঘটনা লক্ষ্য করেছেন৷ যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, থাইল্যান্ডের ম্যালেরিয়া রোগীদের চেয়ে কাম্বোডিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে জীবাণুমুক্ত করতে প্রায় দ্বিগুণ সময় লেগেছে৷ মাহিডল-অক্সফোর্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন রিসার্চ ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক নিক ডে বলেছেন, অতীতেও আরো দু'বার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এধরণের ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু উপহার দিয়েছিল৷ বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরপরই তা আফ্রিকায় লক্ষ করা গিয়েছিল৷ তিনি বলেন, এর আগে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ক্লোরোকুইন এবং এসপি'র কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়ায় আফ্রিকায় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল৷ তাঁর আশংকা, এবারেও যদি এশিয়া থেকে এই ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুগুলো দ্রুত আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে তবে ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে ভয়ংকর পরিণতি হতে পারে৷ লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক ব্রায়ান গ্রিনউডও একই ধরণের আশংকা প্রকাশ করেছেন৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিজ্ঞানীদের উদ্বেগ

বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতি বছর এই রোগে লাখ লাখ মানুষ মারা যায়৷ অথচ এর প্রতিরোধী ক্ষমতা ভেঙ্গে পড়ার আশংকার ইঙ্গিত এই ঘটনা৷ বিজ্ঞানীদের কাছে এটা বেশ উদ্বেগের বিষয় কেননা এর আগেও ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধ্বংসের জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো একইরকমভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েছিল৷ অবশ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা - ডাব্লিউএইচও - ২০০৬ সালেই এ বিষয়ে আশংকা প্রকাশ করেছিলো যে, ম্যালেরিয়ার জীবাণু আর্টেমেসিনিন ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে৷ তাই ডাব্লিউএইচও ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্টেমেসিনিন জাতীয় ওষুধ যথেচ্ছা বিক্রি না করে বরং এক্ষেত্রে আরো কড়াকড়ি করার আহ্বান জানিয়েছিল৷ ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞরা ম্যালেরিয়া জীবাণুর এই ওষুধ প্রতিরোধী আচরণের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন৷ কেননা ম্যালেরিয়া জীবাণুর এই আচরণ আরো প্রকট ও সম্প্রসারিত হলে সারাবিশ্বে লাখ লাখ মানুষের জীবন নাশের আশংকা রয়েছে৷

প্রতিবেদক: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক