1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওডি কোলন কারখানার তিন শো বছর পূর্ণ

২৪ জুলাই ২০০৯

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন পারফিউম তৈরির কারখানার ৩০০ বছর পূর্ণ হল গত ১৩ই জুলাই৷ জোভানি মারিয়া ফারিনা নামে এক ব্যবসায়ীর উদ্যোগে কোলন শহরে গড়ে ওঠে ওডি কোলন পারফিউমের এই কারখানা৷

https://p.dw.com/p/IwTz
ছবি: picture-alliance/ dpa

এই সুগন্ধির প্রস্তুত প্রণালী সেই তখন থেকে আজ পর্যন্তও রয়েছে অপরিবর্তিত সেই সাথে অত্যন্ত গোপনীয়৷

ইটালিয়ান বংশোদ্ভূত ফারিনা বেশ কয়েক বছর ধরে কোলন শহরে বসবাস করছিলেন তখন৷ অ্যালকোহলের সঙ্গে লেবু জাতীয় নানা রকম ফলের নির্যাস মিলিয়ে একদিন এক সুগন্ধি তৈরি করেন তিনি৷ উচ্ছ্বসিত হয়ে ভাইকে চিঠি লেখেন ফারিনা, ‘‘আমি এমন এক সুগন্ধি খুঁজে পেয়েছি, যা ইটালির বসন্তের সকালকে মনে করিয়ে দেয়৷ বৃষ্টির পর ভেসে আসা পাহাড়ের ডেফোডিল ফুল, কমলার মুকুলের সুগন্ধ স্মরণ করিয়ে দেয়৷''

300 Jahre Farina Original Eau de Cologne
ফারিনা তাঁর প্রিয় শহর কোলনের নামে এই সুগন্ধির নাম দেন ও ডি কোলন

ফারিনা তাঁর প্রিয় শহর কোলনের নামে এই সুগন্ধির নাম দেন ও ডি কোলন৷ তারপর থেকে কেটে গেছে ৩০০ বছর৷ কিন্তু ও ডি কোলনের গন্ধে বা প্রস্তুত প্রনালীতে কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ আর এর প্রস্তুত প্রণালী এতই গোপন করে রাখা হয়েছে যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ জন জানেন, কিভাবে তৈরি করতে হয় এই পারফিউম৷ এর মধ্যে একজন এখনকার ও ডি কোলন কারখানার উত্তরাধিকারী ও ম্যানেজার জোহান মারিয়া ফারিনা৷ তিনি বলেন, ‘‘আসল কথা মূল ওডি কোলনের সুরভি সব সময় একরকম থাকতে হবে৷ অনেকটা শ্যাম্পেইনের মত৷ নানা কৃষিক্ষেতের আঙ্গুর থেকে প্রস্তুত ওয়াইন মিশিয়ে যেমন বিশেষ স্বাদ ও গন্ধের শ্যাম্পেইন প্রস্তুত করা হয়৷ তেমনটি করা হয় আমাদের সুগন্ধির ক্ষেত্রেও৷ কোনো ফল থেকে পাওয়া সুগন্ধি একটু ভিন্ন রকম হলে বিভিন্ন ক্ষেতের ফসলের নির্যাস মিশিয়ে ভারসাম্য আনা হয়৷''

ফারিনার ওডি কোলনের জয়যাত্রা শুরু হয় প্রথম থেকেই৷ লেবু, কমলা, বাতাবিলেবু এসব ফলের নির্যাস থেকে প্রস্তুত হালকা, ঝরঝরে সুরভি আকৃষ্ট করে মানুষকে৷ তবে সে সময় তা ছিল বিলাস দ্রব্য৷ কেবল রাজা রাজড়া ও অত্যন্ত ধনী ব্যক্তিরাই সবুজ, হালকা পাতলা শিশিতে ভরা এই পারফিউম কেনার ক্ষমতা রাখতেন৷ একজন চাকুরীজীবীর ৬ মাসের বেতনের সমান ছিল ওডি কোলনের এক শিশির দাম৷

300 Jahre Farina Original Eau de Cologne
কোলনের পুরানো শহরে তিনশো বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় ওডি কোলন কোম্পানির কেন্দ্রছবি: DW

শোনা যায় জার্মান সম্রাট ফ্রিডরিশ ডেয়ার গ্রোসে, রাশিয়ার জার, বিশ্বখ্যাত জার্মান সাহিত্যিক গোয়েটে, ফ্রান্সের রাজা নেপোলিয়ান বোনাপার্ট পছন্দ করতেন ওডি কোলন, ব্যবহার করতেন সবসময়৷ ১৭৪৭ সাল নাগাদ সারা ইউরোপেই ছড়িয়ে পড়ে ওডিকোলোনের নাম৷ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ধনী ও অভিজাত সম্প্রদায় কিনতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন মনমাতানো এই সুরভি৷

তবে ওডি কোলনের জয়যাত্রা শুধু যে কুসুমাস্তীর্ণ ছিল তা নয়, নানা রকম বাধা বিঘ্নও অতিক্রম করতে হয়েছে এই পারফিউমকে৷ এ প্রসঙ্গে জোহান মারিয়া ফারিনা বলেন, ‘‘অনেক সংকট ছিল৷ ফরাসি বিপ্লব, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়টা ছিল সবচেয়ে বেশি সংকটময়৷ আমাদের পক্ষে কাঁচামাল সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায় উৎপাদন দারুণ ব্যাহত হয়েছিল৷ জিনিস প্রস্তুত করতে পারলে ভবিষ্যতের আশাও আমরা করতে পারি৷ ইদানিং অর্থনৈতিক মন্দার কথা সবাই বলছেন৷ আমাদের কাছে কিন্তু তা এসে পৌঁছায়নি এখন পর্যন্ত৷''

ওডি কোলনের এই সাফল্যে অনুকরণপ্রবণতাও দেখা দিয়েছিল৷ ওডি কোলন আবিষ্কারের ১০০ বছর পর কোলনের আর এক ব্যবসায়ী ভিলহেল্ম ম্যুলেন্স লেবু জাতীয় ফল দিয়েই আর এক ধরণের সুগন্ধি তৈরি করেন এবং নিজের বাসার নম্বর অনুযায়ী নাম দেন ৪৭১১৷ এই পারফিউম বিশ্ববিখ্যাত হলেও আসল নয়৷ সে সময় এ বিষয়টি নিয়ে অনেক ঝগড়া বিবাদ হলেও আজ সেটা আর কোনো সমস্যা নয়৷

এ প্রসঙ্গে ফারিনা বলেন, ‘‘ওই পরিবারের ফের্ডিনান্ড ম্যুলেন্স-এর এক মেয়ের সঙ্গে আমি নাচ শিখতেও গিয়েছিলাম৷ আগের সেই ঘটনা দুই পরিবারের মধ্যে কোনো সমস্যাই নয়৷''

কোলনের পুরানো শহরে তিনশো বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় ওডি কোলন কোম্পানির কেন্দ্র ৷ আজও সেখানে আসল ওডি কোলন কেনা যায়৷ বাড়ির ভেতরে নিজস্ব মিউজিয়ামে দেখা যায় সেই আমলের বিভিন্ন সামগ্রী৷ ওডি কোলন সম্পর্কে অনেক কিছু জানাও যায়৷ শোনা যায় দর্শকদের উচ্ছ্বসিত কন্ঠ৷

‘‘আমি কখনও পারফিউম মিউজিয়াম দেখিনি৷ এটা খুবই আকর্ষণীয়৷ আর পারফিউমের সুগন্ধও খুব তরতাজা৷''

প্রতিবেদক: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার