1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এশীয় অভিবাসী শ্রমিকদের করুণ দশা

হোসাইন আব্দুল হাই৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯

বাংলাদেশে ফেলে আসা পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণ চালাতে অর্থ উপার্জনের আশায় জাহাজ শ্রমিক মোহাম্মদ আলী সিঙ্গাপুরে এসেছিল৷ কিন্তু আসার আগে সে কখনো ভাবতেও পারেনি, তার স্বপ্নগুলো কারাগারের অভ্যন্তরে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে৷

https://p.dw.com/p/Gmr9
মধ্যপ্রাচ্যে কমপক্ষে দশ হাজার শ্রীলংকান শ্রমিকের চাকুরী হারানোর আশংকা করছেন (ফাইল ফটো)ছবি: AP

সিঙ্গাপুরে কাজ করার আশায় সে প্রায় ছয় হাজার ডলার ঋণ করে নিয়োগদাতা সংস্থাকে দিয়েছিল কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হওয়ার সাথে সাথে জাহাজ শিল্পে ধ্বস নামে৷ অন্যদের সাথে আলীকেও ছাঁটাই করা হয়৷ এরপরে যা হয়েছিল তা কল্পনাতীত৷

তার নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষ আরো ১০০ জনের সাথে তাকেও একটি খাঁচায় বন্ধ করে রেখেছিল যাতে তারা বকেয়া বেতন-ভাতার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে কোন অভিযোগ করতে না পারে৷ কী রোদ, কী বৃষ্টি! সবকিছু সহ্য করে তিন মাস ধরে আলীকে পশুর মতো ঐ খাঁচার মধ্যে বন্দী থাকতে হয়েছিল৷ অবশেষে গত সেপ্টেম্বরে যখন ‘ট্রানজিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু' নামক একটি স্থানীয় এ্যাডভোকেসি গ্রুপ বিষয়টি সিঙ্গাপুরের শ্রম মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে আনে তখন তার অগ্নিপরীক্ষার অবসান ঘটে৷

Singapur Straßenszene
... সিঙ্গাপুরে আসাটা মোটেও ভালো কিছু হয়নি (ফাইল ফটো)ছবি: AP

আলী এখন একটি মেট্রো স্টেশনে এক বেলার বিনামূল্যের খাবারের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে৷ সে এখন দেশে ফিরে যেতে চায়৷ ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে আলী বলে, সিঙ্গাপুরে আসাটা মোটেও ভালো কিছু হয়নি, আমি বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাই৷ সেখানে সাহায্য করার জন্য বাবা, মা, ভাই, বোন আছে – কিন্তু এখানে আমার কেউ নেই৷ সিঙ্গাপুরের নির্মাণ ও জাহাজ শিল্পসহ শিল্প কারখানাসমূহ ২০০৭ সালে আট লাখ অভিবাসী শ্রমিক ভাড়া করে৷ কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অধিকাংশ প্রকল্প বাতিল অথবা বিলম্বিত হয়ে যায় ফলে শ্রম চাহিদা একদম নেমে যায়৷

ফিলিপাইন্সের অভিবাসীদের সংগঠন ‘মিগ্রান্তে'র প্রধান গ্যারি মার্টিনেস আশংকা করেন, ফিলিপাইন্সের প্রায় এক লাখ শ্রমিক ছাঁটাই হয়ে যাবে এবং ইতিমধ্যে অনেকেই চাকুরী হারিয়েছে৷ ফিলিপাইন্সের প্রতি দশজনের মধ্যে একজন দেশের বাইরে জাহাজ ও নির্মাণ শিল্প সহ কল-কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত আছে৷ তারা ২০০৮ সালে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছে৷ গত ডিসেম্বরে তাইওয়ানে চাকুরী হারানো ফিলিপাইন্সের নাগরিক ভ্যাঙ্গি প্যাটিসেরিয়া বলেন, ‘‘আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে এবং আমি ঋণের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন ফিলিপাইন্সে ফিরে যেতে চাই৷''

সম্প্রতি শ্রীলংকার বৈদেশিক শ্রমজনশক্তি বিষয়ক মন্ত্রী কেহেলিয়া রামবুকভেলা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান যে, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে কমপক্ষে দশ হাজার শ্রীলংকান শ্রমিকের চাকুরী হারানোর আশংকা করছেন৷ শ্রীলংকায় পোশাক শিল্পের পরে অভিবাসীদের পাঠানো টাকাই হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত৷ ভাই-বোন সবার কাছ থেকে ঋণ করে সিঙ্গাপুরে কাজ করতে আসা আলীরও অবস্থা একই রকম৷ অন্যরা যারা অবৈধভাবে প্রবাসেই থেকে যায় তাদেরকে অল্প বেতনে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয়৷ নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ' এর নারী অধিকার দপ্তরের উপ-প্রধান নিশা ভারিয়া বলেন, অর্থনৈতিক মন্দা এবং অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর এর প্রভাব থেকে বোঝা যায় তারা কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ৷