অন্যগ্রহের প্রাণী
২২ অক্টোবর ২০১২বিশ্বের অন্যতম নির্জন এলাকা চিলির অ্যাটাকামা মরুভূমি৷ তার কাছেই অবস্থিত ‘লা সিলা অবজারভেটরি'৷ ইউরোপীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেখানে গবেষণা করেন৷ কদিন আগে তারা নতুন একটি গ্রহ আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন, যার ভর পৃথিবীর ভরের সমান৷ তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গ্রহটির অবস্থান আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রে৷ কিলোমিটারের হিসেবে তার পরিমাণ চার আলোকবর্ষ, অর্থাৎ প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার৷
লা সিলা অবজারভেটরিতে তিনটি টেলিস্কোপ রয়েছে৷ জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার জন্য ইউরোপের ১৫টি দেশের অর্থায়নে গঠিত সংস্থা ‘ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি' বা ইএসও এই টেলিস্কোপগুলো ব্যবহার করে থাকে৷ নতুন এই গ্রহের সন্ধানে গত চার বছর ধরে চেষ্টার পর অবশেষে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির কারণে ১৯৯৫ সাল থেকে মূলত বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের বাইরে থাকা বিভিন্ন গ্রহের সন্ধান পাচ্ছেন৷ এভাবে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাতশোটি গ্রহের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন তাঁরা৷ আরও প্রায় ২,৩০০টির মতো গ্রহের খোঁজ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে৷
নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটি তার নিজস্ব সূর্যের খুব কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা কম, বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা৷ তবে আশার কথা হলো, যেহেতু আমাদের সৌরজগতের এতো কাছে একটা গ্রহ পাওয়া গেছে, তাই চেষ্টা করলে হয়তো ঐ এলাকায় এমন কোনো গ্রহ পাওয়া যেতে পারে যাতে প্রাণের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে৷
এদিকে, আগামী দশকে দুটি অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ স্থাপিত হতে যাচ্ছে৷ এর একটির নাম ‘স্ক্যোয়ার কিলোমিটার অ্যারে' বা এসকেএ৷ এই রেডিও টেলিস্কোপটি অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থাপিত হবে৷ ২০২৪ সাল থেকে এটা কাজ শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এসকেএ'তে প্রতিটি ১৫ মিটার প্রশস্তের তিন হাজার ডিশ থাকবে৷ আর থাকবে অনেক অ্যান্টেনা৷ ফলে এই টেলিস্কোপ দিয়ে বর্তমান টেলিস্কোপগুলোর চেয়ে প্রায় ১০ গুন বেশি দূরে দেখা যাবে৷ এছাড়া ১০ গুন বেশি পুরনো শব্দও শনাক্ত করতে পারবে এসকেএ৷ এর ফলে, অন্য গ্রহে যদি পৃথিবীর চেয়েও উন্নত সভ্যতা থেকে থাকে তাহলে এসকেএ টেলিস্কোপ দিয়ে সেই সভ্যতায় ব্যবহার হওয়া রাডার'কে ধরা সম্ভব হতে পারে, এমন মন্তব্য ব্রিটেনের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক অধ্যাপক বব নিকোলের৷
আগামী দশকে চালু হবে এমন আরেকটি শক্তিশালী টেলিস্কোপ হলো ইউরোপের ‘এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ' বা ই-ইএলটি৷ চিলির লা সিলা অবজারভেটরিতে স্থাপিত হবে এই অপটিক্যাল টেলিস্কোপটি৷ এটা দিয়ে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের চেয়েও ১৬ গুন বেশি পরিষ্কার ছবি তোলা যাবে৷
এই প্রকল্পে কাজ করছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট ইসোবেল হুক৷ তিনি বলেন, ই-ইএলটি দিয়ে গ্রহের খোঁজ করা ছাড়াও ঐ গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা তা দেখা যাবে৷ কেননা এটা দিয়ে কোনো গ্রহের পরিবেশে পানি, কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা অক্সিজেনের উপস্থিতি রয়েছে কিনা সেটা জানা সম্ভব হবে৷ হুক বলেন, যদি এই টেলিস্কোপে সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় তাহলে হয়তো দূর গ্রহে গাছপালার উপস্থিতিও শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে৷
প্রযুক্তির সম্ভাব্য এই অগ্রগতির কথা বিবেচনায় নিয়ে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মার্টিন রিস বলছেন, ‘‘আমি মনে করি, অন্য কোনো গ্রহে পৃথিবীর মতো অক্সিজেন স্তর আছে কিনা, প্রাণ আছে কিনা, আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই সেটা জানা সম্ভব হবে৷ এবং এটা আমার বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা৷''
নেদারল্যান্ডস ইনস্টিটিউট ফর রেডিও অ্যাস্ট্রোনমির পরিচালক মাইক গ্যারেট'ও মনে করেন, ‘‘নতুন যে দুটি টেলিস্কোপ স্থাপিত হতে যাচ্ছে তা দিয়ে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই এলিয়েনের সন্ধান পাওয়া সম্ভব হতে পারে৷''
জেডএইচ / এএইচ (রয়টার্স, এএফপি)