1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবোলা প্রতিরোধে করণীয়

১২ আগস্ট ২০১৪

এবোলা ভাইরাস নিয়ে প্রতিটি মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক৷ এ রোগ থেকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই – এ কথা সম্পূর্ণ সত্য না হলেও, এর জন্য প্রয়োজন সতর্কতা৷ জানা যাক বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কি কি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/1CsVT
Symbolbild - Ebola in Liberia
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/dpa

প্রতিদিন বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বিমানের মাধ্যমে চলাফেরা করছে মানুষ৷ যে কোনো জীবানু অসুস্থ রোগীর মধ্যে থেকে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে বিমান আরোহীদের মধ্যে৷ আর সেখান থেকে হাজারো মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে সেই জীবাণু৷ বৃহস্পতিবার এ কারণেই হয়ত যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার পশ্চামাঞ্চলের দেশ গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনে প্রয়োজন না হলে যেতে নিষেধ করেছে৷

এত নিরাপত্তা বা প্রতিরোধের কারণ হলো এই ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন বা উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো আবিষ্কার হয়নি৷ এখন ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ৬০ ভাগ৷ আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, লালা, শরীর থেকে বের হওয়া অন্য কোনো ধরনের রস থেকে অন্য ব্যক্তি খুব সহজেই সংক্রমিত হতে পারে৷ তবে ‘এয়ার বোর্ন' বা বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে এই সংক্রমণের ঘটনা এখনো জানা যায়নি৷

ডেল্টা এয়ারলাইন্স ডাকার, সেনেগাল, আক্রা, ঘানা, লাগোস ও নাইজেরিয়ায় চলাচল করে৷ ব্যবসায়িক কারণ দেখিয়ে এরই মধ্যে এয়ারলাইন্সটি ঘোষণা করেছে তারা সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ আফ্রিকার এ সব দেশে চলাচল করবে না৷

ইউরোপ

ইউরোপিয়ান বিমানগুলো পশ্চিম আফ্রিকায় চলাচল অব্যাহত রেখেছে৷ এয়ার ফ্রান্স, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং জার্মান বিমান সংস্থা লুফৎহানসা যথাক্রমে প্যারিস, আমস্টারডাম, লন্ডন ও ফ্রাংকফুর্ট থেকে পশ্চিম আফ্রিকায় চলাচল করছে৷ তবে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ গত মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে, জনস্বাস্থ্য সচেতনতার কথা মাথায় রেখে লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওন থেকে চলাচলকারী সব ফ্লাইট ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে৷

এদিকে লুফৎহানসা একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিমানে থাকাকালীন এবোলা সংক্রমিত হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই৷ অন্যদিকে ব্রাসেলসে বিমান ক্রুরা যাত্রীদের দেহের তাপ মাপার জন্য বিশেষ ‘থার্মো স্ক্যান' ব্যবহার করছে৷

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এবং জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে বর্ডার পেট্রোল এজেন্টরা লক্ষ্য রাখছেন, বাইরে থেকে আসা কোনো যাত্রীর দেহে এবোলা ভাইরাস সংক্রমণের কোনো লক্ষণ রয়েছে কিনা৷ এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে তাঁদের পুরোপুরি আলাদা করে ফেলার সব ব্যবস্থাই রাখা হয়েছে বিমানবন্দরে৷

২০০৩ সালে যখন ‘সার্স' ছড়িয়ে পড়েছিল, বিমানবন্দরগুলোতে এ ধরনের সতর্কব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল৷ সার্সের সংক্রমণে নিহত হয়েছিল ৭৭৪ জন৷

Afrika Ebola Ausbruch in Liberia
এখন পর্যন্ত এবোলা প্রতিরোধী ওষুধ বা টিকা বাজারে আসেনিছবি: picture-alliance/dpa

জার্মানিতে বিশেষ ব্যবস্থা

জার্মানির সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্ট৷ নানা দেশ থেকে প্রতিদিন লাখো মানুষ আসছেন এখানে৷ তাই বিমানে এবোলা সংক্রমিত রোগী থাকলে তাঁর আসনে লাল স্টিকার দেয়া থাকবে এবং তাঁকে স্বতন্ত্র করে রাখা হবে৷ তাঁর কাছাকাছি অবস্থানকারী যাত্রীদের আসনে হলুদ স্টিকার দেয়া থাকবে৷ বিমানটি অবতরণ করা মাত্রই রোগীকে সরাসরি বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে৷

এদিকে, সিয়েরা লিওনের এক অধিবাসী এবোলা আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হয়েছিল৷ হামবুর্গের ইউনি-ব্লিনিকুম এপেনডোর্ফে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি৷ রবিবার হাসপাতালের মুখপাত্র জানিয়েছেন, পরীক্ষা করে দেখা গেছে ঐ রোগী এবোলা আক্রান্ত নয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে এবারে এবোলার সংক্রমণে এখন পরযন্ত ৯৬১ জন প্রাণ হারিয়েছে৷ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭৭৯ জন৷

সংক্রমণ

সাধারণত এবোলা ভাইরাস বাতাসে নয়, দেহের তরল পদার্থ রক্ত, বীর্জ, লালা ইত্যাদির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়৷ সরাসরি শারীরিক সংযোগের মাধ্যমে ঘটে থাকে সংক্রমণ৷ যেমন ভাইরাসে আক্রান্ত কারো সেবা করলে৷ এ কারণে হাসপাতালগুলিতে এর বিস্তৃতি লক্ষ্য করা যায়৷ এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মরদেহ স্পর্শ করলেও সংক্রমণ হতে পারে৷ ভাইরাসরা বাহকের প্রতিটি সেলেই বিস্তৃত হতে পারে৷ রক্ত ও দেহ নিসৃত রসের মাধ্যমে এবোলা সংক্রমণের সম্ভাবনা শতকরা ৯০ ভাগ৷

উপসর্গ

সাধারণত শরীরের তরল পদার্থ যেমন রক্ত, বীর্জ, লালা ইত্যাদির মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনে সংক্রমিত হয় এবোলা ভাইরাস৷ ক্ষুদ্র কোনো ক্ষত দিয়েই শরীরে ঢুকে পড়তে পারে এই ভাইরাস৷ আক্রান্ত হওয়ার চার থেকে ১৬ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণগুলি দেখা যায়৷ আক্রান্তরা জ্বর, শরীর কাঁপুনি, মাথাব্যথা, পেশিব্যথা, অরুচি এসব উপসর্গের কথা বলেন৷ দুই থেকে ২১ দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি দুর্বল হতে থাকে৷ অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হয়৷ বিশেষ করে পেট ও অন্ত্রের নালী এবং প্লীহা ও ফুসফুস আক্রান্ত হয়, যা ভুক্তভোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়৷

12.08.2014 DW Deutschland Heute Ebola
ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ৬০ ভাগ

কোনো ওষুধ নেই

এখন পর্যন্ত এবোলা প্রতিরোধী ওষুধ বা টিকা বাজারে আসেনি৷ রোগীকে উপসর্গগুলি কমানোর ওষুধ দেয়া হয়৷ বিগত বছরগুলিতে এই ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা বের করার জন্য বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে৷ কিন্তু মানবদেহে প্রয়োগ করার অনুমোদন এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি৷

এপিবি/ডিজি (এপি, ডিপিএ, রয়টার্স)