এটা কি জলবায়ু পরিবর্তন?
বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা – এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য কি জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী? নাকি এটা কাকতালীয়? ‘ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ একটি নতুন প্রতিবেদনে এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে৷
আবহাওয়া এবং জলবায়ু
কখন আপনি এটাকে জলবায়ু পরিবর্তন বলবেন? যখন কয়েকদিন ধরে মুষলধারে অবিরাম বৃষ্টি হবে? নাকি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাবে জমির ফসল? নাকি একটা পর একটা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে কোনো কারণ ছাড়াই? এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে আসলেই জলবায়ু পরিবর্তনের কোন যোগসূত্র আছে কিনা – তা বের করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন গবেষকরা৷
ঝুঁকি বাড়ছে
এখনো বিজ্ঞানীদের মনে কোনো সন্দেহ নেই যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার ব্যাপক রকমফের হচ্ছে৷ একটি গবেষণায় তাঁরা ২০১২ সালের ১২টি দুর্যোগ বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, এর মধ্যে অর্ধেক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ঘটেছে৷
দাবদাহ এবং খরার জন্য দায়ী
যুক্তরাষ্ট্রে দাবদাহ এবং খরার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করা হয়েছে৷ ২০১২ সালের জুলাই মাসে সেখানে ঐতিহাসিকভাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে৷ এছাড়া কম বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানে গম এবং শস্যের ফলনও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
সুমেরুর বরফ গলছে
আর একটি কারণ সুমেরুর বরফ৷ ২০১২ সালে আগের বছরগুলোর তুলনায় অধিক মাত্রায় বরফ গলেছে সেখানে৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা হঠাৎ করে হয়নি বরং গ্রীষ্মকালীন প্রচণ্ড গরম তাপমাত্রা এর জন্য দায়ী৷ তাঁদের ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তনই এর জন্য দায়ী৷
ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডি
ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডি যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় ছিল৷ এর ব্যাপ্তি ছিল ৩ হাজার কিলোমিটার৷ স্যান্ডি এত শক্তিশালী হওয়ার কারণ ২০১২ সালে আটলান্টিক বা অতলান্ত মহাসাগর স্বাভাবিকের চেয়ে উত্তপ্ত ছিল৷ বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনকেই এর জন্য দায়ী করেছেন৷
বৃষ্টি এবং বন্যা
তবে অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে গবেষকরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি৷ ইউরোপ, চীন, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ায় প্রবল বৃষ্টিপাতকে প্রকৃতির স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছেন তারা৷
সোমালিয়া এবং কেনিয়ার খরা
এমনকি সোমালিয়া ও কেনিয়ার ভয়াবহ খরার কারণ জলবায়ু পরিবর্তন নয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ বলছেন, এটা আবহাওয়ার বৈচিত্রের কারণে হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নয়৷ তবে এ বিষয়ে তারা পুরোপুরি নিশ্চিত নন৷
ঘটনা এবং সংস্কার
জলবায়ু আসলেই বেশ জটিল ব্যাপার৷ বাস্তবে বিশ্বের প্রকৃতিতে কি কারণে কি ঘটছে, তা অনেক উপাদানের দ্বারা প্রভাবিত৷ তবে একটা বিষয় নিশ্চিত যে, জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে৷ আর একটি বিষয় হলো মানুষের আচরণ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী৷ এ কারণেই সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে, সেই সাথে দ্বীপগুলোর জন্য বাড়ছে ঝুঁকিও৷
সামুদ্রিক প্রাণীরা ঝুঁকির মুখে
কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সাগরে অম্লতার পরিমাণ বেড়ে গেছে৷ ফলে প্রবাল, শামুক, ঝিনুক – এগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷
অতিরঞ্জন বাস্তব বর্জিত
সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মানুষের মধ্যে খুব একটা দুশ্চিন্তা নেই৷ এর কারণ হয়ত ইস্যুটি নিয়ে অত্যধিক মাত্রায় আলোচনা৷ কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো, এর ফলে বিজ্ঞানের সত্যতা হুমকির মুখে পড়বে, হুমকির মুখে পড়বে মানবজাতিও৷