1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক শক্তিশালী নারী - এক কঠিন পেশা

২৭ ডিসেম্বর ২০১১

আফগানিস্তানের নারীদের জন্য জীবনটা এমনিতেই যথেষ্ট কষ্টকর, তার ওপর কোন মেয়ে যদি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নিতে চান, তাহলে অবস্থাটা আরো জটিল হয়ে যায়৷

https://p.dw.com/p/13Zfv
তামানা জামিলি মাজার-এ-শরিফে মিডিয়া স্টাডিজ বিষয়ে পড়ছেনছবি: Tamana Jamily

তামানা জামিলি এমনই একজন তরুণ সাংবাদিক৷ মাজার-এ-শরিফে মিডিয়া স্টাডিজের ছাত্রী৷ নিজ শহরের রেডিও স্টেশনে তিনি খণ্ডকালীন কাজ করছেন৷ জার্মানির ফ্রিডরিশ এবার্ট ফাউন্ডেশানের বৃত্তি নিয়ে কাজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বন'এর ডয়চে ভেলেতে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন এখন৷ যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশে সাংবাদিক হিসাবে জীবনের যে-ঝুঁকি রয়েছে, সে সম্পর্কে তামানা জামিলির সঙ্গে কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের মার্টিনা ব্যার্ট্রাম৷

ডিডাব্লিউ : আফগানিস্তানের নারী সাংবাদিকদের জন্য এই পেশা কতটা বিপজ্জনক?

সাংবাদিকতা এমনিতেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ ও কঠিন কাজ৷ নারী সাংবাদিকদের জন্য এটা আরো দুরূহ, কেননা মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতার একটা অতিরিক্ত ঝুঁকি সারা দেশেই রয়েছে৷ একারণে নারী সাংবাদিকরা বিভাগীয় দপ্তরে বসে কাজ করেন, ঘটনাস্থলে রিপোর্ট করতে খুব কমই যান৷ তবুও এই পেশায় যেতে অনেক মেয়ে আগ্রহী হচ্ছেন৷ আমাদের মিডিয়া স্টাডিজে ৪৫ জন পুরুষ ও ৪ জন মেয়ে পড়াশোনা করছেন৷ এ বছর প্রথম সেমিস্টারেই ইতিমধ্যে ১৫ জন মেয়ে ভর্তি হয়েছেন৷ সাংবাদিকতার পেশায় খুবই আগ্রহী আমি৷ আমার বিশ্বাস, অনেক মেয়ে ঝুঁকি সত্ত্বেও এই পেশায় আসতে আগ্রহী৷

খবর পরিবেশের ক্ষেত্রে সীমারেখা কোথায়, ট্যাবুগুলিই বা কী?

সাংবাদিকদের জানা উচিত যে, তাঁদের দেশের আইনি কাঠামোর মধ্যে কাজ করতে হবে৷ জাতীয় স্বার্থবিরোধী বা ইসলাম ধর্ম বিরোধী কোনো খবর দেয়া চলবেনা৷ যুদ্ধ সংক্রান্ত কোন খবর বা স্থানীয় কিংবা জাতীয় পর্যায়ের কোন বিষয়ের ওপর খবর দেয়ার পরিকল্পনা করলে সাংবাদিককে অবশ্যই জানতে ঠিক কী তিনি লিখতে চাইছেন৷ স্থানীয় মিলিশিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে অনেক সাংবাদিক নিজের লেখার ওপরই সেন্সর করে থাকেন৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায়না৷

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স-এর তথ্য অনুযায়ী সংবাদের স্বাধীনতার দিক দিয়ে তালিকাভুক্ত ১৭৮ দেশের মধ্যে আফগানিস্তানের স্থান ১৪৭ তম৷ আপনি কী এই বিষয়ে কোন উন্নতি লক্ষ করছেন?

অনেক আফগান সাংবাদিক মৃত্যু বা আক্রমণের ভয়ে ভীত এবং অনেকে অপহৃত হয়েছেন৷ প্রেসের স্বাধীনতার ব্যাপারটি এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন৷ তবে তালেবান শাসনের পতনের পর এ ক্ষেত্রে যে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়৷ সংবাদ মাধ্যমে তালেবানি একাধিপত্য দূর হয়েছে৷ এখন বহু বেসরকারি মিডিয়া কাজ করছে৷ সাংবাদিকরা সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করেন এবং সমস্যা হলে সেখান থেকে সাহায্য পেতে পারেন৷ দেশে আজ নানা গ্রুপ গড়ে উঠেছে, যেখানে সাংবাদিকরা দেখা সাক্ষাৎ করতে পারেন, তাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন, অনেক সময় আত্মরক্ষাও করতে পারেন৷ আমি রাবেয়া বালকি রেডিও তে কাজ করি৷ এটি বিশেষ করে মেয়েদের জন্য অনুষ্ঠান করে থাকে৷ আমরা স্পর্শকাতর বিষয়গুলি যেমন মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেয়া, পারিবারিক সহিংসতা কিংবা নির্যাতিতা নারীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র এ সব বিষয়ে আলোচনা করি৷ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এটা নিশ্চয়ই এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া৷

স্বাধীন প্রেস আফগান সমাজকে কী ভাবে সাহায্য করতে পারে?

আমি মনে করি ভাল সাংবাদিকতা সমাজকে একতাবদ্ধ করতে সাহায্য করে৷ কেননা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে রিপোর্ট করা হয়৷ মিডিয়া আফগান সমাজের সহিংসতা দূর করতে সাহায্য করতে পারে৷ সাংবাদিকতা শিক্ষার ঘাটতি কিছুটা পূরণ করতে পারে৷ আমরা এখন মানুষের কাছাকাছি এসেছি৷ আমরা তাদের সমস্যা ও আশা আকাঙ্খা বুঝতে পারি৷ আমরা মূল তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি৷ আমরা মানুষকে সংবেদনশীল করে তুলতে পারি, করে তুলতে পারি কৌতূহলী ও পরিপক্ক৷

সাংবাদিকতা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করতে পারে৷ আমরা আমাদের সমাজকে নিজের ভূমিকা বুঝতে সাহায্য করি৷ সেই সাথে অন্যান্য জাতি ও সংস্কৃতিকে অনুধাবন করতেও সহায়তা করি৷ ভাল সাংবাদিকতা এ সব বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করে৷

আপনি মেয়েদের জন্য রেডিও প্রোগ্রাম করেন৷ আপনার শ্রোতারা সাধারণত কী শুনে থাকেন?

পড়াশোনার পাশাপাশি আমি মাজার-ই-শরিফে বাল্কি রেডিও তে কাজ করছি৷ এটি একটি স্থানীয় রেডিও স্টেশন বিশেষ করে মেয়েদের জন্য৷ প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত আমরা খবর, বিনোদনমূলক ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকি৷ আমরা মেয়েদের শিক্ষার অধিকার আদায়ে অনুপ্রাণিত করতে চাই৷ মেয়েদের জন্য কোথাও নতুন স্কুল খুললে, সে সম্পর্কে নানা রিপোর্ট করি৷ আমাদের সমাজে নারী শিক্ষা কতটা জরুরি, সে বিষয়টি তুলে ধরি৷ আমাদের আশা, এইভাবে আমাদের সমাজে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে পারব৷

সাক্ষাত্কার: মার্টিনা ব্যার্ট্রাম

ভাষান্তর: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য