1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এইচ টি ইমাম এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচন

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৫ নভেম্বর ২০১৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাবশালী উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করে এখন প্রধানমন্ত্রীরই বিরাগভাজন হয়েছেন৷ বিএনপি বলছে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা মুখ ফসকে সত্য কথা বলে ফেলেছেন৷

https://p.dw.com/p/1Do04
Bangladesch Parlamentswahlen
ছবি: AFP/Getty Images

বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি৷ ঐ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷ ভোট হয় ১৪৬টি আসনে৷ নির্বাচন কমিশন এসব আসনে গড়ে ৪০ ভাগ ভোট পড়ার দাবি করলেও বাস্তবে ১৫ থেকে ২০ ভাগের বেশি ভোট পড়েনি বলে ধারণা বিশ্লেষকদের৷ এই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩৫টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে৷ আর জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসন নিয়ে সংসদে বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷

নির্বাচন নিয়ে দেশে বিদেশে সমালোচনা রয়েছে ব্যাপক৷ বিএনপি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে আরেকটি নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে৷ আর ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী বন্ধু দেশগুলোও সংলাপ এবং সবদলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচনের কথা বলছেন

Bangladesch Parlamentswahlen Gewalt in Rajshahi
ছবি: Reuters

এই অবস্থায় দু'দিন আগে ঢাকায় ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘...নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি৷ তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে৷'' ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিসিএস-এর চাকরি নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তোমাদের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হবে৷ তারপরে আমরা দেখব৷''

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এইচ টি ইমামের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি যে কারচুপির আশঙ্কা করেছিল, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের কথায় তা সত্য বলে প্রমাণিত হলো৷ তিনি মুখ ফসকে সত্য কথা বলে দিয়েছেন৷''

আর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এইচ টি ইমামকে বলেছেন, ‘‘কথা বলুন সতর্ক হয়ে৷'' তিনি বলেন, ‘‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিজয় কোনো বাহিনীর ক্রেডিট নয়৷ এটা মানুষের ক্রেডিট৷ জনসমর্থনের ওপর ভিত্তি করে সরকার ক্ষমতায়৷ আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি বলে আমাদের এ অবস্থা৷ পুলিশ বাহিনী দিয়ে একে বিভাজন করা যাবে না৷ পুলিশ রাষ্ট্রের, সবার৷''

এইচ টি ইমামের কথায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ শুক্রবার সংসদীয় বোর্ডের সভায় তিনি বলেছেন, ‘‘এইচ টি ইমাম ওই দিন সম্পূর্ণ অকারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বক্তব্য দিয়েছেন৷'' সরকারের মন্ত্রী এবং বোর্ডের সদস্যরা দলীয় এবং সরকারি পদ থেকে এইচ টি ইমামকে অপসারণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন৷ নেতারা সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে দেয়া আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘তিনিও সরকার এবং দলকে বিপদে ফেলেছিলেন৷ তাঁকে শাস্তি দেয়া হয়েছে৷ সরকার ও দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে৷ এইচ টি ইমামও একইভাবে দল ও সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন৷''

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সাবেক আমলা এইচ টি ইমাম প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন৷ নীতি নির্ধারণে তিনি প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন৷ ৫ জানুযারির নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন৷ বর্তমান সরকার শপথ নেয়ার পর তিনি মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হন৷

এইচ টি ইমাম বঙ্গবন্ধুর আমলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ছিলেন৷ তবে তিনি ১৫ আগস্টের পর খোন্দকার মোশতাকের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানও পরিচালনা করেন৷

এই এইচ টি ইমাম কেন ৫ জানুযারি নির্বাচন নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করলেন তা ভাবিয়ে তুলেছে সরকারের শীর্ষ মহলকে৷ কারণ সরকারের লোকই ৫ জানুয়ারি নির্বাচন কীভাবে হয়েছে তা প্রকাশ করে দিলেন৷ এটা কোনো ষড়যন্ত্র বা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তিনি ইচ্ছে করে বলেছেন কিনা তা নিয়ে সরকারে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে৷ কারণ তাঁর এই বক্তব্য সরকারকে এরই মধ্যে বিব্রত করেছে, ফেলতে পারে বেকায়দায়৷ বিএনপি যদি এটাকে দেশে এবং বিদেশে ইস্যু করতে পারে তাহলে সুবিধা পাবে বলে মনে করেন সরকারের নীতি নির্ধারকরা৷ তাই তাঁরা মনে করেন এইচ টি ইমামকে ষড়যন্ত্রকারী হিসবে বাদ দিয়ে দিলে হয়ত পরিস্থিতি সামাল দেয়া সহজ হবে৷

কার স্বার্থে কী উদ্দেশ্যে এইচ টি ইমাম এই ‘বেফাঁস' মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে অনেক তদন্ত করা যায়৷ যায় অনেক গবেষণা করা৷ তবে তাঁর বক্তব্যে যে তথ্য উঠে এসেছে তা কী সত্য? তিনি সরকারের লোক তাই সরকারের উচিত তা পরিষ্কার করা৷ এইচ টি ইমাম ওই বক্তব্য দেয়ার পর থেকে চুপ রয়েছেন৷ কেন চুপ? তিনি কি আনমনে সত্য কথাই বলে ফেলেছেন?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য