1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সামাজিক স্বীকৃতি

রায়না ব্রেয়োর/এআই১৮ ডিসেম্বর ২০১২

ত্রিশ বছর আগে এইডস ছিল মৃত্যুদণ্ডের সামিল৷ কিন্তু বর্তমানে বহু এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত মানুষ জার্মানিতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন৷ চিকিৎসা খাতের অগ্রগতির ফলে এমনটা সম্ভব হয়েছে৷ তবে সমস্যা রয়ে গেছে৷

https://p.dw.com/p/174NB
ছবি: Fotolia/Africa Studio

‘‘আমি দুই বা তিন বছরের জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনা করি'', বলছিলেন মানি৷ তাঁর কথায়, ‘‘এটাই বাস্তবসম্মত –কেননা প্রত্যাশা আর বাস্তবের ফারাক অনেক৷'' মাত্র ২৩ বছর বয়সে মানির শরীরে এইচআইভি'র উপস্থিতি ধরা পড়ে৷ সেটা বিশ বছর আগের কথা৷ তখন তিনি মনে করেছিলেন জীবনের ত্রিশতম জন্মদিনটাও হয়ত পার করা যাবে না৷ কিন্তু না, মানি এখনো বেঁচে আছেন৷

নিজের শরীরে এইচআইভি'র আগমন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পারিবারিক চিকিৎসক আমার রোগনির্ণয় করেন৷ এইচআইভি পজেটিভ এক ছেলের সঙ্গে তখন আমার সম্পর্ক ছিল৷ চিকিৎসক যখন আমার রোগনির্ণয় করেন, আমি চারদিকে অন্ধকার দেখতে পাই৷ আমি তখন ভেবেছিলাম, আমার সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কটা ধরে রাখবো৷ কিন্তু তা হয়নি, মাত্র ছয় মাসের মাথায় আমাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়৷ একদিকে এইচআইভি সংক্রমণ, অন্যদিকে নিঃসঙ্গ জীবন৷ নিজের ভবিষ্যত নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে যাই৷''

মানি বর্তমানে গোটা জার্মানিতেই পরিচিত৷ বিশ্ব এইডস দিবসের পোস্টারে শোভা পাচ্ছেন তিনি৷ তিনি এখন সতর্ক, তবে আশাবাদী৷

জার্মানিতে বর্তমানে মোটামুটি আটাত্তর হাজার এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছেন৷ ২০১১ সালে ৩,৩১০ ব্যক্তি নতুন এইচআইভি আক্রান্ত হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছেন৷ এই ভাইরাস মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়৷ আক্রান্তের শরীরে ৩০ ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে পারে যা একসময় এইডসে রূপ নিতে পারে৷ সাধারণত এইচআইভি আক্রান্তের শরীরে দুই বা ততোধিক রোগ দেখা দিলেই তাকে এইডস আক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷

Peace Summit Award für Annie Lennox
জার্মানিতে প্রায় ৭৮ হাজার এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছেনছবি: AP

বন এইডস ফাউন্ডেশনের উলরিশ হাইডি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিশ বছর আগে এইচআইভির চিকিৎসা তেমন একটা ছিল না বললেই চলে৷ তখন মাত্র একটি চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল, যা তেমন একটা কার্যকর ছিল না এবং রোগীর আয়ুষ্কাল তেমন একটা বাড়াতে পারতো না৷ তখন গড়ে একজন এইডস রোগী ২২ থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত বাঁচতেন৷ ১৯৯৬ সালে অবশ্য পরিস্থিতি বদলে যায়৷ সেসময় এক ধরনের ওষুধ বাজারে আসে, যা এই ভাইরাসের সংক্রমণের হার কমাতে সক্ষম৷''

মানি জানান, তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন, কেন না শুরুর দিকে তাঁর দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘রোগনির্ণয়ের পাঁচ থেকে ছয় বছর পর আমি প্রথম থেরাপি গ্রহণ করি৷'' তখন তিনি দিনে তিনবেলা তিনটি পিল খেতেন৷ সেগুলো তাঁকে খেতে হতো একেবারে ঘড়ি ধরে, সঠিক সময়ে৷ ওষুধ গ্রহণের এক ঘণ্টা আগ পর্যন্ত কোনো কিছু খাওয়া বারণ ছিল৷ এখন মানিকে শুধু সকালে দুটি পিল খেতে হয়৷

হাইডি জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গবেষকরা কিছু অ্যান্টি-এইচআইভি চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা এই ভাইরাস প্রতিরোধে বেশ সহায়ক৷ জার্মানিতে তাই অনেক রোগীকে সফলভাবে চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হচ্ছে এবং তাঁরা এইচআইভি পজেটিভ হওয়া সত্ত্বেও সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারছেন৷ অবশ্য, বিশ্বের অনেক দেশে এখনো এই ভাইরাসের উপস্থিতি ‘মৃত্যুদণ্ড'-ও বয়ে আনে৷

জার্মানিতে সমস্যা অন্যত্র৷ এখানে এইচআইভি আক্রান্ত প্রতি তিনজনের মধ্যে দু'জনই চাকুরি করছেন কিংবা শিক্ষানবিস হিসেবে কাজ করছেন৷ কিন্তু এঁদের খুব কম সংখ্যকই তাঁদের কর্মক্ষেত্রে প্রকাশ্যে স্বীকার করতে পারেন যে, তাঁরা এইচআইভি আক্রান্ত৷ এই রাখঢাকের চেষ্টা কার্যত সমাজে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার তাগিদে৷ কেননা, অনেকেই বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারেন না৷

মানি অবশ্য ব্যতিক্রম৷ তিনি তাঁর কর্মস্থলে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন এইচআইভি আক্রান্তের কথা৷ মানির কথায়, ‘‘কেউ কেউ আমার এই সাহসিকতার তারিফ করেছেন৷''

উল্লেখ্য, পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের তুলনায় জার্মানিতে এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বেশি৷ গত ২৫ বছর ধরেই জার্মান সরকার এই বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে৷ ফলে পাশের দেশ নেদারল্যান্ডস বা সুইজারল্যান্ডের তুলনায় জার্মানিতে নতুন এইচআইভি সংক্রমণের হার কম, জানান হাইডি৷

এই এইচআইভি বিশেষজ্ঞ অবশ্য একটি আশঙ্কার কথাও জানালেন৷ ১৫ বছর আগে পরিচালিত এক জরিপের সূত্র ধরে তিনি বললেন, তখন ৩০ শতাংশ মানুষ মনে করতো, এইডস তাদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে৷ কিন্তু এখন খুব কম মানুষই এমনটা মনে করে৷ ভবিষ্যতে তারা এই বিষয়ে উদাসীন হয়ে পড়তে পারে, তখন এই সমস্যা বড় আকারে দেখা দিতে পারে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য