1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পোশাক শ্রমিকদের ঈদ

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৬ জুলাই ২০১৪

ঈদের বাকি আর মাত্র তিনদিন৷ কিন্তু পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বড় একটি অংশ এখনো তাঁদের বেতন, ভাতা পাননি৷ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শনিবারের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন, ভাতা পরিশোধ করার কথা৷

https://p.dw.com/p/1Cj0F
শনিবারের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন, ভাতা পরিশোধ করার কথাছবি: Reuters

কিন্তু শনিবার তাঁরা তা পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা৷ গার্মেন্টস শ্রমিক নেতারা জানান, অনেক পোশাক কারখানায় পুরনো বেতনই বকেয়া আছে৷ তাই চলতি মাসের বেতন আর উৎসব ভাতা তাদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না৷ বেতন, ভাতা না পাওয়ার আশঙ্কায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন৷

প্রতিদিন বিক্ষোভ

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবনের সামনে এখন প্রতিদিনই শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন৷ বৃহস্পতিবার বিজিএমইএ ভবনের সামনে বেতন, ভাতার দাবিতে মিরপুরের অপসোনিন গ্রুপের পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন৷ এর আগের দিন তোবা গ্রুপের ১,২০০ শ্রমিক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন মাসের বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে বিজিএমইএ ভবন অবরোধ করে রাখেন৷ একইদিন মিরপুরের ফোর উইংস এবং সাভারের হেমায়েতপুরের দস্তগীর অ্যাপারেলসের শ্রমিকরাও বিজিএমইএ ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন৷ এমনকি শুক্রবারেও অনেক শ্রমিক ভীড় করেন বিজিএমইএ ভবনের সামনে৷ শনিবার এবং রবিবার এই বিক্ষোভ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

Bangladesch Textilarbeiterinnen in Dhaka Demonstration
বিজিএমইএ ভবনের সামনে এখন প্রতিদিনই শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন (ফাইল ছবি)ছবি: AP

বিক্ষোভরত শ্রমিকরা জানান, ঈদের আগে তাদের বেতন-ভাতা দেয়া হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা এখনো পাওয়া যায়নি৷ তাই তারা বাধ্য হয়ে পথে নেমেছেন৷ তাদের একজন আরিফ হাসেন জানান, চলতি মাসের বেতন আর উৎসবভাতাতো দূরের কথা, বকেয়া বেতনও দেয়া হচ্ছে না৷ বকেয়া বেতন পেলেও হয়তো ঈদ করতে বাড়ি যেতে পারতেন৷ কিন্তু এখন আর কোনো আশাই নেই৷ আর ফরিদা বেগম বলেন, বেতন-ভাতা চাইলেই ছাঁটায়ের হুমকি দেয়া হয়৷ কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না৷

আগের কথা

১৫ জুলাই শ্রম মন্ত্রণালয়ে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ এবং শ্রমিকদের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বৈঠক করেন৷ বৈঠক শেষে তখন মন্ত্রী জানান, চলতি মাসের বেতনের অংশ এবং উৎসবভাতা ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ মালিকেরাও এতে সম্মত হয়েছেন৷

এর আগে গত মাসে ৫০৬টি পোশাক কারখানায় ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়ে শিল্প পুলিশ স্বরাষ্ট্র ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়৷ আর পুলিশের বিশেষ শাখার প্রতিবেদনে বলা হয় নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, সাভার, টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকার ১২৪টি পোশাক কারখানায় গত মে মাসের বেতনই দেওয়া হয়নি৷

সারা দেশে ৩,৬৫৫টি পোশাক কারখানা বিজিএমইএ'র সদস্য৷ এর বাইরে সদস্য নয় এমন পোশাক কারাখানাও কম নয়৷

শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, যেসব পোশাক কারাখানা সাবকন্ট্রাকটিং-এ কাজ করে এবং বিজিএমইএ'র সদস্য নয় তাদের শ্রমিকদের অবস্থা খুবই খারাপ৷ তাদের তিন-চার মাসের বেতন বকেয়া পড়ে আছে৷ তিনি বলেন, ঈদ বা কোনো উৎসব এলেই পোশাক কারখানার মালিকরা নানা টালবাহানা শুরু করে৷ তাদের এই টালবাহানার মূল উদ্দেশ্য উৎসব ভাতা না দেয়া৷ আবার কেউ কেউ ঈদের আগে কারখানা বন্ধ করে দেয়৷

আর শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, শনিবারের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখন রবি-সোমবারের কথা বলা হচ্ছে৷ এর মানে হলো ঈদের আগেরদিন পর্যন্ত শ্রমিকদের ঝুলিয়ে রেখে শেষ পর্যন্ত বেতন-ভাতা না দেয়া৷ তিনি শনিবারের মধ্যে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি জানান৷

বিজিএমইএ-র বক্তব্য

এদিকে, বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্পখাত৷ এখানে সাড়ে ৩ হাজার কারখানায় ৪৪ লাখ শ্রমিক কাজ করেন৷ এই শিল্প যত দিন থাকবে, তত দিন অনিশ্চয়তাও থাকবে৷ ব্যবসায় সব সময়ই লাভ-লোকসান থাকে৷ তারপরও কারখানার মালিকদের আমরা বলে দিয়েছি, যে-কোনো উপায়ে ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে হবে৷'' তিনি বলেন, ‘‘মালিকদের বেশিরভাগই শনি ও রবিবারের মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধ করে দেবেন৷''

শিল্প পুলিশের বক্তব্য

শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক আবদুস সালাম দাবি করেছেন এরই মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ কারখানা তাদের শ্রমিকদের বেতন দিয়েছে বলে বিজিএমইএ তাঁকে জানিয়েছে৷ তিনি আশা করেন সরকারের ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে ৯০ শতাংশ কারখানা বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে৷ তবে ১০ শতাংশ পোশাক কারখানা পারবে বলে মনে হয় না৷ ঐসব কারখানার ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য