1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ইহুদি বিদ্বেষের অবসান ঘটেনি জার্মানিতে’: সমীক্ষা

১৪ নভেম্বর ২০১১

ইহুদি বিদ্বেষ৷ জার্মানির যে কারণে কুখ্যাতি, তা কিন্তু সমাজে রয়ে গেছে এই আজকের দিনেও৷ সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এই সত্য উঠে আসায় বিষয়টিতে বেশ বিস্মিত সকলেই৷ যদিও জার্মানি এই সমস্যার মোকাবিলায় উদ্যোগ নিচ্ছে যথেষ্ট৷

https://p.dw.com/p/139yR
জার্মান ভাষায় উচ্চারণ ‘ইউডে’৷ যা প্রায় গালির নামান্তরছবি: AP

জার্মানির তরুণ প্রজন্ম ‘জিউ’ বা ইহুদি শব্দটিকে একটি গালি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে৷ ‘তুমি আউসভিৎস-এর যোগ্য’ এই বাক্যবন্ধটিও এই জার্মানিতে আজও একটি বেশ পরিচিত অপমানের উল্লেখ৷ যার ব্যবহার হামেশাই শোনা যায় সমাজে৷ আউসভিৎস, সেই কুখ্যাত নাৎসি মৃত্যুক্যাম্প৷ যেখানে লাখে লাখে ইহুদিকে পরিকল্পিতভাবে ডেথ চেম্বারে ঢুকিয়ে হত্যা করত নাৎসি জমানার জার্মানি৷

নাৎসি জার্মানির সেই ইহুদি বিদ্বেষী মানসিকতা সমাজে কেমন রয়েছে, তা আদৌ দূর হয়ে গেছে কিনা, তা নিয়েই বিশেষ গবেষণা চালিয়েছিল জার্মান সরকার৷ জার্মান সরকারের এই উদ্যোগে একদল বিশেষজ্ঞকে নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল একটি প্যানেল৷ যে গবেষণার রিপোর্ট জানা গেছে সম্প্রতি৷ তাতেই উঠে এসেছে এই হতাশ করা তথ্য৷

তথ্য বলছে, জার্মানরা তাদের ব্যক্তিগত বৃত্তে, কোন পানশালায় কিংবা খেলার মাঠে কিংবা অনলাইনে এ ধরণের ইহুদি বিদ্বেষ প্রদর্শনে বেশ সক্রিয়৷ বলা হয়েছে, অন্তত বিশ শতাংশ মানুষ এ বিষয়ে কোনরকম রাখঢাক বজায় রাখে না জার্মানিতে৷ আর জার্মানিতে বসবাসকারী ইহুদি সম্প্রদায় প্রায়শই এই বিদ্বেষ আর অপমানের শিকার হন সমাজে৷ যদিও জার্মানিতে আইন করে ইহুদি বিদ্বেষ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা আছে৷ কিন্তু, তাতে কিছু এসে যায়না৷

এই প্যানেলে যে বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যুইশ স্টাডিজ বিভাগের প্রধান ইওহানেস হাইল এবং নামজাদা ব্রিটিশ ঐতিহাসিক পিটার লংগারিশ৷ একাধিক সাম্প্রতিক সমীক্ষার ওপরে ভিত্তি করেই তাঁরা তৈরি করেছেন এই রিপোর্ট৷ যেসব সমীক্ষার জন্য পুলিশের কাছে পাওয়া অপরাধমূলক ঘটনার ফিরিস্তি অবশ্যই কাজে লাগানো হয়েছে৷ পুলিশের দেওয়া তথ্য বলছে, ৯০ শতাংশ ইহুদি বিদ্বেষী অপরাধ করে থাকে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা৷ যাদের নব্য নাৎসি বলে ব্যাখ্যা করা হয়৷ এরা সচরাচর গোলমেলে আর উস্কানিমূলক মন্তব্য করে ইহুদিদের বিরক্ত করে, ইহুদিদের সমাধিক্ষেত্রগুলিতে আবর্জনা ফেলে বা অপমানজনক কথাবার্তা লিখে থাকে, হলোকাস্টকে অস্বীকার করে, আর অল্পমাত্রাতে হলেও ইহুদিদের ওপর হামলা চালায়৷ সময় সুযোগ পেলে৷ মিডিয়াতে সচরাচর যে ছবিটা তৈরি করা হয়, যে মুসলিম সম্প্রদায় আর আরব দুনিয়া থেকে আসা মানুষজনই ইহুদি বিদ্বেষ বেশি দেখিয়ে থাকে, এই রিপোর্ট কিন্তু বলছে, তা ঠিক নয়৷

কিন্তু এই ইহুদিবিদ্বেষের মনোভাব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এতগুলো বছর পেরিয়ে যাবার পরেও কী করে জার্মান সমাজে রয়ে গেল? এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন৷ জার্মানির শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে তাঁরা বলছেন, স্কুলের শিক্ষার সিলেবাসে শুধুমাত্র নাৎসি জার্মানির অত্যাচারের ইতিহাস আর ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির বিশেষ দায়িত্ববোধের কথা বলাটাই যথেষ্ট নয়৷ এ বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দিয়ে স্কুল পর্যায় থেকে বোঝাতে হবে যে এই বিদ্বেষী মনোভাব অন্যায়৷ এছাড়া সাম্প্রতিক বিশ্বে ক্রমবর্দ্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের এই পরিস্থিতিতে ইহুদি বিদ্বেষ নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে৷ কারণ, অর্থ জগতে ইহুদিদের প্রভাব বেশ গভীর, এই বিশ্বাস প্রতি পাঁচজন জার্মানের মধ্যে একজনের মনে গভীরভাবে রয়েছে৷

আর যে বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন, তা’হল ইন্টারনেট৷ এই মুহূর্তের আধুনিক বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই গণমাধ্যম বা ইন্টারনেটে যে পরিমাণে ইহুদি বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, তাকে সামলানো কঠিনই শুধু নয়, অত্যন্ত কঠিন৷

Versammlungsrecht Demonstration von Neo-Nazis
চরম দক্ষিণপনন্থী নব্য নাৎসিরা এই বিদ্বেষের পৃষ্ঠপোষকছবি: AP

বিশেষজ্ঞরা রিপোর্টের সারাংশে এসে যদিও স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে তুলনায় জার্মানির অবস্থান ইহুদি বিদ্বেষের দৃষ্টিভঙ্গিতে ঠিক মাঝখানে৷ কারণ, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি আর পর্তুগালের মত দেশে এই সমস্যা আরও অনেক বেশি৷ পাশাপাশি, রিপোর্টটি এও বলেছে, জার্মানি কিন্তু সমাজে ইহুদি বিদ্বেষ দূর করতে যে উদ্যোগ নিয়ে থাকে, তা যথেষ্ট৷ তবে এর জন্য একেবারে পরিকল্পিত আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে রিপোর্টটিতে৷

প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম