1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইন্টারনেট গুন্ডাদের কবলে মেয়েরা

১ আগস্ট ২০১০

সাইবার মবিং৷ শব্দটি পরিচিত৷ সভ্যতার এই যুগে ইন্টারনেট, সেল ফোন, স্কাইপে চ্যাটিং, আই ফোন সবই এসেছে৷ তবে এর সঙ্গে এসেছে বিড়ম্বনা৷ ছেলে হোক মেয়ে হোক কেউই ছাড়া পাচ্ছে না এই সাইবার মবিং এর হাত থেকে৷

https://p.dw.com/p/OZIE
জার্মানিতে যে কোন টীনএজারের জন্য ‘কুল' হওয়াটা বেশ জরুরিছবি: PIcture-alliance / dpa

জার্মানিতে যে কোন টীনএজারের জন্য ‘কুল' হওয়াটা বেশ জরুরি৷ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে থাকা চাই অত্যাধুনিক সেল ফোন, ইন্টারনেট, চ্যাটিং গ্রুপ ছাড়াও আরো কত কি! বিভিন্ন বন্ধু বান্ধবীর সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হয় না কারণ ইন্টারেনেটে চ্যাটিং-এর মাধ্যমেই তা সম্ভব৷

সম্প্রতি একটি জরিপ থেকে জানা গেছে যে জার্মানিতে প্রতি পাঁচজন তরুণ-তরুণীর মধ্যে অন্তত একজন সাইবার মবিং এর শিকার৷ ফলে আলোচনা এবং তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে ইন্টারনেট চ্যাটিং৷ কোলনের কাছে ভুপার্টাল শহরের কিছু ছেলেমেয়ে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি তৈরি করেছে৷ তুলে ধরা হয়েছে সাইবার মবিং-এর বিষয়টি৷ যে বা যারা সাইবার মবিং এর শিকার তারাই জানিয়েছে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা৷ হাইকো বলল,

‘‘আমার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়৷ লোকটি আমার মাকে যা খুশি তাই বলছিল, অপমান করছিল৷ তারপর আমি কম্পিউটারের স্ক্রিন ভেঙে ফেলি৷ আমি ঘুষি মারি স্ক্রিনে৷ হাতে কাটার দাগগুলো সেখান থেকেই এসেছে৷''

১৪ বছরের হাইকো নিয়মিত চ্যাট করতো ইন্টারনেটে৷ একদিন অজ্ঞাত এক যুবকের কাছ থেকে অশোভন ইমেল আসতে থাকে৷ প্রতিদিন ১৫টি করে৷ হাইকো ভয় পেয়ে যায়৷ সেই যুবকটি সারাক্ষণ গালিগালাজ করতো, হাইকোর মা-কে নিয়ে অশোভন মন্তব্য করতো৷ অথচ কেউ-ই কিন্তু কাউকে চেনে না৷

পুরো ঘটনাটি থেমে যায় যখন হাইকো পুলিশকে সব জানায়৷ তবে হাইকো একা নয়৷ ১২ বছরের মাডিটা এবং ডিয়ান্ড্রাও সাইবার মবিং-এর শিকার৷ ভুপার্টালের সেই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে ওরাও অংশগ্রহণ করেছে৷ তারা জানালো কিভাবে এর শুরু৷ স্কুলের পর কেউই আর আড্ডা দিতে বা ঘোরাঘুরি করতে চায় না৷ সবাই বাড়ি ফিরতে চায়৷ ইন্টারনেটে বসে চ্যাট করতে চায়৷

স্কুলে মাডিটা এবং ডিয়ান্ড্রার কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল৷ প্রতিশোধ তুলতে ওরা বেছে নিয়েছিল ইন্টারনেটকে৷ মাডিটা এবং ডিয়ান্ড্রার মুখের ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছিল পর্নো স্টারদের চেহারায়৷ সেই সব ছবি তুলে দেওয়া হয়েছিল ইন্টারনেটে৷ যখন ওরা দু'জন তা জানতে পারে তখন সঙ্গে সঙ্গেই ছবিগুলো মুছে ফেলা হয় ইন্টারনেট থেকে৷ কিন্তু ততক্ষণে সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়ে গেছে৷ স্কুলের কয়েকশ' ছেলে মেয়ে ছবিগুলো দেখে ফেলেছে৷ ডিয়ান্ড্রা জানাল,‘‘ খুবই কষ্টকর একটি অনুভূতি৷ মনে হবে সারা বিশ্ব এক হয়ে আমার বিরুদ্ধে লড়ছে৷ আমি একেবারে একা৷ আমার আশে-পাশে কেউ নেই৷ আমাকে সাহায্য করারও কেই নেই৷ মনে হয় বিশাল একটি গর্তে আমি পড়ে গিয়েছি, শুধু নিচের দিকেই নেমে যাচ্ছি৷''

গালিগালাজ, বয়কট এবং হাস্যকর করে তোলা – ইন্টারনেট মবিং-এর মাধ্যমে তা-ই করা হয়৷ জানান, কাটারিনা কাটসার৷ সাইবার মবিং নিয়ে বেশ কিছু সমীক্ষার ফল ইতিমধ্যে তিনি প্রকাশ করেছেন৷ এক্ষেত্রে তিনি শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বাবা-মায়ের দায়-দায়িত্বের ওপর জোর দেন৷ ইমেল বা চ্যাটিং-এর মাধ্যমে আসা বিভিন্ন হুমকিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার কথা বলেন তিনি৷ কাটারিনা জানান,‘‘ যখন কোন বাবা-মা জানতে পারে, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে কী হচ্ছে তখনই সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ৷ অবশ্যই সে বিষয়ে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা উচিৎ৷ যখনই কোন সমস্যা হবে তা খোলাসা করা উচিৎ৷ যে বা যারা এসব কাজের জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে৷ এসব ঘটনা যদি গোপন রাখা হয় তাহলে তা সবসময়ই গোপন থাকবে৷ অন্যদিকে অপরাধ, মবিং বেড়েই চলবে৷''

তবে এসব ঘটনা সবসময়ই হচ্ছে না যেমনটা হয়েছে মাডিটা এবং ডিয়ান্ড্রার বেলায়৷ মাডিটা জানিয়েছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে তেমন সাহায্য এবং সহযোগিতা পাওয়া যায়নি৷ তারা সবাই মিলে ইন্টারনেট গ্রুপের বিরুদ্ধে নালিশ করেছিল কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি৷ ক্লাসের অন্যান্য সহপাঠীরা মিলে একটি চ্যাটরুম তৈরি করেছিল মাডিটাকে বিরক্ত এবং অপমান করার জন্য৷ মাডিটার ভাষ্য,‘‘আমরা মবিং বিষয় নিয়ে কাজ করেছি৷ কিন্তু আমাদের নিয়ে সবাই হাসাহাসি করেছে৷ যাকে নিয়ে মবিং করা হচ্ছে তাঁর অনুভূতির দিকে নজরই দেওয়া হয় না৷ সবাই ধরে নেয় এটাই স্বাভাবিক, এটাই তো মবিং-এর মজা৷''

এসব ঘটনার পরও কিন্তু মাডিটা বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্ক থেকে সরে আসেনি৷ ডিয়ান্ড্রাডাও নিয়মিত অনলাইনে বসে তার কাজ করছে৷ কিন্তু এরা দু'জনাই এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সাবধান৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক