1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আবহাওয়ার দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তন

আনওয়ার জামাল আশরফ/এসি৫ এপ্রিল ২০১৪

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবারকার শীত অনেককেই চিন্তায় ফেলেছে৷ পণ্ডিতরা বলছেন, ‘এক্সট্রিম ওয়েদার’ বা চরম আবহাওয়া৷ কিন্তু আবহাওয়ার এই দুর্যোগের জন্যও কি শেষমেষ বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করতে হবে?

https://p.dw.com/p/1Bc6g
ছবি: Jiji press/AFP/Getty Images

এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় ২০১৪ সাল৷ কোথাও কোথাও তাপমাত্রা শূন্যের নীচে চল্লিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত নেমে যায় – যা কিনা মঙ্গলগ্রহের চেয়েও বেশি ঠাণ্ডা! আবহাওয়াবিদরা বলেন, সুমেরু অঞ্চল থেকে আসা বরফ-ঠাণ্ডা বাতাস দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা অতি-গরম বাতাসের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডার উপর একটি চরম ঘূর্ণিঝড় প্রণালীর সৃষ্টি করে৷

জার্মান আবহাওয়া-বিশারদ মাক্সি বিভার বলেন যে, চরম আবহাওয়ার ঘটনা বাড়ার ব্যাপারটা জরুরিভাবে গবেষণা করে দেখা দরকার৷ তাঁর মতে, ‘‘পৃথিবীর অন্যান্য নানা জায়গার মতো সুমেরুতেও গবেষণা করাটা খুবই জরুরি৷ কেননা এ সবই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত৷ আমাদের এখানে জার্মানিতে কিংবা সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে পরবর্তী শীত কিংবা গ্রীষ্ম কেমন হবে, তা জানার জন্য এমন সব জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা দরকার, যে সব জায়গার মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে কোনো সম্পর্ক নেই৷''

সুমেরুর বরফ

উত্তরমেরু সাধারণত বিশ্বের শীতলতম স্থানগুলির মধ্যে পড়ে৷ এখানে কোনো স্থায়ী গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব নয়, কেননা সুমেরুর নীচে কোনো মাটি নেই, জমাট বরফ ভাসছে পানির উপর৷ তবুও বিজ্ঞানীরা এখানে আসেন বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করার জন্য, যার হদিশ সুমেরুর বরফের স্তরে স্তরে রাখা আছে৷ বিজ্ঞানীরা সেই বরফ ড্রিল করে নমুনা বার করে দেখেন, শত শত বছর আগে বিশ্বের তাপমাত্রা কী রকম ছিল এবং সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি কী ভাবে সুমেরু অঞ্চল তথা বিশ্বের আবহাওয়াকে প্রভাবিত করছে৷

গত ৫০ বছরে সুমেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়েছে পাঁচ ডিগ্রি৷ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, শীতকালে সুমেরুর বরফ দুই-তিন মিটার পুরু না হয়ে ক্রমেই আরো পাতলা হচ্ছে৷ সুমেরুতে তাঁরা যে তথ্য সংগ্রহ করেছেন, তা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, তথাকথিত গ্রিনহাউস গ্যাসগুলিই এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী৷ ক্যাটলিং সুমেরু সমীক্ষার ম্যানেজার টিম কালিংফোর্ড বলেন, ‘‘সুমেরু যেন সমগ্র পৃথিবী ও তার যাবতীয় প্রণালীর জন্য একটা সতর্কতা ব্যবস্থা৷ কেননা সব রকমের প্রভাব এই সুমেরু অঞ্চলেই সর্বাগ্রে পরিলক্ষিত হয়৷ এককালে কয়লাখনিতে খনিশ্রমিকদের সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া টিয়াপাখি যেমন বিষাক্ত গ্যাসের সন্ধান দিতো, সুমেরুও সেইরকম একটি শীঘ্র সতর্কতা প্রণালী৷''

আতঙ্ক নয়, সতর্কতা

কিন্তু সব সতর্কীকরণ সত্ত্বেও মানবজাতি অশ্মীভূত জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়েই চলেছে৷ জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেল আইপিসিসি বলছে যে, আমাদের পরিবেশ-বান্ধব, বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে৷ আবার অপর কিছু বিজ্ঞানী বলছেন, বিশ্বের তাপমাত্রার ওঠাপড়াটা স্বাভাবিক এবং তা ঘটে প্রকৃতির নিয়মে৷ যেমন কোলোনের আবহাওয়া বিশারদ মাক্সি বিভার৷ তিনি বলেন, ‘‘আইপিসিসি-র নতুন রিপোর্টেই তাদের পুরনো রিপোর্টের সংশোধন করা হয়েছে৷ কাজেই ওটা একটা চলমান প্রকল্প৷ আমাদের সকলের উচিত আতঙ্ক না সৃষ্টি করে ভবিষ্যতের বাস্তব সম্ভাবনা যাচাই করার জন্য একযোগে কাজ করা৷ আমরা কীভাবে জ্বালানি শক্তি ব্যবহার করি এবং দৈনন্দিন জীবনে তা কীভাবে সাশ্রয় করা সম্ভব, সে বিষয়ে সচেতন হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ বৈকি৷''

বিশেষজ্ঞরা যখন বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কার্যকারণ নিয়ে কোনো একটা যৌথ সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করছেন, সুমেরুর বরফ কিন্তু গলেই চলেছে৷ আরো বিশ বছর পরে নাকি সুমেরুতে গ্রীষ্মে কোনো বরফই থাকবে না৷ এর ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়বে এবং সরা বিশ্বে উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হবে৷

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক চরম আবহাওয়াগত পরিস্থিতি বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির আরো একটি লক্ষণ বলে মনে করছেন বহু বিজ্ঞানী৷ কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তন থেকেই তার সূচনা কিনা, তা নিয়ে এখনও মতভেদ আছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য