1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আবর্জনা ফেলার জায়গা থেকে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ

৯ ডিসেম্বর ২০০৯

জার্মানির অনেক সুপার মার্কেট তাদের খাদ্যদ্রব্যগুলো একটু পুরানো হয়ে গেলে বা সময় উত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবর্জনার কন্টেইনারে ফেলে দেয়৷ অল্পবয়সীদের মধ্যে অনেকেই আবার সেখান থেকে বেছে বেছে ভাল খাবারগুলো তুলে আনে৷

https://p.dw.com/p/KxvL
ফাইল ফটোছবি: AP

দরিদ্র দেশের দরিদ্রতম মানুষেরা আবর্জনার স্তুপে খাবার খোঁজাখুঁজি করেন, এ কথা হয়তো অনেকেই শুনেছেন৷ কিন্তু জার্মানির মত ধনী দেশেও যে এরকমটি ঘটে থাকে সেটা হয়তো অনেকেই জানেননা৷ তবে শুধু দারিদ্র্যের কারণে নয়, রাজনৈতিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েও অনেকে এই অপচয়ের বিরুদ্ধে কিছু করতে চায়৷

সুপার মার্কেটগুলোর পেছনে আবর্জনার বিশাল কন্টেইনারে প্রতিদিনই নিক্ষেপ করা হয় প্রায় ভাল অবস্থায় থাকা প্রচুর খাদ্যদ্রব্য৷ হয়তো কেবল মাত্র সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেছে বা প্যাকেট একটু ছিড়ে গেছে, তাহলেই বিসর্জন দেয়া হয় ডিম, রুটি, ফল ও তরিতরকারির মত খাদ্যদ্রব্য৷ ওয়াশিংটনের ওয়ার্ল্ড ওয়াচ ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী এই ভাবে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ খাদ্যদ্রব্যের স্থান হয় আবর্জনার কন্টেইনারে৷ জার্মানিতে এই ধরণের অপচয় কীরকম, সে সম্পর্কে অবশ্য তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি৷ বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে দোকান পাট যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন কন্টেইনারে খাদ্য অনুসন্ধানীরা বের হয় বিভিন্ন সুপার মার্কেট ও বেকারির উদ্দেশে৷ সাথে থাকে ঝুড়ি, হাতমোজা ও টর্চ-এর মত সাজ সরঞ্জাম ৷ কলা, আপেল, রুটি, জেলি, চকলেট এসব খুঁজে পেতে কোনোই অসুবিধে হয় না তাদের৷

রাসুল হাসান এসেছে সিরিয়া থেকে৷ তার দেশে প্রায় কোনো কিছুই ফেলা হয়না৷ কিন্তু জার্মানিতে নষ্ট না হলেও যে খাদ্যদ্রব্য ফেলে দেয়া হয়, তা তার কাছে খুব খারাপ লাগে৷ রাসুল জানায়, ‘‘এক ছড়া কলার কোনো একটা নষ্ট হয়ে গেলে পুরো ছড়াটাই ফেলে দেয়া হয়৷ আপেলের বেলায়ও তাই৷ খাবারের জিনিস এভাবে ফেলে দেয়া খুব দুঃখজনক৷ আমি কোলনের নিপেস অঞ্চলে বাস করি৷ সেখানে প্রতিদিন ফল ও শাকসবজির একটা হাট বসে বেলা দুটো পর্যন্ত৷ তারপর অনেক তাজা ফল ও তরিতরকারিও ফেলে দেয়া হয়৷ অনেক গরিব মানুষই এসব খেয়ে বাঁচতে পারেন৷ রাস্তায় কোনো পয়সা পড়ে থাকলেও তো আমি তা তুলে নেই৷ রুটি বা এক প্যাকেট ডিম পড়ে থাকলে তা তুলে নিতে অসুবিধা কোথায় ?''

রাসুল ২৮ বছর বয়সী বেকার এক যুবক৷ সামাজিক ভাতার ওপর নির্ভর করে চলতে হয় তাকে৷ দোকানের আবর্জনার কন্টেইনার থেকে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করতে পারলে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো রকমে দিন কেটে যায় তার৷

অনেকে আবার আর্থিক অনটনের কারণে নয়, রাজনৈতিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কন্টেইনার থেকে খাবার সংগ্রহ করে৷ বিশেষ করে বিকল্প ধারার বামপন্থি তরুণদের আগ্রহ দেখা যায় এক্ষেত্রে৷ এ প্রসঙ্গে ইয়র্গ ব্যার্গশ্টেট জানায়, ‘‘বলা যায় কোনো কোনো তরুণগোষ্ঠীতে কন্টেইনার থেকে খাদ্যদ্রব্য তুলে আনাটা যেন একটা আদর্শিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এসব তরুণরা টুপিওয়ালা পুলওভার ও চে গুয়েভারার টি শার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়৷ বছর দুয়েক কন্টেইনার থেকে খাবার সংগ্রহ করে৷ তারপর আবার এসব বাদ দেয়৷ পুলওভারও বিসর্জন দেয়৷''

অবশ্য ইয়র্গ ব্যার্গশ্টেট ও তার সহমতাদর্শীরা ১৫ বছর ধরে কনটেইনার থেকে খাবার সংগ্রহ করছে৷ এক পয়সাও খাবারের জন্য ব্যয় করেনা তারা৷ বাসস্থান ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও তেমন খরচ নেই তাদের৷ বামপন্থি ভাবাদর্শে বিশ্বাসী এই সব তরুণের মতে, যেখানে অন্যত্র বহু মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছে, সেখানে ধনী দেশের ভোগ্যপণ্যের দোকানগুলি ভাল ভাল খাবার জিনিস যে পরিমাণে ফেলে দিচ্ছে তাকে রীতিমত অনৈতিক বলা যায়৷

ইয়র্গ ব্যার্গশ্টেট জার্মান সমাজের অনেক কিছুই পছন্দ করেনা৷ তাই সে সমাজের পরিবর্তনে সক্রিয় হতে চায়৷ এ জন্য কোনো চাকরিও নেয়নি সে৷ খাওয়ার জন্য তো বটেই, বাসা ভাড়া, ট্রেনের টিকেটেও তেমন খরচ করতে হয়না ইয়র্গের৷ কারো গাড়ি থামিয়ে, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায় সে৷ খোঁজ করে কোনো কৃষিখেতে জিন প্রযুক্তির প্রয়োগ হচ্ছে কীনা৷ কিংবা কোথায় জীবজন্তুর ওপর নির্যাতন চলছে৷ কয়েকটা দিন কোনো বন্ধুবান্ধবের বাসায় মাথা গোজার মত ঠাঁই তার প্রচুর রয়েছে৷

অ্যামেরিকায় ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি তথাকথিত এই কন্টেইনার আন্দোলনের শুরু৷ সেসময় অপচয় ও পশুনির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল একদল তরুণ৷ অবশ্য অ্যামেরিকার সুপারমার্কেটগুলো নিজেরাই ঠিক করে, তাদের আবর্জনা ফেলার কন্টেইনারে কাউকে ঘাঁটাঘাঁটি করতে দেবে কীনা৷

জার্মানিতে কেবলমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে কন্টেইনার ঘাঁটাঘাঁটি করার অনুমতি দেয়া হয়৷ এপ্রসঙ্গে আইনজীবী মিশাইল বিলা-বেটিয়া বলেন, ‘‘মালিকের অনুমতি ছাড়া যদি তাঁর এলাকায় কেউ প্রবেশ করে, তাহলে তা শান্তিভঙ্গের কারণে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে৷ তবে খোলা জায়গায় কন্টেইনার থাকলে তা ঘাঁটাঘাঁটি করাটা অবৈধ নয় বলেই মনে করি আমি৷''

ইতিমধ্যে জার্মানির সুপারমার্কেটগুলো তাদের দোকানের চারপাশে এবং পরিত্যক্ত খাদ্যের কন্টেইনারে তালা লাগাবার ব্যবস্থা করেছে৷

প্রতিবেদক: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার