1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা

১১ অক্টোবর ২০১২

উন্নয়নশীল দেশগুলির, বিশেষ করে আফ্রিকার অনেক দেশে নারীদের সমানাধিকার অর্জন করতে হলে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে৷ কারণ, সমাজ ও পরিবারে মেয়েদের অবস্থানটা আজও যে সনাতনই রয়ে গেছে৷

https://p.dw.com/p/16Ng0
ছবি: picture-alliance/dpa

‘‘আমার স্বামীর যদি থালা বাসন ধুতে হতো, তাহলে আমার বিবেকে খুব লাগতো৷'' বুর্কিনা ফাসো'এর ২৪ বছর বয়স্ক ছাত্রী সান্ড্রা এইভাবেই জানালেন মনের কথা৷ তাঁর দৃঢ় ধারণা যে, কাপড়চোপড় এবং বাসনপত্র ধোয়া মেয়েদেরই কাজ৷ আর এই রকম মনোভাব তাঁর শুধু একারই নয়৷

বুর্কিনা ফাসো'র দেড় কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী৷ অধিকাংশই লেখাপড়া জানেন না৷ সরকার ও বিশ্ব সংস্থাগুলির নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শিক্ষাদীক্ষায় ছেলেদের তুলনায় পিছিয়ে আছেন তাঁরা৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও দেখা যায় একইরকম চিত্র৷ ৫৫ হাজার পড়ুয়ার মধ্যে মাত্র ১৬ হাজার ছাত্রী৷

মা-বাবার দৃষ্টিভঙ্গি

মা-বাবারাও কন্যা সন্তানের শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন৷ মেয়েদের লালনপালন করা হয়, স্বামীর সংসারের হাল ধরার জন্য, শ্বশুরবাড়ির কথামতো চলার জন্য৷ এই প্রথার বন্ধন থেকে ধীরে ধীরে মেয়েরা বের হয়ে আসছেন৷ কিন্তু সমাজে এখনও তাঁদের ভূমিকা গৌন৷ বাড়িতে গৃহস্থালীর কাজকর্ম, সন্তান লালনপালন, সেলাই ফোড়াই, শাকসবজি উৎপাদন ও বাজারে বিক্রি করা - এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের৷ এই ভাবে তাঁরা পরিবারকে সহায়তা করেন৷ বাচ্চারাও বেড়ে ওঠে এসব দেখে শুনে৷ সান্ড্রা বলেন, ‘‘আমরা স্কুল থেকে ফিরে আসার পর ভাইরা ফুটবল খেলতে যেত কিংবা কোনো ছবি দেখতে বসে যেত৷ কিন্তু আমার ও আমার বোনকে মায়ের ঘরকন্নার কাজে সাহায্য করতে হতো৷''

Demonstration Frauen in Harare Simbabwe
সরকার ও বিশ্ব সংস্থাগুলির নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শিক্ষাদীক্ষায় ছেলেদের তুলনায় পিছিয়ে আছেন তাঁরা (ফাইল ফটো)ছবি: privi(c)2012

পারিবারিক অভিজ্ঞতা

সান্ড্রারা তিন বোন, তিন ভাই৷ লেখা পড়া জানা সত্ত্বেও, সমাজে পুরুষ ও মেয়ের কাজের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে, এই রকম এক মানসিকতা গেঁথে আছে তার মনের মধ্যে এখনও৷ এই প্রসঙ্গে ফ্রান্সের বর্দো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী ও ডক্টরেটের ছাত্রী আওয়া ডিয়োপ জানান, ‘‘মা শিক্ষিত ও কর্মজীবী হলে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিও অন্যরকম হবে৷ ছেলে ও মেয়ের কাজের মধ্যে পার্থক্য করবেন না তিনি৷''

ডিয়োপ আশা করেন, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন শুধু সময়ের ব্যাপার৷ পশ্চিম আফ্রিকার অনেক দেশেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এই শ্রেণির শিক্ষার মানও তুলনামূলকভাবে উন্নত৷ এর ফলে নারীমুক্তির পথটাও প্রশস্ত হচ্ছে৷

স্কুলের শিক্ষা

স্কুলের শিক্ষা পদ্ধতিও এক্ষেত্রে অনেকটা দায়ী , বলেন ডিয়োপ৷ স্কুল থেকে পাওয়া প্রাথমিক শিক্ষার প্রভাব সারা জীবন ধরে থাকে৷ সেনেগালে জন্ম নেয়া বড় হয়ে ওঠা এই সমাজবিদ এক্ষেত্রে শিক্ষানীতির সমালোচনা করে বলেন, স্কুলের বই পুস্তকে গৃহস্থালীর কাজকর্মকে মেয়েদের কাজ বলে তুলে ধরা হয়৷ আর অফিস আদালত ও বিদ্যাবুদ্ধির কাজকে পুরুষের জগৎ বলে চিত্রিত করা হয়৷ নারী পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে এটা একটা বিরাট বাধা৷

দায়ী দারিদ্র্যও

ডিয়োপের মতে, নারী মুক্তির ব্যাপারে আর এটা প্রতিবন্ধক হল, দারিদ্র্য৷ দরিদ্র পরিবারের অনেক তরুণী মেয়ে আর্থিক স্বাচ্ছল্যের আশায় বয়স্ক বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন, অর্থের বিনিময়ে বিকিয়ে দেন আত্মমর্যাদা৷

অবশ্য সমস্ত বিষয়টির শেকড় আরো গভীরে৷ বহু তরুণী মেয়ের চালচলন ও আচার ব্যবহারে নিজস্ব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়৷ তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখেন নি৷ ছোটবেলা থেকেই তাঁরা জেনে এসেছেন যে, ‘বলার' অধিকারটা শুধু পুরুষেরই৷

অল্পবয়সী শিক্ষিত মেয়েরা বিষয়টির পরিবর্তন ঘটাতে পারেন, কেননা তাঁদের সুযোগ সুবিধাও তুলনামূলকভাবে বেশি৷ মনে করেন সেনেগাল থেকে আসা শিক্ষাবিদ ডিয়োপ৷ চাইলে তাঁরা ধনী পুরুষের সাহায্য ছাড়াই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন৷

ডিয়োপের ভাষায়, ‘‘দারিদ্র্যের হাত থেকে ঐ ভাবে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা না করে ও একে অদৃষ্ট বলে মেনে না নিয়ে, মেয়েদের চিন্তাভাবনা করা উচিত কী ভাবে নিজের জীবনের দায়িত্ব নিজের হাতে নেওয়া যায়৷''

প্রতিবেদন: ওয়েন্ডপাঙ্গা এরিক সেগুয়েদা/আরবি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য