1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আফগানিস্তানে আফিমের বদলে গোলাপ

৪ মে ২০০৯

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে কৃষকরা ইদানীং আফিম চাষ ছেড়ে গোলাপ চাষের দিকে ঝুঁকছেন৷ ‘জার্মান অ্যাগ্রো অ্যাকশন’ নামের এনজিও ২০০৪ সাল থেকে তাঁদের এই কাজে সহায়তা করছে৷ এবার ক্রমশঃ হাতেনাতে ফল পাওয়া যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/HjR1
অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে আফিম চাষ করছেন আফগানিস্তানের কৃষকরাছবি: picture-alliance/ dpa

সাফল্যের উদাহরণ

আফগানিস্তানে সরকার ও তালেবান বিদ্রোহীদের মধ্যে বেড়ে চলা সংঘর্ষের শিকার সাধারণ মানুষ৷ এর ফলে অনেক অঞ্চলেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ এলাকায় আশ্রয় খুঁজে আবার রুজি-রোজগার শুরু করার চেষ্টা করছেন অনেকেই৷ এঁদের মধ্যে আছেন কবির খান ও তাঁর ৩ ভাই৷ গোলাপ চাষ করে তাঁদের কিছু উপার্জন হচ্ছে৷ ঐ এলাকার প্রায় ৫০০ মানুষ গোলাপ চাষের ফলে সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন৷ ‘জার্মান অ্যাগ্রো অ্যাকশন’এর প্রতিনিধি নর্বার্ট বুর্গার ঐ প্রকল্পের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ প্রায় ৫ বছর আগে তিনি যখন স্থানীয় কৃষকদের কাছে এসে গোলাপ চাষের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন তাঁদের অনেকেই ভেবেছিলেন যে জার্মানদের মনে এমনিতেই অদ্ভুত অবাস্তব কিছু চিন্তা-ভাবনা চলে বটে, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে তারা পুরোপুরি পাগল!

সেই দিনগুলির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নর্বার্ট বুর্গার বললেন, ‘‘কৃষকদের কেউই বুঝতে পারেন নি, কেন আমরা গোলাপের বীজ বপন করতে চাই৷ এখানে মনে রাখতে হবে, মুসলিমরা সাধারণত কখনো পা দিয়ে গোলাপ ফুল পিষে ফেলেন না – এমনকি অন্যমনস্কভাবেও নয়৷ রাস্তায় গোলাপ কুড়িয়ে পেলে সেটি হাতে তুলে নিয়ে তাঁরা তার গন্ধ শুঁকে দেখেন৷ তাঁদের মনে হয়, পয়গম্বর হজরত মহম্মদের অশ্রুর সঙ্গে হয়তো এই গোলাপের কোনো সম্পর্ক রয়েছে৷ সেই অশ্রু পৃথিবীর বুকে পড়ে গোলাপে পরিণত হয়েছে৷’’

সেদিন অনেকে মাথা নাড়লেও নাদির খান নামের কৃষক গোলাপ চাষে বেশ উৎসাহ দেখিয়েছিলেন৷ তবে গোলাপের সঙ্গে সঙ্গে তিনি গম চাষও করেন৷ অথচ এক বছর আগে তাঁর খেতে আফিম চাষ হত৷ নাদির খান মনে করেন, আফিম মানুষের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক৷ কোরানেও ঐ চাষ নিষিদ্ধ বলা আছে৷ তাঁর মতে, এই সব জেনেশুনেও কৃষকরা যখন আফিম চাষ করেন, তখন তাঁদেরও বিবেক দংশন হয়৷ কিন্তু উপার্জনের অন্য কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে তারা ঐ চাষ করতে বাধ্য হয়৷

Afghanistan Opium wird vernichtet in Kabul
সরকারী উদ্যোগে প্রায়ই ঘটা করে আফিম পোড়ানো হলেও মাদক সমস্যার সমাধান সহজ নয়ছবি: AP

গোলাপের দামী তেল

গোলাপের চাষের মাধ্যমে কীভাবে উপকৃত হচ্ছেন আফগানিস্তানের চাষিরা? বস্তা-বোঝাই গোলাপের পাপড়ি ঢেলে দেওয়া হয় বিশালাকার হাঁড়িতে৷ অমন সুন্দর ফুলের পাপড়ি কেন এমন নির্মমভাবে সেদ্ধ করা হচ্ছে – এই প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে৷ আসলে এইভাবে অতি উচ্চ মানের গোলাপের তেল উৎপাদিত হয় – যার মাত্র ৩ মিলিলিটারের মূল্যই প্রায় ২০ ইউরো৷ অর্থাৎ ছোট এক পাত্র তেল বিক্রি করেই অনেক অর্থ উপার্জন করা যায়৷ তাছাড়া আফিমের মূল্য ওঠানামা করলেও গোলাপ তেলের ক্ষেত্রে সেই অনিশ্চয়তা নেই৷ ফলে অনেক কৃষকরাই এমন স্থায়ী উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়ে সন্তুষ্ট৷

রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও দক্ষতা

নানগাহার প্রদেশ আফগানিস্তানের বিপজ্জনক পূর্বাঞ্চলে – পাকিস্তান সীমান্তের কাছে অবস্থিত৷ তা সত্ত্বেও মাত্র এক বছরের মধ্যে ঐ এলাকা থেকে আফিম চাষ পুরোপুরি লোপ পেয়েছে৷ গোলাপ ফুল এই অসাধ্য সাধন করেছে বটে, কিন্তু নর্বার্ট বুর্গার বিলক্ষণ জানেন, যে এই সাফল্যের পেছনে শক্তিশালী প্রাদেশিক গভর্নরের অবদানও কম নয়৷ তিনি নরম-গরম নানা পন্থার মাধ্যমে কৃষকদের এই পথে নিয়ে এসেছেন৷ কখনো আর্থিক উপহার দিয়ে, কখনো শাস্তির ভয় দেখিয়ে তিনি এই কাজ করেছেন৷ এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে নর্বার্ট বুর্গার বললেন, ‘‘আমরা আফগানিস্তানে আরও গোলাপ চাষ করতে পারি৷ এই মুহূর্তে আমরা ৬০ হেক্টর জমিতে চাষ করছি৷ সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে গোলাপ চাষ করা সম্ভব৷ তবে এর বেশী বোধহয় সম্ভব হবে না৷’’

সামগ্রিক সমাধানসূত্র

গোলাপ চাষের মাধ্যমেই আফগানিস্তানে আফিম চাষ ও মাদক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে – এমন অবাস্তব ধারণা কেউই করছেন না৷ নর্বার্ট বুর্গার মনে করেন, গোলাপ চাষ অন্যতম এক সমাধানসূত্র হতে পারে৷ তবে তার সঙ্গে প্রয়োজন আরও অনেক পদক্ষেপ, যেগুলির মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয়ের প্রয়োজন৷ আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের পথে কাঁটার অভাব নেই – তা সে গোলাপের কাঁটা হোক, বা অন্য কোনো কাঁটাই হোক৷

লেখক: কাই ক্যুস্টনার, অনুবাদক: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল ফারূক