1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আজও গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত পাকিস্তানের ‘ম্যাংগ্রোভ পিতা’

১৯ নভেম্বর ২০১১

একটি নিষ্ঠুর অপহরণের ঘটনা তাহির কুরেশিকে একদিন ‘পরিবেশ যোদ্ধা’-য় পরিণত করেছিল৷ এনে দিয়েছিল ‘ফাদার অব ম্যাংগ্রোভ’ বা ‘ম্যাংগ্রোভ পিতা’-র খেতাব৷ আর আজ, দীর্ঘ ২৭ বছর পরও পাকিস্তানের পরিবেশ রক্ষায় লড়ছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/13DXD
ম্যাংগ্রোভ বনাঞ্চলছবি: doris oberfrank-list / Fotolia.com

‘‘এটাই আমার জীবন৷ প্রকৃতির কাছে থাকতে পেরে আমি খুব খুশি৷ এমন জীবন কাটানোর একটা মূল্য অবশ্যই আছে৷'' – কথাগুলো বন রক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ পাকিস্তানের তাহির কুরেশির৷ ৬৫ বছর বয়স্ক কুরেশি, জীবনের এই পড়ন্ত বেলাতেও পুরোদমে লড়ে যাচ্ছেন বনদস্যুদের বিরুদ্ধে৷ বন উজাড় হওয়া ঠেকাতে খাটছেন রাত-দিন৷

গাছ-গাছালির সঙ্গে তাহিরের বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে এখনো৷ তাই নিজের উদ্যোগেই দেশের হারিয়ে যাওয়া এক বিশাল ম্যাংগ্রোভ অরণ্য পুনরুদ্ধার করেছেন তিনি৷ অথচ এমন একটা দিন ছিল, যখন তাহির নিজেও কখনো ভাবেন নি যে, তিনি পরিবেশবাদী হয়ে উঠবেন৷ তাহলে?

সেটা ১৯৮৪ সালের কথা৷ তখন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হিসেবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কাজ করছিলেন কুরেশি৷ সে সময়, ‘দাদু' জেলায় একদল দুর্বৃত্ত তাঁকে অপহরণ করে৷ একটানা বেশ কয়েকদিন বন্দি করে রাখে৷ এমনকি মুক্তিপণও দাবি করে তারা৷ কিন্তু, এক পর্যায়ে ‘বন কর্মকর্তা' হিসেবে তাহিরের পরিচয় জানতে পেরে, তাহিরকে ছেয়ে দেয় অপহরণকারীরা৷

এর পেছনে অবশ্য কারণও ছিল৷ বনজঙ্গল হচ্ছে দুর্বৃত্তদের আত্মগোপন করার মোক্ষম জায়গা৷ তাছাড়া, গাছ একাধারে জীবিকার সন্ধান দেয় এবং পরিবেশ রক্ষা করে – তাই গাছ কাটাকে অন্যায় কাজ বলে মনে করতো দুর্বৃত্তরা৷ তারা ভাবতো, বন রক্ষক মানেই তাদের বন্ধু৷

স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনা একটা বিরাট প্রভাব ফেলে তাহির কুরেশির জীবনে৷ একদল খারাপ মানুষের এই বৃক্ষপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হন, অভিভূত হন তিনি৷ শুরু হয় পরিবেশ রক্ষায় তাঁর নিরন্তর চেষ্টা৷ পাকিস্তানের চির-অবহেলিত ম্যাংগ্রোভ বন রক্ষায় বৃক্ষরোপণ ও তার পরিচর্যায় উঠে পড়ে লেগে যান তিনি৷

Mangroven
বনের ভেতর দিয়ে হাটছেন একজনছবি: KfW-Bildarchiv/Bernhard Schurian

তবে শুধু পরিচর্যাই নয়, জীববৈচিত্র্যে ভারসাম্য রক্ষা আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে ম্যাংগ্রোভ অরণ্য কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে – সে সম্পর্কে জনসচেতনতাও জাগান তাহির৷ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের প্রশিক্ষণ দেন – কীভাবে ম্যাংগ্রোভের চারা লাগাতে হয়, বনাঞ্চল রক্ষায় কী কী কৌশল প্রয়োগ করতে হয় – সে সম্পর্কেও৷

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রতিবছর গড়ে ৪২ হাজার হেক্টর করে বনভূমি হারিয়েছে৷ এ ধারা চলতে থাকলে পরবর্তী এক দশকে বাকি বনভূমির অর্ধেকটাই হারিয়ে ফেলবে দেশটি৷ অথচ এই বিপর্যয়ের মধ্যেও তাহির ৩০ হাজার হেক্টর ম্যাংগ্রোভ বন বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন৷

প্রসঙ্গত, বেলুচিস্তানসহ আরব সাগরের দক্ষিণ উপকূলজুড়ে রয়েছে এই ম্যাংগ্রোভ অরণ্য৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক