1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আকাশে উড়ে বেড়ানো সরীসৃপ টেরোসর

৩০ নভেম্বর ২০১০

টেরোসর, আকাশে উড়তে পারা সবচেয়ে বড় প্রাণী৷ মৃদুমন্দ বাতাসে উড়ে বেড়াতে পারতো আকাশে৷ কিন্তু ঝোড়ো হাওয়ায় রক্ষা করতে পারতোনা নিজেকে৷ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় প্রাচীন এই প্রাণীদের সম্পর্কে এমন ধারণাই দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷

https://p.dw.com/p/QLZ4
ডায়নোসরদের সময় পৃথিবীতে এসেছিল টেরোসরছবি: picture-alliance/dpa

বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের বিস্ময় এই প্রাণীটিকে ঘিরে, যে কীভাবে বিশালাকার শরীর নিয়ে সরীসৃপ এই প্রাণীটি আকাশে উড়তে পারতো৷ ২২০ থেকে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের মেসোজয়িক যুগে বাস করতো টেরোসর প্রজাতি, যখন ডায়নোসরদেরও বিচরণক্ষেত্র ছিলো এই পৃথিবী৷ টেরোসর টেরোডাকটাইলস নামেও পরিচিত৷ বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ এখন বলছেন এটি সম্ভবত উড়তে পারতোনা৷ তবে একথা ঠিক, বারো মিটার প্রশস্ত ডানা এবং দুইশ' কিলো পর্যন্ত ভারী শরীর নিয়ে আকাশে উড়ে বেড়ানোটা রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়৷

ব্রিটেনের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ এবং প্রকৌশলী কলিন পামার উড়ুক্কু প্রাণীদের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান৷ টেরোসর নিয়ে তাঁর এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয় ব্রিটেনের একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে৷ পামারের গবেষণা বলছে, প্রগৈতিহাসিক এই প্রাণী উড়তে পারতো৷ টেরোসর এর জীবাশ্ম'র উপর ভিত্তি করে এর আদলে তিনি এই প্রাণীর পাখার মডেলও তৈরি করেন৷ আর সাম্প্রতিক এই গবেষণায় তিনি দেখার চেষ্টা করেন, পালের মতো পাখা ছড়িয়ে কীভাবে এরা উড়তে পারতো৷ তিনি পরীক্ষা করে দেখেন, যে কৌশল বিবেচনায় রেখে বিমান প্রকৌশলীরা উড়োজাহাজের পাখা তৈরি করেন, একইভাবে টেরোসরও তার পাখার সাহায্যে উড়তে পারতো৷

কেবল বয়স কিংবা ঝড়ো হাওয়াই কি এদের মৃত্যুর কারণ ছিল? বলা হয়, ডাইনোসর গোত্রীয় প্রাণী স্পিনোসর টেরোসরকে খেয়ে ফেলতো৷ ‘নেচার' পত্রিকার ২০০৪ সালের ১ জুলাই সংখ্যায় জীবাশ্মবিদ এরিক বাফেটাউট টেরোসরের জীবাশ্মর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, টোরোসরের মেরুদন্ডে স্পিনোসরের ভাঙা দাঁতও পাওয়া গেছে৷

টেরোসর'এর বংশবৃদ্ধি প্রক্রিয়া সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে৷ এ পর্যন্ত টেরোসরের কেবল একটি ডিমই পাওয়া গেছে৷ ডিম থেকে বের হওয়ার পর ঠিক কতোদিন এরা মায়ের উপর নির্ভর করতো তা জানা যায়নি৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, জন্মের পরপরই এরা চাইলে উড়তে পারতো৷ বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার বেনেট এবং ডেভিড আনউইন বলেন, বাচ্চা টেরোসর খুব কম সময়ই বাবা-মা'র উপর নির্ভর করতো৷ যতদিন না পর্যন্ত এদের পাখাগুলো আকাশে উড়ার মতো বড় না হতো এবং ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে নিজেদের রক্ষা করার মতো অবস্থায় তারা না পৌঁছাতো ততদিন এরা বাবা-মা'র উপর নির্ভর করতো৷

পামারের সাম্প্রতিক গবেষণায় এই তথ্যটি বেরিয়ে আসে যে, এই প্রাণীটি পাহাড়ের পাশ দিয়ে এবং উপকূলীয় এলাকায় মৃদুমন্দ বাতাসে স্বচ্ছন্দে উড়তে পারতো৷ ধীর গতিতে উড়ে বেড়াতো এরা এবং এদের পাখার ধরণ এমন ছিলো যে, চাইলে সহজেই হালকাভাবে মাটিতে নামতে পারতো৷ আর এতে তাদের নাজুক হাড় ভেঙে যাওয়ার ভয় ছিলোনা৷ পামার বলেন,‘‘ যেহেতু টেরোসরের হাড় পাতলা আবরণে ঢাকা এবং অনেক বেশি সংবেদনশীল ছিলো, সেহেতু আস্তে আস্তে মাটিতে নেমে আসার ব্যাপারটা এদেরকে যেকোনো আঘাতের হাত থেকে রক্ষা করতো৷'' পামারের পরীক্ষায় আরও দেখা যায়, প্রচন্ড ঝোড়ো হাওয়ায় এই প্রাণীটি অপেক্ষাকৃত দ্রুত মাটিতে নেমে আসতো৷ ‘‘ঝড় এবং ঝড়ো হাওয়ায় টেরোসররা মাটিতে বা আকাশে যেখানেই থাকুক না কেন, সেই সময়গুলো ছিলো এদের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ,'' বলেন পামার৷

টেরোসরের জীবাশ্ম প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৭৮৪ সালে৷ সেসময় ইটালির প্রাণীবিজ্ঞানী কসিমো কলিনির কাছ থেকে প্রথম বর্ণনা পাওয়া যায় এই প্রাণীটির৷ কিন্তু এটি আদৌ উড়তে পারতো কিনা তা নিয়ে তখনও কারো ধারণা ছিলোনা৷ ১৮০১ সালে বিজ্ঞানী জর্জ কুভিয়ে সর্বপ্রথম বলেন, সরীসৃপ এই প্রাণীটি উড়তেও পারতো৷ আর তখন থেকে টেরোসরের জীবাশ্ম নিয়ে চলছে একের পর এক গবেষণা৷

প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক