1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অ্যাসিড সন্ত্রাস

২২ মার্চ ২০১২

বাংলাদেশে নারীর উপর অ্যাসিড ছোঁড়ার ঘটনা অহরহই ঘটে৷ অভিযোগ আছে, আইন প্রয়োগের দুর্বলতার কারণে এসব ঘটনার বিচারও ঠিক মতো হয় না৷ তবে আশার কথা হলো, গত দশ বছরে বাংলাদেশে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা অনেকটাই কমেছে৷

https://p.dw.com/p/14Owd
Säureopfer in Bangladeschছবি: Reuters

সাতক্ষীরা সদর থানার ইটাগাছা গ্রামের মেয়ে মঞ্জিলা খাতুন৷ লিটন নামে এক যুবকের সাথে প্রেম হয় তার৷ বিয়ের কথা বলে মঞ্জিলাকে একদিন ঢাকা নিয়ে যায় সে৷

ঢাকায় তারা তিন দিন একসাথে থাকে৷ কিন্তু এর পর মঞ্জিলাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে লিটন৷ অতঃপর লিটনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা আনে মেয়েটির পরিবার৷ থানা-পুলিশ-মামলার পর, জেলের ভয়ে, মঞ্জিলাকে বিয়ে করে সে৷ কিন্তু তারপর কী হলো? বাকিটা শোনা যাক মঞ্জিলার মুখেই৷

‘‘বিয়ের পর খুবই মাইর-ধইর করতো৷ তাছাড়া, বিয়ের পরে একটা মোটর সাইকেলও চাইছিলো৷ কিন্তু আমরা গরিব৷ তাই সেইটাও দিতে পারি নাই৷ এই জন্য আরো বেশি মারতো৷ একদিন মারার সময় মাথার মধ্যে কোপ মারে৷ তারপরে আমি হাসপাতালে ছিলাম৷ হাসপাতাল থেকে সুস্থ্য হয়ে নিজের বাড়ি চইলা আসি৷ এর মধ্যে আমারে তালাক না দিয়াই সে (লিটন) আবার বিয়া করে৷''

এখানেই শেষ নয়৷ বিয়ের পর নতুন বউকে মঞ্জিলা সব কথা জানানোর পর, সেই স্ত্রীর সাথেও লিটনের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়৷ আর তারই শোধ নিতে একদিন মঞ্জিলার মুখে অ্যাসিড ছুঁড়ে দেয় লিটন৷

অ্যাসিডে ঝলসানো এমন আরো হাজারো মঞ্জিলা বাংলাদেশে আছে৷ অ্যাসিড আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করে বেসরকারি সংস্থা অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ)৷ সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৩৬১টি৷ আর এসব ঘটনার সিংহভাগ শিকারই নারী৷

Monira Rahman - Amnesty International Germany
অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন অ্যাসিড আক্রান্তরাছবি: AP

এএসএফ'এর তথ্য বলছে, প্রেমে প্রত্যাখ্যান, বিয়ে করতে অস্বীকৃতি, যৌন সম্পর্কে রাজি না হওয়া এবং পারিবারিক শত্রুতার কারণে মেয়েদের উপর অ্যাসিড ছোঁড়া হয়৷ এছাড়াও অ্যাসিড ছোঁড়ার পেছনে অ্যাসিডের সহজলভ্যতাকেও দায়ী করছেন অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মনিরা রহমান৷

‘‘লাইসেন্স বিহীন কেনা-বেঁচা সম্পূর্ণ অবৈধ৷ কিন্ত বাংলাদেশে দেখা যায়, যে কেউ চাইলেই যে কোনো সময় অ্যাসিড কিনতে পারে৷ এর জন্য কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন পরে না৷ এই সহজলভ্যতার ফলেই অ্যাসিডকে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করতে পারছে৷''

বাংলাদেশে অ্যাসিড সংক্রান্ত যে আইনগুলো আছে তার প্রয়োগও যথার্থ হচ্ছে না বলে মনে করেন মনিরা রহমান৷ তাঁর মতে, ‘‘অ্যাসিড সন্ত্রাসের বিরোদ্ধে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২ এবং অ্যাসিড নিয়ন্ত্রন আইন ২০০২'এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন এখনো নিশ্চিত হয় নি৷ অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় বিচারের ক্ষেত্রে আইনে নির্দিষ্ট সময়-সীমা দেয়া আছে৷ কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে বিচার হয় না, সাজা হয় না৷''

নির্দিষ্ট সময়ে বিচার না পাবার কথাটি জানিয়েছে স্বামীর হাতে অ্যাসিডাক্রান্ত মঞ্জিলাও৷ সে জানায়, তার উপরে অ্যাসিড ছোঁড়ার পর লিটনের বিরোদ্ধে মামলা করা হয়েছে৷ কিন্তু এই ঘটনার পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও আজো আসামিকে গ্রেফতার করা হয় নি৷

আইন প্রয়োগে এখনো অনেক দুর্বলতা আছে৷ এখনো প্রতি বছর প্রায় শ'খানেক নারী অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে৷ তবে, এতো কিছুর মাঝেও আশার কথা হচ্ছে, অ্যাসিড সন্ত্রাসের ঘটনা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে বাংলাদেশে৷

এএসএফ'এর দেয়া পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০০২ থেকে ২০১১ – এই দশ বছরে, অ্যাসিড সন্ত্রাসের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে৷ ২০০২ সালে অ্যাসিড সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে ৪৯৪টি৷ এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় মোট ৪৯৬ জন৷ আর ২০১১ সালে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৪টি এবং এসব ঘটনায় আহত হয়েছে মোট ১১১ জন৷

মনিরা রহমান বলেন, ‘‘অ্যাসিড আক্রমণের পরিমাণ যদিও অনেকটাই কমেছে কিন্তু এটিকে শূন্যের কোঠায় নামাতে হলে মানুষের মধ্যে আরো ব্যাপক হারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে৷ পাশাপাশি আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও হতে হবে আরো কঠোর ও দ্রুত৷''

২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অ্যাসিড সন্ত্রাস নিমূর্ল করার লক্ষ্যে একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন৷ তবে, সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক মনিরা রহমান বলছেন, একক কোনো সংগঠনের পক্ষে এ কাজ সম্ভব নয়৷ এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে৷

প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য