1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তরুণদের নেশা

এর্ডমান কাথরিন/আরবি৯ নভেম্বর ২০১২

কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে দেখা, না আবারও জেতা হল না৷ মেশিনটি ধীরে ধীরে গিলে ফেললো তাঁর টাকাগুলি৷ এই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে জান’এর কয়েক শ বার৷ কিন্তু স্লট মেশিনটি এখনও তাঁকে আকৃষ্ট করে৷

https://p.dw.com/p/16ftc
ছবি: picture alliance/dpa

বছর খানেক হতে চলল, ২৩ বছর বয়সি তুর্কি তরুণ জান তখন ছিলেন বেকার, ভুগছিলেন একঘেয়েমিতে৷ হঠাৎ স্লট মেশিনের সংস্পর্শে এসে পড়েন তিনি৷ তারপর থেকে বারবার মেশিনটি আকৃষ্ট করে চলেছে তাঁকে৷ জান'এর ভাষায়, ‘‘কোনো কোনো দিন শুধুই খেলে গেছি আমি৷ একটানা সাত ঘণ্টা ধরে৷ তবে মাঝে মাঝে সপ্তাহে তিনবার কিংবা সপ্তাহান্তেও গিয়েছি সেখানে৷''

অভিবাসীরাই এই খেলায় আসক্ত বেশি

হামবুর্গ শহরের অংশ বিলশ্টেড'এ বসবাস করেন জান, যেখানে প্রতি পাঁচজনে একজন সামাজিক ভাতার ওপর নির্ভরশীল এবং অভিবাসীদের সংখ্যাও অনেক৷

স্লট মেশিনে খেলার জন্য অন্যান্য সঙ্গীর সাথে নিজের এলাকা ছেড়ে অনেকটা দূরে চলে যেতেন এই তরুণ, যেখানে তাঁকে কেউ চেনে না৷ কেননা পরিবার, মা-বাবা, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে তাঁর এই নেশার কথাটা গোপন রাখতে চাইতেন জান৷ তাই আসল নামটাও প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ হয় তাঁর৷ কিন্তু নেশাটা কাটাতে পারছিলেন না কিছুতেই৷

প্রতিরোধে অনীহা

নেশা প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরামর্শদাতা আবুজের সেভিক'এর কাছে বিষয়টি নতুন কিছু নয়৷ অভিবাসীরা তাঁদের কাছে আসতে খুব আগ্রহী নন৷ আবুজের সেভিক জানান, ‘‘প্রথমত তাঁদের শঙ্কা হয়, পরিবার যদি জেনে ফেলে৷ দ্বিতীয়ত তাঁরা নিজেদের অসুস্থ বলে স্বীকার করতে চান না৷ কেউ কেউ বলেন, আমার পক্ষে থেরাপি করা সম্ভব নয়, বাবা যদি জানতে পারেন যে, আমি খেলায় আসক্ত, তাহলে মহা কেলেঙ্কারি হবে৷''

Spiel-Automaten im Casino Atlantis
জার্মানিতে অভিবাসীরাই এই খেলায় আসক্ত বেশিছবি: picture-alliance/dpa

স্লট মেশিনে খেলার নেশা অনেক অভিবাসী পরিবারে এখনও এক নিষিদ্ধ বিষয়৷ কেউ যদিও বা থেরাপিকেন্দ্রে আসেনও, পোষণ করেন একটা ভুল ধারণা৷ বলেন হামবুর্গের নেশাপ্রতিরোধ কেন্দ্রের নিডা ইয়াপার৷ তাঁর কথায়, অভিবাসীরা মনে করেন যে একটি ট্যাবলেট নিলেই বুঝি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে৷ এখানে আসার আগে নিজেদের দেশ বা পরিবারের কাছ থেকে তাঁরা এটাই শিখেছেন৷ নিডা ইয়াপার জানান, ‘‘এছাড়া প্রাচ্যের দেশগুলিতে নেশাকে অসুস্থতা নয় বরং চারিত্রিক দুর্বলতা মনে করা হয়৷ বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে এটা একটা মান সম্মানের বিষয়ও৷ পুরুষত্বের সঙ্গে দুর্বলতা ঠিক খাপ খায় না, এই ধারণাই পোষণ করা হয়৷''

থেরাপির প্রয়োজন

জান'এরও এই অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ তাঁর নেশাকে অসুস্থতা হিসাবে না দেখে কিংবা সহযোগিতা না করে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব দূরে সরে যেতে থাকে৷ একবার মাসের প্রথমে সব টাকা স্লটমেশিনে দিয়ে আসতে হয়েছিল জান'কে৷ পরিবারের কাছ থেকে টাকা ধার করতেও হয়েছিল তাঁকে৷ কানাঘুষায় ব্যাপারটা অনেকেই জেনে ফেলে৷ জান সে কথা স্মরণ করে বলেন, ‘‘বান্ধবী সম্পর্কের ইতি টানতে চেয়েছে৷ ঘনিষ্ঠ বন্ধু দূরে সরে যায়৷ মা বাড়ি থেকে বের করে দিতে চান৷ বাবা ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করেন৷''

কিন্তু নেশাগ্রস্তদের কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকাটা সঠিক পথ নয়৷ বিপুল সংখ্যক অভিবাসী অধ্যুষিত শহরে স্লট মেশিনে খেলা এক বিরাট সমস্যায় পরিণত হয়েছে৷ বলেন হামবুর্গের তুর্কি সম্প্রদায়ের মুখপাত্র মুরাত গ্যোজাই৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা এই সমস্যাটা বছর খানেক ধরে লক্ষ্য করছি৷ আমরা তুর্কি সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আমাদের শহরে, বিশেষ করে অভিবাসীদের জন্য নেশা প্রতিরোধ কেন্দ্র খোলার চিন্তাভাবনা করছি৷ কেননা এখানে তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা নেই৷''

বিশেষ উদ্যোগ

তরুণ অভিবাসীদের প্রতি ১০ জনের একজন ক্রিড়াবাজি খেলে৷ প্রতি ২০ জনে একজন স্লট মেশিনে তাঁর টাকা ফেলে৷ সংখ্যাটা জার্মান তরুণদের তুলনায় দ্বিগুণ৷ মুরাত গ্যোজাই এই সব প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও তাঁর উদ্যোগে সম্পৃক্ত করতে চান৷ তিনি জানান, ‘‘এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে খেলার কক্ষে ঢুকলেই চোখে পড়ে, এই নেশা প্রতিরোধে কোথায় জরুরি সেবা সংস্থা বা পরামর্শ কেন্দ্র রয়েছে৷ এক্ষেত্রে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷''

তবে জান'এর বন্ধু জেম মনে করেন, ‘‘শুধু এই ধরনের উদ্যোগই যথেষ্ট নয়৷ ছেলে-মেয়েদের জন্য যদি প্রথম থেকেই কোনো বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কিংবা তাদের উচ্চশিক্ষার পথ ধরিয়ে দেয়া যায়, তাহলে হয়ত বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলার নেশায় আকৃষ্টই হবে না তারা৷''

জান মাস চারেক ধরে এই খেলায় ক্ষান্ত দিয়েছেন৷ তবে স্লট মেশিন মাঝে মাঝে এখনও তাঁকে টানে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘সেখানে যাওয়ার জন্য বিরাট আকর্ষণ অনুভব করি মাঝে মাঝে, বিশেষ করে গাড়িতে করে জায়গাটির পাশ দিয়ে গেলে৷ ২/১ বার নেশাটি জিতেও গিয়েছিল, কিন্তু তারপর আমি নিজেকে বলেছি, না আর কখনও নয়৷ আমি কথা রেখেছি৷ এরপর আর ওমুখো হইনি৷ এই অনুভূতিটা খুব ভালো৷''

জান যে নেশাটা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে, তা বলা যায় না৷ তবে তাঁকে যা সাহায্য করছে, তা হলো নতুন চাকরিটা৷ এখন আবার কাজ পেয়েছেন এই তরুণ৷ সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে আসার পর ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ে শরীর৷ তখন শুধুই ঘুমাতে ইচ্ছে করে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য