1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অপরিষ্কার দাঁত হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়

১৪ জুন ২০১০

আমাদের অনেকের অভ্যাস ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করা৷ কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, ঘুমানোর আগে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে হবে৷ আর এবার বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা কিংবা না করার সাথে হৃদরোগের সম্পর্ক৷

https://p.dw.com/p/Nq7w
দাঁতের ডাক্তারের কাছে যে কে না ভয় পায়?ছবি: dpa

প্রতিদিন কমপক্ষে দুইবার দাঁত ব্রাশ না করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ মুখের স্বাস্থ্যের সাথে মারাত্মক রোগের সম্পর্কের যে ধারণা ১৯ শতকেই প্রচলিত ছিল সেটিই এবার প্রমাণিত হলো বৈজ্ঞানিক গবেষণায়৷ দাঁতের সাথে হৃদরোগের সম্পর্ক নিয়ে প্রথমবারের মতো করা এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ‘ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল'-এ৷ ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা স্কটল্যান্ডের প্রায় ১২ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর এই গবেষণা চালান৷ এতে তাঁরা লক্ষ্য করেন যে, দাঁত এবং মুখের পরিচর্যার ক্ষেত্রে যারা কম মনোযোগী তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় ৭০ গুণ৷

অন্যদিকে, যারা প্রতিদিন কমপক্ষে দুই বার দাঁত ব্রাশ করেন তাঁদের জন্য এই ঝুঁকি নেই৷ অবশ্য, এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৬২ শতাংশই জানিয়েছেন যে, তাঁরা প্রতি ছয় মাসে একবার দাঁতের চিকিৎসকের কাছে গেছেন৷ এছাড়া তাঁদের ৭১ শতাংশই প্রতিদিন দুই বার দাঁত ব্রাশ করেন বলে জানান৷ মুখের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যাঁরা কম মনোযোগী তাঁদের রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, তাঁদের রক্তে সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন এবং ফিব্রিনোজেন নামক দু'টি উপাদানও পাওয়া গেছে৷ আর এগুলি দেহের অভ্যন্তরে ক্ষত সৃষ্টির জন্যও দায়ী৷

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের রিচার্ড ওয়াটের নেতৃত্ব পরিচালিত হয় ঐ গবেষণা৷ ওয়াট বলেন, বিশেষ করে দাঁতের মাড়িতে যাঁদের অসুখ রয়েছে তাঁদের হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা আরো বেশি৷ অবশ্য, ওয়াট বলেন, দাঁত ব্রাশ না করার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ বাড়লেও ধূমপানের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে ১৩৫ শতাংশ৷ তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, ‘‘নতুন করে দাঁত ব্রাশ করার সাথে হৃদরোগের সম্পর্ক নিশ্চিত হলেও মুখের সাথে যে গোটা দেহেরই রোগের সম্পর্ক আছে তা ১৯ শতক থেকেই মানুষ বিশ্বাস করে আসছে৷'' ‘‘আর এমন বিশ্বাস থেকেই তখনকার মানুষ একটু কোন সমস্যা হলেই দাঁত তুলে ফেলতো৷ কিন্তু আমরা বরং এখন দাঁত তুলে ফেলার পরিবর্তে নিয়মিত দুই বার করে দাঁত ব্রাশ করার কথা বলছি৷ এটি বেশ ভালো পথ্য,'' বলেন ওয়াট৷

উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ২০০৫ সালে ইউরোপ, অ্যামেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে যতো মানুষ প্রাণ হারিয়েছে তাদের এক তৃতীয়াংশই মারা গেছে হৃদরোগে৷

ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. একেএম ফজলুল করিম বলেন, দাঁত ব্রাশ করার বিষয়টি মানুষের খাদ্যাভ্যাসের সাথে জড়িত৷ কেউ যদি দিনে মাত্র একবার খাবার খায়, তবে খাবার খাওয়ার পর একবার ব্রাশ করলেই চলে৷ কিন্তু আমাদের দেশে যেহেতু মানুষের তিনবার খাওয়ার অভ্যাস৷ তাই আমাদের উচিত প্রতিবার খাওয়ার পর অর্থাৎ প্রতিদিন তিনবারই ব্রাশ করা৷ অবশ্য রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করাটা সবচেয়ে জরুরি৷ কেননা দাঁতের ফাঁকে যেসব খাবার জমে থাকে সেগুলো ল্যাক্টোব্যাসিলাই নামক ব্যাক্টেরিয়ার সাথে পচে ল্যাক্টিক অ্যাসিড তৈরি করে৷ এই ল্যাক্টিক অ্যাসিডের কারণে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হতে পারে৷ এছাড়া দাঁতের সাথে দেহের অনেক অঙ্গের সম্পর্ক রয়েছে৷ তাই সুস্থ থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই নিয়মিত খাবার পরপরই ব্রাশ করা উচিত, বলেন ডা. ফজলুল করিম৷

প্রতিবেদন : হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা : দেবারতি গুহ