1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযুদ্ধের সময় আটক হয়েছিলেন রওশন জাহান

২৫ মার্চ ২০১২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পরদিনই পাক সেনারা ধরে নিয়ে যায় সাহসী নারী রওশন জাহান সাথীকে৷ তবে পাক সেনাদের সামনে মাথা নিচু না করে কৌশলে মুক্তি পান তিনি৷

https://p.dw.com/p/147Nq
Titel 1: Rowshan Jahan Shathi MP, Freiheitskämpferin in 1971 von Bangladesch Bildunterschrift:  Rowshan Jahan Shathi MP, Freiheitskämpferin in 1971 von Bangladesch Text: Rowshan Jahan Shathi MP, Freiheitskämpferin in 1971 von Bangladesch Datum: 12.08.2011 Eigentumsrecht: Rowshan Jahan Shathi, Dhaka,  Bangladesch Stichwort: Rowshan, Jahan, Shathi, 1971, Freiheitskämpf, Bangladesch, Dhaka, Bangladesh, Women, Freedom, Fighter
মুক্তিযোদ্ধা রওশন জাহান সাথীছবি: Rowshan Jahan Shathi

সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন মুক্তির সংগ্রামে৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রওশন জাহান সাথী এমপি'র বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে বিশেষ পরিবেশনার প্রথম পর্ব আজ৷

যশোরে ১৯৫১ সালের ৮ই মে জন্ম রওশন জাহান সাথীর৷ পিতা অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন এবং মা বেগম নুরুন্নাহার৷ পিতা ছিলেন সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী সাংসদ এবং মুক্তিযোদ্ধা৷ ফলে পারিবারিক সূত্রেই রাজনৈতিক চেতনায় বেড়ে উঠেছেন রওশন৷ স্কুল জীবন থেকেই তাই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি৷ কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন৷ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই তিনি ডিগ্রি পরীক্ষা শেষ করেন৷

আন্দোলন-সংগ্রামের পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগে ছাত্রলীগ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কর্মী-সদস্যদের নিয়ে একটি গোপন বাহিনী গঠন করে৷ সেই বিশেষ বাহিনীর সদস্য হিসেবে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে সেসব কথা জানালেন রওশন জাহান সাথী৷ তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের আগে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের যশোর মহকুমা শাখার সভাপতি ছিলাম৷ দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য ছাত্রলীগের মধ্যে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ' নামে একটি গোপন সংগঠন গড়ে ওঠে৷ নেতারা এসময় বিভিন্ন জেলায় এই গোপন সংগঠনের কর্মী সংগ্রহ করতেন৷ তারাই আমাকে এতে অন্তর্ভুক্ত করেন৷ আমি এই সংগঠনের যশোর জেলা ফোরামের সদস্য ছিলাম৷ পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করতে হবে এজন্য সবধরণের প্রস্তুতি নিতে থাকি আমরা৷ এই সংগঠনের শর্তগুলো ছিল, যুদ্ধ করেই দেশ স্বাধীন করতে হবে৷ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন না করা পর্যন্ত অন্য কোন ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়ানো যাবে না৷ এসব প্রতিজ্ঞা করে আমরা বিশ্বের নানা দেশের আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করে যথার্থ জ্ঞান অর্জন করি এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিই৷ আমরা যুদ্ধের জন্য নিজেদের তৈরি করতে থাকি৷ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানসহ সেসময়ের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে যশোর জেলায় যারা নেতত্ব দিয়েছেন আমি তাদের সাথেই ছিলাম৷ এসময় প্রত্যেকটি শহরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পায়ে হেটে ঘুরে ঘুরে সদস্য ও কর্মী সংগ্রহ করেছি৷ তৎকালীন বৃহত্তর যশোর জেলার অন্তর্ভুক্ত মাগুরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল ও যশোরের সকল প্রান্ত আমরা চষে বেড়িয়েছি৷ এসময় ঐ অঞ্চলের তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত ছিলাম৷''

Bildunterschrift:  Rowshan Jahan Shathi MP, Freiheitskämpferin in 1971 von Bangladesch Text: Rowshan Jahan Shathi MP, Freiheitskämpferin in 1971 von Bangladesch Datum: 24.07.2011 Eigentumsrecht: Rowshan Jahan Shathi, Dhaka,  Bangladesch Stichwort: Rowshan, Jahan, Shathi, 1971, Freiheitskämpf, Bangladesch, Dhaka, Bangladesh, Women, Freedom, Fighter,
মুক্তিযোদ্ধা রওশন জাহান সাথীছবি: Rowshan Jahan Shathi

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে অন্যান্য অঞ্চলের মতো যশোর জেলাতেও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী৷ যশোরের বিভিন্ন নেতা, এমপিএ, এমএনএ এবং ছাত্রনেতার বাড়িতে হামলা চালায় তারা৷ যুদ্ধ শুরুর ঘটনা জানাতে গিয়ে নারী নেত্রী রওশন জাহান বলেন, ‘‘২৫শে মার্চ রাতে আমাদের বাড়িতেও হামলা হয়৷ তবে আমরা এর ঘণ্টাখানেক আগে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলাম বলে রক্ষা পাই৷ আমার বাবা স্থানীয় সবাইকে নিয়ে যুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন৷ আমরা বাইরে দু'দিন কয়েকটি বাড়ি ঘুরে মামার বাড়ি গিয়েছি৷ কিন্তু সেদিন যশোর সেনানিবাস থেকে কর্নেল তোফায়েলের নেতৃত্বে পাঁচ/ছয় গাড়ি সৈন্য এসে বাড়িটা ঘেরাও করে৷ আমাকে গ্রেপ্তার করে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে যায়৷ সঙ্গে আমার মা এবং খালাও ছিলেন৷ সেখানে পাক সেনারা আমাকে বিভিন্ন অস্ত্রের মুখে হুমকি দিচ্ছিল এবং জিজ্ঞাসাবাদ করছিল৷ এক পর্যায়ে তারা খুব অশ্লীল ভঙ্গিমায় অশ্লীল ইঙ্গিত করতে থাকে৷ আমার কাছ থেকে নানা তথ্য বের করার চেষ্টা করে৷ মিছিলের ছবি দেখিয়ে বলে তোমরা মিছিল করেছো, তোমরা পাকিস্তান ভাঙতে চাও৷ তোমরা চক্রান্ত করছ, তোমাদের শাস্তি হবে৷ এরপরে ওরা আমাকে দু'টি বিশেষ ঘরের সামনে নিয়ে যায়৷ একটি ঘরে দেখলাম বেশ কয়েকজনকে ভীষণ মেরেছে৷ রক্তাক্ত অবস্থা৷ ওরা খুব কাতরাচ্ছে৷ অপর ঘরটি হলো বিশাল ব্যারাক৷ সেখানে অনেকগুলো সৈন্য রয়েছে৷ তাদের সাথে আরো কিছু মানুষ এবং মেয়েরাও রয়েছে৷ দেখালো যে, আমি যদি তাদের কথা মতো তথ্য না দিই এবং সহযোগিতা না করি, তাহলে হয় আমাকে মেরে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে মেরে ফেলবে অথবা ঐ মেয়েদের মতো ব্যারাকে সৈন্যদের সাথে থাকতে হবে৷ এরপর কর্নেল তোফায়েল আমাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করল৷ কিন্তু আমি শুধু এটুকু বললাম যে, হ্যাঁ, আমি মিছিল করেছি৷ কিন্তু এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলতে পারবো না৷ এরপর আমি তাকে বোঝাতে চেষ্টা করি যে, আমাকে যেখান থেকে ধরে এনেছেন, সেখানে রেখে আসেন এবং নজরবন্দি করে রাখেন৷ আপনার নিয়ন্ত্রণেই রাখেন কিন্তু সেনানিবাসে না রেখে ঐ বাসায় রাখেন৷ কর্নেল তোফায়েল আমার এই কথাটা রেখেছিল৷ রাত এগারোটার দিকে সে আমাদেরকে ঐ বাসায় পৌঁছে দেয় এবং তারপর থেকে পালাক্রমে সেনা পাহারার ব্যবস্থা করে৷ পরে জানতে পারি যে, যশোর জেলার শান্তি কমিটির সেক্রেটারি আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়ে আমাদেরকে ধরিয়ে দিয়েছিল৷''

এছাড়া তখন যশোর শহরে মাইকিং করা হয়েছিল যে, রওশন জাহানের বাবাকে জীবিত বা মৃত ধরিয়ে দিতে পারলে বড় অঙ্কের টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে৷ কিন্তু তাঁর বাবা আগেই যুদ্ধে চলে যান বলে তারা আর ধরতে পারেনি৷ তবে তাঁদের বাড়িটাকে খালি পেয়ে সেটাকে রাজাকারেরা ঘাঁটি বানিয়েছিল৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য