1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশকেনিয়া

কেনিয়ায় কার্বন ধারণ করার বহুমুখী প্রকল্প

১৭ মে ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার অন্যতম উপায় হিসেবে ভূগর্ভে কার্বন-ডাই-অক্সাইড জমা রাখার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ সমালোচকদের মতে, কার্বন নির্গমনের মূল সমস্যা দূর করা বেশি জরুরি৷ কেনিয়ায় স্থানীয় স্তরে এক অভিনব উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4g0cj
সমুদ্রের নীচে সিগ্রাস
গত তিন দশকে কেনিয়ায় প্রায় ২০ শতাংশ সিগ্রাস ক্ষেত্র হারিয়ে গেছেছবি: DW

সমুদ্রের নীচের ঘাসের অনেক উপযোগিতা রয়েছে৷ সিগ্রাস শুধু সমুদ্রের তলদেশ স্থিতিশীল রাখে না, সেইসঙ্গে সামুদ্রিক প্রাণীদের ঠাঁইও দেয়৷ সিগ্রাস সেইসঙ্গে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ধারণ করে এবং পানির মধ্যে অক্সিজেন ছাড়ে৷

কেনিয়ার ওয়াসিনি উপকূলের মানুষ সিগ্রাসের সেই সব বৈশিষ্ট্য কাজে লাগাতে বদ্ধপরিকর৷ মোহাম্মদ কাসিম ও তাঁর টিম ভাটার সুযোগ নিয়ে ভোরেই সিগ্রাস রোপণ করতে বেরিয়ে পড়েছেন৷ তাঁরা কেনিয়া মেরিন অ্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করেছেন৷ ওয়াসিনি বিচ ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের মোহাম্মদ কাসিম বলেন,

সচিব, ‘‘কীভাবে এখানে সিগ্রাস পুনরুদ্ধার করা যায়, তারা আমাদের সেটা শিখিয়েছে৷ এখন আমি স্বীকৃত কোরাল ও সিগ্রাস রেস্টোরাটর৷’’

এই টিম সিসালের বস্তা ব্যবহার করে ছোট ক্ষেত্র সৃষ্টি করছে৷ সেগুলি বন্যার ঢেউ থেকে চারাগাছ রক্ষা করতে সাহায্য করে৷ ফলে চারা থেকে গাছ গজিয়ে উঠতে পারে৷ কেনিয়া গত তিন দশকে প্রায় ২০ শতাংশ সিগ্রাস ক্ষেত্র হারিয়েছে৷ মাত্র ৩৭১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা অবশিষ্ট রয়েছে৷ দেশের কোরাল প্রাচীরগুলিরও ক্ষয় হয়েছে৷

প্রায় দশ বছর আগে ওয়াসিনির বাসিন্দারা এই প্রবণতা রুখতে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন৷ সেই উদ্যোগের ফল তাঁদের মুগ্ধ করছে৷ ওয়াসিনি বিচ ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের সদস্য সানুলা আলি বলেন, ‘‘যখন থেকে আমরা সিগ্রাস রোপণ করছি, তখন থেকে মাছের পরিমাণ বেড়েছে৷ কোরালও বেড়ে উঠছে৷ ফলে নারী মাছচাষি হিসেবে আমাদের ব্যবসার সুবিধা হচ্ছে৷ আগের থেকে অনেক ভালো অবস্থায় আছি৷’’

কার্বন ডাই অক্সাইড জমা করে আয়

কার্বন নির্গমন বাণিজ্যের সুবিধা গ্রহণ মোহাম্মেদ কাসিমের টিমের পরবর্তী লক্ষ্য৷ কোনো সম্প্রদায় বনভূমি বা সিগ্রাস ক্ষেত্র সৃষ্টি করে কার্বন ধারণ সম্ভব করে সরাসরি উপকার পেতে পারে৷ প্রচুর পরিমাণ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী রাষ্ট্র বা কোম্পানির কাছ থেকে এভাবে তারা অর্থ পেতে পারে৷ সেটা ওয়াসিনির মানুষেরও বাড়তি আয়ের উৎস হতে পারে৷

উপকূলের গাজি এলাকা কিছুকাল ধরে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের দৌলতে এমন উদ্যোগের সুফল ভোগ করছে৷ সেখানে সেই ঘাসের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয় ও নিয়মিত ঘাস লাগানো হয়৷ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির সহায়তায় বাসিন্দারা মিকোকো পামোজা প্রকল্প গড়ে তুলেছেন৷ তাঁরা এলাকার এক দশমিক এক সাত বর্গ কিলোমিটার অংশকে কার্বন সিংক প্রোজেক্ট হিসেবে নথিভুক্ত করেছেন৷ প্রকল্পের সমন্বয়ক মোহামেদ কাসিম জুমা বলেন, ‘‘মিকোকো-পামোজা এক সামাজিক নেতৃত্বের উদ্যোগ, যা উচ্চ মানের কার্বন ক্রেডিট বিক্রি করে ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ ও সুরক্ষার চেষ্টা করছে৷’’

নির্গমন বাণিজ্য বাজারের অন্যান্য জায়গার তুলনায় তাদের ম্যানগ্রোভ অরণ্য বেশ ছোট হলেও স্থানীয় সমাজ এর সুফল পাচ্ছে৷ প্রতি বছর ২২,০০০ ইউরো অংকের বেশি আয় হচ্ছে৷ সেই অর্থ গাজিতেই বিনিয়োগ করা হচ্ছে৷ যেমন নির্ভরযোগ্য পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে৷ গাজির বাসিন্দা মোয়ানাহাওয়া বাকারি বলেন, ‘‘আগে কুয়া থেকে হাতে করে পানি তুলতে হতো৷ গ্রামেই পানি বিতরণ শুরু করার পর সেই সমস্যা দূর হয়েছে৷’’

এই সব মানুষ কার্বন ধারণ করার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন৷ রাজধানী নাইরোবির কাছে এক কোম্পানি বড় আকারে সরাসরি সেই গ্যাস ধরে মাটির নীচে রাখার লক্ষ্যে কাজ করছে৷

যন্ত্র বাতাস শুষে নিয়ে এক কেমিকাল ফিল্টারের মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছেঁকে নেয়৷ তার জন্য অবশ্য অনেক জ্বালানির প্রয়োজন হয়৷ কোম্পানি গ্রেট রিফট উপত্যকার জিওথার্মাল কমপ্লেক্স থেকে সেই জ্বালানি পাওয়ার আশা করছে৷ সেখানেই সম্ভবত যন্ত্রপাতি লাগানো হবে এবং পাইপের মাধ্যমে সিওটু সরাসরি ব্যাসাল্ট শিলার মধ্যে চালান করা হবে৷ অক্টাভিয়া কার্বনের কর্ণধার মার্টিন ফ্রাইমুলার বলেন, ‘‘আমরা কেনিয়ার অভিনব ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিওটু-কে ক্যালশিয়াম কার্বোনেট বা চুনাপাথরের মতো কার্বোনেট উপাদানে রূপান্তর ঘটিয়ে কার্বনকে চিরকালের মতো বন্দি করতে চাইছি৷’’

এক মেট্রিক টন সিওটু ধারণ করতে ৯০০ ইউরো পর্যন্ত ব্যয় হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ সেই প্রক্রিয়াও নতুন এবং পরিবেশের উপর তার সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কেও কিছু জানা নেই৷ পাওয়ারশিফট আফ্রিকার মতো বিশ্লেষক সংস্থার মতে, এই সব প্রকল্প কিন্তু মূল সমস্যা সামাল দিতে পারছে না৷ সংস্খার উপদেষ্টা ফাদহেল কাবুব বলেন, ‘‘দাগী দূষণকারীরা তাদের নির্গমন চালিয়ে যাচ্ছে৷ আর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কার্বন বাজার গড়ে তোলা কোম্পানিগুলি দিব্যি কমিশন ও ফি পকেটে পুরছে৷ ফলে শেষ পর্যন্ত নির্গমন কমছে না৷ সেই উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাও মোকাবিলা করছে না৷’’

এমন সব উদ্বেগ মোহামেদ কাসিম ও তাঁর টিমের উপকূল সুরক্ষার উদ্যোগ দমিয়ে রাখতে পারবে না৷ তাদের পদক্ষেপ কমপক্ষে স্থানীয় স্তরে লক্ষ্য পূরণ করতে পারে, এমনটাই তারা মনে করছেন৷

জর্জ কিনিয়ানজুই, ইয়ুলিয়া মিল্কে/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান